ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ‘উত্তর বঙ্গে অনেক জায়গাই বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। মানুষ অনেকদিন পর ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু সব জায়গাতে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। তারা (আওয়ামী লীগ) সিল মেরে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। জনগণ সঠিকভাবে ভোট দিতে পারলে সবগুলোতে বিএনপি বিজয়ী হতো’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের ৩৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক ছাত্র সমাবেশে প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এ ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে।
খালেদা জিয়া বলেন, কোনো সরকারই স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ সরকারও ক্ষমতায় চিরদিন থাকতে পারবে না। কিন্তু, আইনশৃঙ্খলবাহিনীর লোকদেরকে থাকতে হবে। খুব শিগগিরই দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকারের বিদায় হবে। তাই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কারণ, সরকারের পরিবর্তন হলেও আপনাদের থাকতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশে খুন-গুম হলে শেখ হাসিনা সেদিন বেশি ভাত খান এটা আমাদের কথা নয়। তারই এক সহকারী একটি বইয়ে তা লিখেছেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামীলীগ শুধু স্বৈরাচার নয়, ডাইনী, বাঘিনীও। খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘আমরা বলে আসছি, শেখ হাসিনা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সদ্য অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে বিএনপির প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে তা আবারো প্রমাণিত হয়েছে। এদের অধীনে ভবিষ্যতেও কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’
খালেদা জিয়া বলেন, ছাত্রদলের কাউকে আমরা ফেলে দিতে চাই না। শুধু বয়স হয়ে গেছে, এজন্য ছাত্রদলে আর জায়গা পাবে না তা নয়, মূলদল আছে, আছে আরও সংগঠন, সেখানে তাদের জায়গা হবে। এ সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মানুষের সঙ্গে মেশার উপদেশ দিয়ে তাদের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করার পরামর্শ দেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘নিজেকে আস্তে আস্তে তৈরি করতে হবে। আশা করি তোমরা তোমাদের জায়গাটি তৈরি করতে পারবে। কোনো সিনিয়র নেতা এলাকায় থাকলে তার সঙ্গে কোনো প্রতিযোগিতা নয়, তার সঙ্গে বিভেদ নয়, তাকে সহযোগিতা করতে হবে।
সরকারের উদ্দেশ্য খালেদা জিয়া বলেছেন, পৌর নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে কতটি আসন পেলেন তা নিয়ে আনন্দ পাওয়া কিছু নেই।
খালেদা জিয়া বলেন, সদ্য অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠ হয়নি। এ নির্বাচন প্রত্যাক্ষান করছি। আমরাও মানি না। জনগণও নির্বাচন মানে না। হাসিনা রকিব মার্কা নির্বাচন যে অচল তা আরেকবার প্রমাণ করলো। প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদেরকে দলীয় কর্মী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিজয় চিনিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র নেই, স্বৈরতন্ত্র নেই, রাজতন্ত্র চলছে। তাদের সালামি দিয়ে চলতে হয়।
প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও তাকে ইঙ্গিত করে ডাইনি, ভাগিনী রক্তপিপাসু বলেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামীলীগ শুধু স্বৈরাচার নয়, তারা ডাইনি, বাগিনি। রক্তের প্রতি তাদের নেশা হয়ে গেছে। এদের থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য আমাদের অনেক সন্তানকে জীবন দিতে হয়েছে’।
দেশে রাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে মন্তব্য করে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নাই স্বৈরাচারীতন্ত্রও নাই, দেশে রাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে। এক ব্যক্তির কথাই সব। তাকে সালাম দিয়ে সব করতে হয়।’
ছাত্রলীগ সব দখল করে নিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে দেয় অস্র। সব জায়গায় চাদাবাজি করে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে আজ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ নেই।’
বিদেশীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে ভয় পায় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘দেশে আইন-শৃক্সখলা পরিস্থিতি খারাপ। বিদেশী হত্যা হচ্ছে। বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকায় বিদেশীরা বিনিয়োগ করছে না।’
পৌর নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশের মানুষ দেখেছে পৌর নির্বাচন কেমন হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও প্রমানিত হল রকিব এবং হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না’।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সরকারী দল প্রিজাডিং অফিসারদের দলীয় কর্মীদের মত ব্যবহার করেছে। প্রিজাডিং অফিসাররা অনেক অসহায়, তাদের কোনো দোষ নেই।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণতন্ত্রের সার্থে আমরা এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য ছিল, বিএনপি আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এ কথা সবার কাছে বলবে’।
দেশের অর্থনিতির অবস্থা অনেক খারাপ দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে আজ টাকা নেই, লুট হয়েছে। দেশে চাকরী নেই, চাকরীর আশায় মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে।’
প্রশাসনের উদেশ্যে তিনি বলেন, ‘খুব শিগ্রই সরকারের পরিবর্তন হবে। আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন। আওয়ামীলীগ সরকার বলে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আপনাদের চাকরি যাবে। কিন্তু আমি বলবো আপনাদের চাকরি যাবে না। আপনারা আপনাদের যোগ্যতা বলেই চাকরি করবেন।’
ছাত্রদলের উদেশ্যে তিনি বলেন, ‘বিগত দিনের আন্দোলনে তোমাদের প্রত্যেকেরই অনেক অবদান রয়েছে। তবে তোমাদেরকে আরও শৃক্সখলিত হতে হবে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তা না হলে লক্ষ্য অর্জন হবেনা’।
ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাসসুজ্জামান দুদু, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূইয়া, সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশাররফ হোসেন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। এছাড়াও দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যাস্টিার মওদুদ আহমেদ, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. জেড এম জাহিদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, যুগ্ম মহাসচিব ডা জেড এম জাহিদ হোসেন, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবেদিন ফারুক, বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লা মিয়া প্রমুখ।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে খালেদা জিয়া মিলনায়তনে প্রবেশ করলে মুহুর্মুহু করতালি ও স্লোগানের মধ্য দিয়ে তাকে স্বাগত জানান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় খালেদা জিয়াও হাত নেড়ে তাদের অভিনন্দনের জবাব দেন।
এরপর ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ফুল দিয়ে সাংগঠনিক নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।