ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ছোট্ট রাফিদ আবারও স্কুলে যেতে চায়।কিন্তু বাধ সেধেছেন স্থানীয় এমপি।তার নাম ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান ফকির (অব.)। তার নির্দেশেই স্কুল থেকে টিসি দেওয়া হয় অবুঝ রাফিদকে। এ অন্যায় বিচার পোড়াচ্ছে শিশু রাফিদকে। সে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। বাবা-মার হাত ধরে নিজের কষ্টের কথা জানাতে ছুটে গেছে সাংবাদিকদের দোয়ারে। আকুতি জানিয়েছে, “আমি আবার স্কুলে যেতে চাই।”
কোন অপরাধ ছাড়াই এমপির নির্দেশেই তাকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র (টিসি) দেওয়া হয়। এরপর প্রায় তিন মাস ধরে স্কুলে ভর্তির জন্য পৌর এলাকার স্কুলগুলোতে ঘুরছে শিশুটির পরিবার। ময়মনসিংহের গৌরীপুর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকিরের অনুমতি ছাড়া বাবার বদলীর আদেশপ্রাপ্তির অপরাধে এখন চোখের পানি ঝরাচ্ছে ছোট্ট শিশু রাফিদ। ছেলের এমন চোখের পানি আর সহ্য করতে না পেরে ময়মনসিংহে সাংবাদিকদের দারস্থ হন শিশু রাফিদের বাবা-মা। স্থানীয় প্রেসক্লাবে শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে গৌরীপুর আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকির এবং তার ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে এবং সন্তানের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এসময় কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে লিখিত বক্তব্যে বাবা মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘আমি ডিও লেটার না নিয়ে গত ৩১ মার্চ পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলীর আদেশপ্রাপ্ত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এমপি ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির। এরপর আমাকে স্কুল থেকে ধরে আনার জন্য ৪০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ১৬ এপ্রিল এমপির এপিএস সাহাবুলের নেতৃত্বে পেটুয়া বাহিনী পাঠায়। তারা আমার একমাত্র সন্তান গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী মুতাসিম মাহির রাফিদকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য স্কুল কমিটির সভাপতি ম. নুরুল ইসলামকে নির্দেশ দেয় এবং রাফিদ স্কুলে এলে দুই পা ভেঙে দিতে বলে। এসব শুনে রাফিদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘২১ মে রাফিদকে টিসি দেয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন। বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে এবং রাফিদের মার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাফিদকে বাসার কাছে সরযুবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির আদেশ দিয়ে চিঠি পাঠান। কিন্তু সেখানেও রাফিদকে ভর্তি করতে পারিনি এমপির নির্দেশের কারণে।’
এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শিশুটির মা রোজী সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমরা অপরাধ করলে আমাদের শাস্তি দিবে, কিন্তু আমাদের মেধাবী সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হবে কেন? সে কেন পৌর এলাকার কোনো স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না, স্কুলে যেতে পারবে না? আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বিষয়টি জানাতে চাই’। অবুঝ শিশু রাফিদের আকুতি, “স্কুল ছাড়া আমার ভালো লাগে না। আমি স্কুলে যেতে চাই। এমপি স্যারকে বলে আমাকে স্কুলে ভর্তির সুযোগ করে দিন। আমি স্কুলে পড়তে চাই।”
মাজহারুল আনোয়ার আবারো বলেন, ৫ জুন আমাকে এমপির নির্দেশে শ্যামগঞ্জ এলাকা থেকে পেটোয়া বাহিনীর সদস্য লিটন, বিপ্লব ও ফারুকের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে কলতাপাড়া ‘সেবালয়’-এ নিয়ে এসে চার ঘণ্টা বাথরুমে আটকে রেখে অমানবিক অত্যাচার করা হয়। পরে আমাকে সমিতির কার্যালয়ে নিয়ে এমপি নিজেই মারধর করেন। এরপর এমপি তার বঙ্গবন্ধু চত্বরের কার্যালয়ের জন্য দু’টি এসি দাবি করলে রাজি হই এবং বেতন পেয়ে ৭ জুলাই দু’টি এসি তুলে দেই সাংগঠনিক সম্পাদক কালাম ও বিপ্লবের হাতে।’
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আহাম্মদ হোসেনসহ স্থানীয়দের সহযোগীতা কামনা করলেও কোন সমাধান তিনি পাননি। বাধ্য হয়েই তিনি বাদী হয়ে ৫ আগস্ট এমপির পেটোয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন এবং পরে পুলিশ দু’জনকে আটক করে।
গৌরীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মো. মোরশেদুল হাসান খান এ মামলার তথ্য নিশ্চিত করে জানান, অভিযুক্তদের দু’জনকে আটক করা হয়েছে।তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।