DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

আন্তর্জাতিক বলয়ে বিএনপির গুরুত্ব এবং বাংলাদেশ

wmap copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ) মারুফ রাজুঃ ইদানিং কয়েকটি অনলাইন পত্রিকার কলাম আমাদের নজরে এসেছে।বিষয়বস্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমশই প্রভাব এবং গুরুত্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

এসব কলামের উৎসমূল সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিশওয়াল এবং কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী  শেখ জাবের আল মুবারক  ,বাংলাদেশর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ার পারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তাদের সাক্ষাৎ না হওয়া।

সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এসব সাক্ষাৎ ততোটা গুরুত্বপূর্ন না হলেও অতিতের আলোকে এঘটনাটিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের অর্জন এবং বিএনপির কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসাবে প্রচারের লক্ষ্যেই কাজ করবে সেটাই স্বাভাবিক।

আমাদের মনে রাখতে হবে বিগত প্রায় ১০ বছর সময় যাবৎ বিএনপি বাংলাদেশের ক্ষমতার বাইরে রয়েছে।উপর্যুপুরি ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর ভোটার বিহীন বিতর্কিত নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এখন আজ আর অবৈধ সংসদের বিরোধী দলেও ভূমিকায়ও নেই।

বিশ্ব কূটনৈতিক কোরের প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের সরকারের সাথে সরকার এবং এক দেশের সরকারের সাথে অন্য দেশের সংসদের বিরোধীদলগুলোর সম্পর্ক বজায় থাকে।সেই হিসাবে বিগত দিনে বিএনপি সরকার এবং সংসদে বিরোধী দলে না থাকার পরও বহির্বিশ্বে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে ,যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ এবং ইসলামী বিশ্বে  সমান গুরুত্ব পেয়ে আসছিলো।

বিশেষ করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ়চেতা এবং আপোষহীন ইমেজ বহির্বিশ্বে বিএনপিকে এক অসাধারন অবয়ব দিয়েছে বলা যায়।

এসবের পেছনে প্রধানত দুটি বিষয় কাজ করেছে , প্রথমত  বিশ্বের প্রভাবশালী এসব দেশের নিজস্ব তথ্য সংগ্রহের ব্যাবস্থা রয়েছে এবং তারা বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগনের মনের ভাব বুঝেই বিএনপিকে ভবিষ্যতের ক্ষমতার অংশীদার হিসাবে দেখে এবং সেই মতো দলটির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।

bnpft2দ্বিতীয়ত,বিএনপির শক্তিশালী কুটনৈতিক নেটওয়ার্ক যা শমশের মবিন চৌধুরী,রিয়াজ রহমান ,সাবিহউদ্দীন আহমদের মতো কৃতি এবং পেশাদার কূটনৈতিকদের সমন্বয়ে গঠিত ছিলো।অথচ ক্রমাগত ভাবে হাসিনা সরকারের ষঢ়যন্ত্রের ফলে উল্লিখিত ঐ তিনজনই আজ বিএনপির কর্মকান্ডে সম্পূর্ন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন ।

সেই হিসাবে বিএনপির কূটনৈতিক টিমের অস্তিত্বই আজ প্রশ্নের সম্মখীন। বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জনাব শফিক রেহমান এই বিষয়ে যথেষ্ট পারদর্শী এবং যোগ্য হলেও সম্প্রতি এক বিতর্কিত অভিযোগে তিনি অন্তরিন হওয়ায় তার সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিএনপি।

 

saddibhai তার পরও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক বৈদেশিক উপদেষ্টা ও বিএনপির বিশেষ দূত জনাব জাহিদ এফ সরদার সাদী  দেশ ও দলের স্বার্থে সম্পূর্ন নিজ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ,সিনেট এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সাথে বিএনপির যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।তার ঐকান্তিক আগ্রহে বিগত বছর গুলোতে বাংলাদেশের গনতন্ত্রহীনতা এবং ভয়াবহ মানবাধিকার পরিষ্থিতির উপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং সংসদ বার বার তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিশেষ করে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে কয়েকটি চাঞ্চল্যকর জঙ্গী হামলার বিষয়ে হাসিনা সরকার সরাসরি বিরোধী দল বিএনপি কে দায়ী করলেও কংগ্রেস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ নাকচ করা হয় এবং এইসব হামলার জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার উপর জোর দেয়া হয়।

