DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

প্রবল প্রতিকূলতার মাঝেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনও রয়েছেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ

mzক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  প্রায় ৫ সপ্তাহ ধরে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।প্রচন্ড প্রতিকূলতার মধ্যেও এই আপোষহীন নেত্রী এখনও রয়েছেন দৃঢ় এবং প্রতিজ্ঞ।তার এই বিষ্ময়কর ইস্পাত কঠিন মনোবল বিএনপির আন্দোলনরত লাখো কর্মীদের সাহস আর প্রেরনা যুগিয়ে চলেছে ।

বর্তমানে ঐ ভবনে  ডিশ আর ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কোন নিউজ দেখতে পাচ্ছেন না এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর কোন সংবাদও পড়তে পারছেন না গুলশানের নিজ কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

 

এমতাবস্থায় খালেদা জিয়া এখন দৈনিক পত্রিকা আর বই পড়ে সময় কাটাচ্ছেন। গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান। এছাড়া মাঝে মধ্যে তার সাথে কার্যালয়ের ভেতর অবস্থানরত নেতাদের চলমান আন্দোলন নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। এসময় নেতাকর্মীদের চলমান আন্দোলন চালিয়ে যেতে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন খালেদা জিয়া।

 

এদিকে ২০ দলীয় জোট নেত্রীর তিন বেলার খাবার বাসা থেকে আসে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে তার ভাই, বোন ও বড় ছেলের শ্বশুরের বাসা থেকে খাবার আসে বলে জানা গেছে। ৫ জানুয়ারি ২০ দলের ডাকা নয়াপল্টনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

 

৩ জানুয়ারি রাত ১১ দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কার্যালয়ের গেট বন্ধ করে দেয়। অনেক চেষ্টা করেও তিনি কার্যালয় থেকে বের হতে পারেন নি। সেই রাত থেকে এ পর্যন্ত গুলশানের নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় জীবন-যাপন করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

 

কার্যালয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক আইজি এম এ কাইয়ুম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা শিরিন সুলতানা, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদারসহ কার্যালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা রয়েছেন বলে জানা গেছে।

৩ জানুয়ারি রাত থেকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়লেও সমাবেশের সিদ্ধান্তে খালেদা জিয়া অটল ছিলেন। ৫ জানুয়ারির সমাবেশের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে রাজধানীর কোথাও অনুমতি না মেলায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২০ দলের নেতাকর্মীদেরকে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি।

 

খালেদা জিয়া নিজেও নয়াপল্টনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ৫ জানুয়ারি তিনি নয়াপল্টনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কয়েক দফা চেষ্টা করেও গুলশান কার্যালয় থেকে বের হতে পারেননি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুলশান কার্যালয়ের গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। এর পাশাপাশি কার্যালয়ের সামনে বালুর ট্রাক রেখে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখে। ৫ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সেখানে পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে। পরে তিনি গেটের ভেতর দাঁড়িয়েই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন এবং অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন।

 

এরপর থেকেই একদিকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করছেন বেগম খালেদা জিয়া আর অপরদিকে সারাদেশে চলছে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ। এরই মধ্যে অবরুদ্ধ অবস্থায় খালেদা জিয়া চলমান আন্দোলন ও রাজনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন ও স্থায়ী কমিটির সঙ্গে দুইটি বৈঠকও করেন।

এভাবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থান থাকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে। ১৮ জানুয়ারি রাতে কার্যালয়ের সামনে থেকে জলকামান ও পুলিশের অতিরিক্ত গাড়ি সরিয়ে নেয়া হয়। নিরাপত্তায় আনা হয় শিথিলতা। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় ১৯ জানুয়ারি খালেদা জিয়া যদি তার প্রয়াত স্বামীর কবর জিয়ারত করতে যেতে চান তাহলে যেতে পারবেন। কোন বাধা দেয়া হবে না বলে জানানো হয়।

 

এদিকে খালেদা জিয়ার এই অবরুদ্ধ অবস্থায় মালয়েশিয়ায় হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ইন্তেকাল করেন। কোকোর মৃত্যুতে অবরুদ্ধ গুলশান কার্যালয়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। কোকোর মৃত্যুর কারণে অবরুদ্ধ গুলশান কার্যালয়ের নিরাপত্তায় কিছুটা শিথিলতা আনা হয়। খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ছুটে আসে গুলশান কার্যালয়ে।

ওই দিন রাতে খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গুলশান কার্যালয়ের সামনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও গেট লাগানো থাকায় তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। ২৬ জানুয়ারি দুপুরে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ গুলশান কার্যালয়ে এসে পৌঁছালে ছেলের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন খালেদা জিয়া। কার্যালয় থেকেই তিনি অশ্রুভেজা নয়নে ছেলেকে শেষ বিদায় দেন। এদিকে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর মানুষ মনে করেছিল যে চলমান আন্দোলনে মনে হয় কিছুটা শিথিলতা আসতে পারে।

কিন্তু খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার আদায়ের চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখতে দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। ২৬ জানুয়ারি কোকোর দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর দেশে আসা কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা আহমেদ ও তার দুই মেয়ের সাথে কয়েকদিন কাটান শোকাহত খালেদা জিয়া। তার দুই নাতনী এক সপ্তাহ পর পুনরায় মালয়েশিয়ায় চলে যায়।

 

এ অবস্থায় ৩১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ২০ ঘণ্টা পর পরের দিন রাত ১০টায় পুনরায় বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়। এরই মধ্যে রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের পর দিনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় ডিশ, ইন্টারনেট ও টেলিফোন সংযোগ।

 

বিচ্ছিন্নের একদিন পর বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় দেয়া হলেও আজ পর্যন্ত ডিশ, ইন্টারনেট ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এর সঙ্গে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের আশেপাশে মোবাইল কোম্পানিগুলোর নেটওয়ার্কও সমস্যা হচ্ছে।

মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা হওয়ায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়, সেখানে দায়িত্বরত গণমাধ্যমকর্মী ও আশেপাশের বাসা-বাড়িতে বসবাসকারীদের অনেক সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য রোববার গুলশান কার্যালয়ের দেয়ালের উপর কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!