DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালকারী চার সচিবেরই দাবি ‘আমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা’!

96362_1মুক্তিযোদ্ধার জাল সনদধারী চার সচিবের প্রত্যেকেই নিজেদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেছেন। সরকারের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে তাঁরা এ দাবি করেন। গত সোমবার এসব জবাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। চার সচিবের জবাব ভিন্ন ভিন্ন হলেও তাঁরা একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। চারজনই তিন থেকে চার পৃষ্ঠায় নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা দাবির পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ব্যাখ্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্রের ফটোকপিও সরবরাহ করেছেন তাঁরা।

স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজউদ্দিন মিঞা তাঁর কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে বলেন, 'আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিই।' নিয়াজউদ্দিন মিঞা তাঁর পরিবারের সদস্যদের কে কে মুক্তিযোদ্ধা তার বয়ানও দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তার উল্লেখ কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে নেই। তিনি কার অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, দেশের ভেতরে না বাইরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তার বর্ণনাও জবাবে নেই। নিয়াজউদ্দিন ১৯৫৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সেই হিসেবে ১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন ১৯৮৩ সালের ১৯ জুন। চাকরিতে যোগদানের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধা কি না এ-সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা দেননি। সরকার মুক্তিযোদ্ধা চাকরিজীবীদের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার বয়স বাড়ানোর ঘোষণা দিলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করেন। চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর চাকরি থেকে অবসরে যাবেন তিনি। ওই দিন তাঁর চাকরির ৫৯ বছর পূর্ণ হবে। মুক্তিযোদ্ধার সনদ থাকলে তিনি আরো এক বছর বেশি চাকরি করতে পারতেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাঁর মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করায় তাঁকে আগামী ৩০ ডিসেম্বরই অবসরে যেতে হচ্ছে।


 বর্তমানে ওএসডি সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকীও নিজেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধ দাবি করেছেন। তিনি ১৯৫৫ সালের ১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সেই হিসেবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাঁর শেষ কর্মদিবস। কারণ ৩১ অক্টোবর তাঁর ৫৯ বছর পূর্ণ হবে এবং ওই দিনই তাঁকে চাকরি থেকে অবসরে যেতে হবে। ১৯৮৪ সালের ১৯ ফ্রেব্রুয়ারি তিনি প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। গত ১৮ আগস্ট তাঁকে ওএসডি করা হয়।প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধ। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিই।' নিয়াজউদ্দিন মিঞা তাঁর পরিবারের সদস্যদের কে কে মুক্তিযোদ্ধা তার বয়ানও দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তার উল্লেখ কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে নেই। তিনি কার অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, দেশের ভেতরে না বাইরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তার বর্ণনাও জবাবে নেই। নিয়াজউদ্দিন ১৯৫৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সেই হিসেবে ১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন ১৯৮৩ সালের ১৯ জুন। চাকরিতে যোগদানের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধা কি না এ-সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা দেননি। সরকার মুক্তিযোদ্ধা চাকরিজীবীদের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার বয়স বাড়ানোর ঘোষণা দিলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করেন। চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর চাকরি থেকে অবসরে যাবেন তিনি। ওই দিন তাঁর চাকরির ৫৯ বছর পূর্ণ হবে। মুক্তিযোদ্ধার সনদ থাকলে তিনি আরো এক বছর বেশি চাকরি করতে পারতেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাঁর মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করায় তাঁকে আগামী ৩০ ডিসেম্বরই অবসরে যেতে হচ্ছে।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব আমির হোসেন নিজেকে কিশোর মুক্তযোদ্ধা দাবি করেছেন। কারণ তিনি দেখিয়েছেন, ১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। তাঁর জন্মতারিখ দেখিয়েছেন ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা। তিনি ১৯৮৩ সালের ১৯ জুন প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন।

ওএসডি যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম তালুকদার ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সেই হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স হয় ১২ বছর। কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে তিনিও নিজেকে 'প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা' দাবি করেছেন। কিন্তু অন্যদের মতো তিনিও কোথায়, কার অধীনে, কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, তা লেখেননি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জনপ্রশাসন সচিব বিদেশে অবস্থান করায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব) শাজাহান আলী মোল্লা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা জবাব পেয়েছি। সবকিছু পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

একটি সূত্রে জানা গেছে, এই চারজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে। এই মামলার ধারায় সর্বনিম্ন সতর্ক করা আর সর্বোচ্চ চাকরিচ্যুতির সাজা রয়েছে।

সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী গত ১৩ অক্টোবর স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজউদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব এ কে এম আমির হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ওএসডি) আবুল কাশেম তালুকদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সনদ জালিয়াতির ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা ১০ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন এই চারজনসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের (বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় বেসরকারীকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান) মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিলের সুপারিশ করে। এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান ছাড়া অন্য চারজনের সনদ বাতিলের আদেশ জারি করে। এ কারণে বাকি চারজনকে নোটিশ দেওয়া হলেও সনদ স্থগিত হওয়ায় ওয়াহিদুজ্জামানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়নি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!