DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বাংলাদেশে গরু প্রেরন বন্ধে বিজেপি সরকারের কঠোর অবস্থান

goruক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃবাংলাদেশে গরু প্রেরন বন্ধে বিজেপি সরকারের কঠোর অবস্থানের কারনে বাংলাদেশে গরুর মাংশের বাজারে প্রচন্ড বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে এখন ভারতের প্রায় ৩০,০০০ সেনা পাহাড়া দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের অধীনে এ বছর তারা একটি নতুন ক্ষমতা (ম্যান্ডেট) পেয়েছেন- মুসলিম প্রধান প্রতিবেশী দেশটিতে অবৈধভাবে গরু পাচার বন্ধ করা।

প্রায় একদিন পরপরই বাশের লাঠি ও দড়ি নিয়ে সৈন্যরা পাট ও ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে এবং পুকুর সাঁতার কেটে বাংলাদেশের বাজারের জন্য পাঠানো গবাদি পশু ধাওয়া করে। এই অভিযান ভারতীয় নীতির একটি স্পষ্টতম চিহ্ন যা ক্রমবর্ধমানভাবে হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত। যার প্রভাব পড়ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর অর্থনীতি এবং ভারতের বিশাল সংখ্যক সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর।

প্রতি বছর ভারত থেকে প্রায় ২০ লাখ গবাদি পশু বাংলাদেশে পাচার হয়। গত চার দশক ধরে বছরে ৬০ কোটি ডলারের (৪৬৮০ কোটি টাকা) এই বাজার বিকশিত হয়েছে যাকে বাংলাদেশ বৈধ বলেই মনে করে আসছে। হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সহায়তায় ক্ষমতা আসা মোদির সরকার এর ইতি টানতে চান।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এই বসন্তে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) নির্দেশ দিয়েছেন যে গরু পাচার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া যাতে ‘বাংলাদেশের মানুষ গরুর গোশত খাওয়া ছেড়ে দেয়’। ‘একটি গরু হত্যা – একটি হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ অথবা একটি হিন্দু মন্দির ধ্বংসের সমতুল্য,’ বলছিলেন পশ্চিমবঙ্গের আরএসএসের মুখপাত্র জিষ্ণু বসু।

পশ্চিমবঙ্গের সাথেই রয়েছে বাংলাদেশের ২,২১৬ কিমি সীমান্ত। গোশতের দাম বেড়েছে, কমেছে রপ্তানি চলতি বছর এখন পর্যন্ত বিএসএফ সদস্যরা ৯০,০০০ গবাদি পশু জব্দ এবং ৪০০ বাংলাদেশি ও ভারতীয় পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।

 

বাংলাদেশের ১৯০০০ কোটি ডলারের অর্থনীতির ৩ ভাগ আসে গরু বিক্রি, জবাই, গোশত প্রক্রিয়াকরণ, ট্যানারি ও হাড় প্রক্রিয়াকরণ কারখানা থেকে। জিডিপিতে ভারতের এই নীতির কী প্রভাব পড়েছে তা স্পষ্ট নয়।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে গোশত ব্যবসা এবং চামড়া শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের শীর্ষ গরুর গোশত রপ্তানিকারক বেঙ্গল মিটের সৈয়দ হাসান হাবিব বলছিলেন যে তাদের আন্তর্জাতিক রপ্তানি ৭৫ ভাগ কমাতে হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোতে বছরে ১২৫ টন গরুর গোশত রপ্তানি করে থাকে কোম্পানিটি।

তিনি জানান, ভারতের এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে গত ছয় মাসে গরুর গোশতের দাম প্রায় ৪০ ভাগ বেড়েছে। তারা তাদের দুটো প্রক্রিয়াকরণ কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

হাবিব বলেন, তারা এখন নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পরিকল্পনা করছেন। তবে ভারতের গরুর মান উন্নত এবং কাচা চামড়াও ভালো।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ জানান, দেশের ১৯০টি ট্যানারির ৩০টিই বন্ধ হয়ে গেছে। চাকুরি হারিয়েছেন ৪,০০০ কর্মী। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গরুর গোশতের জন্য বাংলাদেশের উচিত নতুন উৎস খুঁজে বের কর। কারণ ভারত তার অবস্থান বদলাবে না। গরু সুরক্ষা বাহিনী ভারতে গবাদি পশুর সংখ্যা ৩০ কোটি এবং দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম গরুর গোশত রপ্তানিকারক এবং পঞ্চম বৃহত্তম ভোক্তা।

তবে আরএসএসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত মোদির ভারতীয় জনতা পাটি (বিজেপি) এক বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর গরু সুরক্ষা এবং গরুর গোশত রপ্তানি বন্ধে ক্রমবর্ধমানভাবে সুর চড়াচ্ছে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, গরুর গোশত বিরোধী আইন মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক। আমিষের জন্য মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিস্টান ও নিম্নবর্ণের হিন্দুরাও সস্তা দামের গরুর গোশতের উপর নির্ভরশীল। কসাই ও গবাদি পশুরা ব্যবসায়ীরা, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম, বলছেন তারা বেকার হওয়ার উপক্রম হয়েছেন।

অনদিকে সরকারের নীতির কারণে গরু সুরক্ষায় নজরদারি জোরদার হয়েছে। ‘গরু সুরক্ষা কমিটি আমাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে প্রহার করেছে। তারা আমাকে হিন্দুদের প্রার্থনা পাঠ করতে বাধ্য করেছে,’ বলছিলেন মোহাম্মদ তরফদার যিনি গত এপ্রিলে বাংলাদেশ সীমান্তে দুটি বাছুর পাচারকালে ধরা পড়েন।

বশিরহাট জেলার জরাজীর্ণ একটি কারাকক্ষে বসে তরফদার বলেন, ‘আমার ধর্মে গরুর গোশত খাওয়া এবং বিক্রির অনুমতি আছে, কাজেই হিন্দুদের এ নিয়ে সমস্যাটা কোথায়?’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!