জনাব সাদীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিগতদিন গুলোতে মার্কিন কংগ্রেস এবং সিনেট ফরেন রিলেসনস কমিটিতে বাংলাদেশের ভয়াবহ রাজনৈতিক অচলাবস্থার উপর বেশ কয়েকটি শুনানী অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিটি শুনানীর শেষে বাংলাদেশ পরিষ্থিতির আশু উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সত্বর ব্যবস্থা গ্রহনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

এছাড়াও বাংলাদেশ পরিষ্থিতির ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ট্যান্সপারেন্সী ইন্টার ন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ,ইন্টার ন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ ,হেরিটেজ ফাউন্ডেসন এর মতো মানবাধিকার সংগঠন গুলো ইতিমধ্যেই বারংবার বিবৃতি দিয়েছে।

এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে জাহিদ এফ সরদার সাদী বলেন,প্রতিবারের মতো  এবারও উপ সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিশা দেশাইয়ের ঢাকা সফরকালে বেগম জিয়ার সাথে তার সাক্ষাতের চেস্টা চলছিলো,কিন্তু শেষ মুহুর্তে ঢাকার দলীয় হাইকমান্ড থেকে আমাকে নিবৃত করে বলা হয়েছিলো, এব্যাপারটা তারা দেখছেন ।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সাক্ষাৎ না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন অবিলম্বে বিএনপির কূটনৈতিক টিম পূনর্গঠন করে নবউদ্যোমে কাজ শুরু করার কোন বিকল্প নেই।তিনি আরো বলেন,বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক এবং আস্থা সবচেয়ে ভালো ফল দিয়ে থাকে।তবে যাই হোকনা কেনো বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনায় তিনি অক্লান্ত ভাবে কাজ করে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন।

londonadvঅন্যদিকে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সার্বিক তত্বাবধানে তার উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর , ব্যরিষ্টার অাবু সায়েম, ব্যরিস্টার আবদুস সালাম , বিএনপির অন্যতম আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাইদুর রহমান প্রমুখের অক্লান্ত পরিশ্রমে ব্রিটেন সহ ইউরোপিয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ, ইইউ সদর দফতর এবং বহিবিশ্বের সংগে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে অব্যাহত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের ক্রমাগত মানবাধিকার লংঘন, বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড ,গনতন্ত্রহীনতা প্রভৃতির বিরুদ্ধে  ইইউর কড়া অবস্থান পরিলক্ষিত হয়েছে।

আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের বলয়ে অবস্থান নেয়া হাসিনা সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা মূলত ভারতের বৈদেশিক নীতির ছায়ায় করা হয়ে থাকে বলে দী্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির জন্য এই বলয়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্ত অবস্থান বজায় রাখা বেশ কঠিনই বটে।তবুও বিএনপির পুরানো এবং পরিক্ষীত বন্ধুভাবাপন্ন দেশ গুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিষয়টি মোকাবিলা করা  অত্যন্ত জরুরী।

তাই আমাদের আশা , অতি সত্বর বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের সরাসরি তত্বাবধানে উপযুক্ত,  যোগ্য এবং তরিৎকর্মা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বিএনপির চৌকশ কুটনৈতিক টিম গঠন করা হোক এবং বাংলাদেশের জনগনের প্রকৃত স্বার্থ সংশ্লিস্ট বিষয়ে বহিবিশ্বকে অবহিত এবং সঠিক ব্যবস্থা গ্রহনের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি।

আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগনের সবচেয়ে পছন্দের দল হিসাবে বিএনপির অন্যতম দায়িত্ব এবং কর্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশের জনগনের কন্ঠস্বর হিসাবে বিশ্ব পরিমন্ডলে বিরাজ করা এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গূলোতে ঐকান্তিক ভাবে কাজ করে যাওয়া।

 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!