DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বিশ্ব খ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মো: আলীর ইন্তেকালঃছিলেন বাংলাদেশেরও নাগরিক

mdalizia copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। এ দেশকে তিনি 'বেহেশত' মনে করতেন। জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্র তাড়িয়ে দিলে এদেশেই আশ্রয় নেবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ফিনিক্স এরিনা হাসপাতালে মারা গেছেন মোহাম্মদ আলী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়োছল ৭৪ বছর।

কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলী ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রনে বাংলাদেশ সফরে আসেন।সপ্তাহব্যাপী এই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন  স্ত্রী ভেরোনিকা আলী।


সফরকালে ঢাকায় আলীর জন্য ব্যাপক গন সংবর্ধনার আয়োজন করে বাংলাদেশের সন্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হয় তাকে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিশ্বখ্যাত এই বক্সারের হাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদপত্র ও পাসপোর্ট তুলে দেন ।

বাংলাদেশে নাগরিকত্ব পেয়ে অত্যন্ত খুশী  আলী বলেন, কখনো জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া হলে বাংলাদেশই হবে তার থাকার জায়গা।

আলীর সম্মানে তৎকালীন ঢাকা  স্টেডিয়ামে প্রদর্শনী মুষ্টিযুদ্ধের আয়োজন করা হয়। এতে  ১২ বছর বয়সী বাংলাদেশী বালক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন সর্বকালের সেরা আলী।এছাড়াও চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামেও একটি প্রদর্শনী মুষ্টিযুদ্ধের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ সফরকালে আলী সুন্দরবন, সিলেট, রাঙামাটি ও কক্সবাজার ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশের সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হন আলী। উচ্ছ্বসিত হয়ে বাংলাদেশকে 'বেহেশত' আখ্যা দেন তিনি। বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেন, 'বেহেশতে যেতে চাইলে বাংলাদেশে ঘুরে আসুন'!

লুইভিলে ১৯৪২ সালের ১৭ই জানুয়ারি খৃস্টান দম্পতি রংমিস্ত্রি ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে ও গৃহিনী ওডিসা গ্র্যাডি ক্লের ঘরে জন্ম নেন আলী। বাবা নিজের নামে সন্তানের নাম রাখেন ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে জুনিয়র।


ক্লে জুনিয়র ১৯৬০ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে রোম অলিম্পিকে লাইট-হেভিওয়েটে সোনা জিতে খ্যাতির তালিকায় উঠে আসেন।

এরপর ১৯৬৪ সালে ২২ বছর বয়সে তখনকার বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেন ক্লে জুনিয়র।

 


এরপর বাকিটা ইতিহাস। তিনিই প্রথম মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন। এখন পর্যন্ত তার এ রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি।

এদিকে প্রথমবার শিরোপা জয়ের পরপরই বোমা ফাটান ক্লে জুনিয়র। খ্রিস্টান এ বক্সার ঘোষণা দেন তিনি 'নেশন অফ মুসলিম' গোত্রের সদস্য।

এরপর ক্লে জুনিয়রের নাম রাখা হয় ক্যাসিয়াস এক্স।কিন্তু তিনি মনে করতেন তার পদবী দাসত্বের পরিচায়ক।


এ কথা জেনে কিছুদিন পর ক্যাসিয়াসের নাম বদলে দিয়ে তার নতুন নাম মোহাম্মদ আলী বলে ঘোষণা দেন 'নেশন অফ মুসলিম' প্রধান ডব্লিউ ডি মোহাম্মদ। পরে ১৯৭৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন আলী।

১৯৮১ সালে পেশাদার বক্সিং থেকে অবসর নেওয়ার আগে ৬১টি লড়াইয়ের মধ্যে ৫৬টিতে জেতেন আলী।

বড়সর পারিবারিক জীবন ছিল আলীর। তিনি মোট চারটি বিয়ে করেন। তিনি সাত মেয়ে ও দুই ছেলের জনক। তার মেয়ে লায়লা আলী বিশ্বখ্যাত নারী মুষ্টিযোদ্ধা।

আলী নিজেকে বলতেন 'গ্রেটেস্ট' অর্থাৎ সবার চেয়ে সেরা। রিংয়ে নামার আগে-পরে কথাবার্তাতেও ছিলেন পটু। তার বিখ্যাত উক্তি 'প্রজাপতির মত নেচে নেচে মৌমাছির মত হুল ফোটাব'।

মোহাম্মদ আলী ছিলেন আধুনিক সময়ের এক অনন্য শক্তিশালী মুসলমান। যার মুষ্টির আঘাতে যেমন শক্তিমান প্রতিপক্ষরা ধরাশীয় হতো, তেমনি তার বিশ্বাসও ছিল পাহাড়সম উঁচু, যেখানে উগ্রতার চেয়ে শান্তির বাণীই ছিল প্রধান।


১৯৬৬ সালে আমেরিকার হয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করেন আলী। তার সাফ কথা ছিল, কোরআন যুদ্ধ সমর্থন করে না। আল্লাহ বা নবীর নির্দেশ ছাড়া তিনি যুদ্ধে যাবেন না। কোন ভিয়েতকং এর সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। শুধু সাদা চামড়ার মানুষের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ১০ হাজার মাইল দূরের কোনো দেশে গিয়ে মানুষের ওপর অত্যাচার করা, খুন করা, বোমা ফেলা এই কাজে আমি যুক্ত হব না। পৃথিবীর বুকে এসব অবিচার বন্ধ হওয়া উচিত।

এই অবস্থানের জন্য কঠিন মূল্য দিতে হয় আলীকে। তার খেলার লাইসেন্স সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। গ্রেফতারও করা হয় তাকে। তবুও মানবতার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কাজ করেননি।ঐ সময় প্রায় সড়ে তিন বছর বক্সিং থেকে নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি।

মানবতার জন্য সোচ্চার আলী অবসরে যাওয়ার পর জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও আমৃত্যু বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!