DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ভারতকে চাপে রাখতেই চীন-পাকিস্তানমুখী হচ্ছে বাংলাদেশ : দ্য হিন্দু

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে বেশ কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে এবং এই সুযোগে ঢাকার সঙ্গে চীন-পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। গত শনিবার এ বিষয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

বাংলাদেশি পত্রিকা দৈনিক ভোরের কাগজের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু জানিয়েছে, ২০১৯ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে ভারতীয় প্রকল্পগুলোর গতি কমে গেছে এবং এই সময়ে চীনের অবকাঠামো প্রকল্পগুলো ঢাকার কাছ থেকে বেশি সহায়তা পাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার চার মাস চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি বলে দাবি করেছে পত্রিকাটি।

 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও সিলেটে বিমানবন্দরের টার্মিনাল তৈরির কাজ একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাস চার মাস চেষ্টা করেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাননি। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারিতে ভারতের সহায়তা পেলেও কোনও প্রশংসাপত্র পাঠায়নি বাংলাদেশ।

দ্য হিন্দু জানিয়েছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি কূটনৈতিক সূত্র। এ বিষয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনও মন্তব্য করেনি বলে দাবি করেছে তারা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, রীভা গাঙ্গুলি বিশেষ কাজে ঢাকার বাইরে রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

ইমরান খানের টেলিফোনঃ
গত বুধবার শেখ হাসিনার কাছে টেলিফোন করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ফোনালাপের বিষয়ে ঢাকা বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে; তবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে শেখ হাসিনাকে অবগত করেছেন ইমরান খান এবং এ বিরোধের সমাধান আশা করছেন তিনি। এ ফোনালাপের প্রতিক্রিয়ায় গত বৃহস্পতিবার ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশ কাশ্মীর সংকটকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করছে, এটিকে স্বাগত জানাচ্ছে নয়াদিল্লি।

ভোরের কাগজের প্রতিবেদনের সূত্রে দ্য হিন্দু বলেছে, শেখ হাসিনার অফিসের একটি অংশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে। চীনের মিত্র পাকিস্তানের সঙ্গে গত ১০ মাসে সম্পর্কের দ্রুত উন্নয়নের মাধ্যমে বিষয়টি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে ২০১৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ নিয়েছিল বাংলাদেশ। গত ১৫ বছরের মধ্যে সেটাই প্রথম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য আমদানির ঘটনা।

এনআরসি-সিএএঃ
ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনও (সিএএ) ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর আঘাত করেছে। সিএএ’র মাধ্যমে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মানুষদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে ভারত।

দ্য হিন্দু জানিয়েছে, এনআরসি ও সিএএ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং বাংলাদেশ ধর্মীয় গোঁড়ামি হ্রাসের ধারা বজায় রেখেছে। তারপরও এক প্রভাবশালী বিজেপি নেতা অনিবন্ধিত নাগরিকদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে ঢাকা। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার গণমাধ্যমগুলো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বিভেদ ঢাকায় পাকিস্তান ও চীনা স্বার্থের সঙ্গে জড়িত গ্রুপগুলোর জন্য সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ সুযোগেই ঢাকায় নতুন পাকিস্তানি হাইকমিশনারের আগমনের মাধ্যমে দুই বছর (২০১৮-১৯) পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক ফের চালু হয়েছে। গত ১ জুলাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেনের সঙ্গে দেখাও করেছেন নবনিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী।

দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পাকিস্তান ও তাদের ঐতিহ্যবাহী সমর্থক চীনের সঙ্গে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধিকে ঢাকার বিশেষ আগ্রহের ইস্যুগুলো নিয়ে ভারতের সঙ্গে দরকষাকষির পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এসব ইস্যুর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, এছাড়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতেও ক্লান্ত বাংলাদেশ।

সূত্রঃ ভারতের দ্য হিন্দু এবং বাংলাদেশের দৈনিক ভোরের কাগজ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!