DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

লতিফ সিদ্দিকীর এমপি পদ নিয়ে জটিলতাঃ সংসদ সিদ্ধান্ত নিয়ে ইসিকে জানাবে:নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী

1414078336 সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত এবং দল থেকে বহিষ্কৃত আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। দলের সদস্যপদ হারানোর পর তার সংসদ সদস্য পদ থাকছে কি না সে ব্যাপারে সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। ফলে আইনের ফাঁকে পার পেয়েও যেতে পারেন তিনি।

গত শুক্রবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় লতিফের প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিল করা হয়। বৈঠক শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে, এ সংক্রান্ত কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। আমরা তার এমপি পদ থেকে বহিষ্কারের জন্যও নির্বাচন কমিশনে লিখিত আবেদন জানাবো।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে দলটি নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর জন্য একটি খসড়া চিঠিও প্রস্তুত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তাকে দেখিয়ে দু’এক দিনের মধ্যে ইসিতে ওই চিঠি পাঠানো হবে।

তবে আওয়ামী লীগ আব্দুল লতিফের সংসদ সদস্য পদ বাতিল চেয়ে আবেদন করলেও আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার থাকছে না। কমিশন বলছে, সংসদের অভিভাবক স্পিকার। সুতরাং কোনো সংসদ সদস্যের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে এলেই আইন অনুযায়ী কমিশন ব্যবস্থা নেবে।

দি মেম্বারস অব পার্লামেন্ট ডিটারমিনেশন অব ডিসপিউট অ্যাক্ট অনুযায়ী, দল থেকে লতিফের বহিষ্কারের চিঠি জাতীয় সংসদে পাঠানো হলে তা ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে পাঠাবে সংসদ। পরে ১৪ দিনের মধ্যে কমিশন অভিযুক্ত ব্যক্তি বরাবর চিঠি দেবেন। এরপর শুনানির দিন ধার্য করবে ইসি। শুনানির পরই লতিফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংসদ সদস্য ও নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ১২ (১) এর (বি) বলা হয়েছে, ‘কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলে কেউ সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারবেন না।’ তবে বহিষ্কৃত সংসদ সদস্যের ব্যাপারে আরপিওতে কিছু বলা নেই।

তবে ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ভোটারদের ভোটেই তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। তাই তার যদি দলের প্রাথমিক সদস্য পদ না থাকে তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকার প্রশ্নই আসে না।

তবে আগের দৃষ্টান্তের উল্লেখ করে ইসির কর্মকর্তারা বলেন, আইনের অনেক ফাঁক ফোঁকর রয়েছে। সর্বোপরি সরকার যা চাইবে তা-ই হবে। সরকার যদি লতিফের সদস্য পদ বাতিল করতে চায়, আইনে যা-ই থাকুক না কেন, সেটাই হবে। অতীতে এমনটাই হয়েছে।

সংসদ সদস্য পদ শূন্য প্রসঙ্গে সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি উক্ত দল হতে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বালিত হবে।’ তবে বহিষ্কার করা হলে কী হবে তা স্পষ্ট নয়।

তবে এর আগে লতিফের আসন শূন্য প্রসঙ্গে সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আইন অনুযায়ী ‘ফ্লোর ক্রসিং’ এ (দলের বিপক্ষে অবস্থান) না পড়ায় লতিফ সিদ্দিকী রাজনৈতিক দল থেকে বহিষ্কার হলেও তার সংসদ সদস্য পদ হারাচ্ছেন না। ’ তিনি আরো বলেন, ‘স্পিকার দেশে আসলে এ বিষয়ে কথা বলবেন।’ কিন্তু গত ২১ অক্টোবর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী দেশে ফিরলেও লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাপারের এখনো কোনো মন্তব্য তিনি করেননি।

এদিকে সংসদ সচিবালয় সূত্র বলছে, লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাপারে স্পিকার কোনো চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠাবে না।

স্পিকার যদি নির্বাচন কমিশনে চিঠি না পাঠায় তাহলে নির্বাচন কমিশনেও কিছু করার থাকছে না। ফলে লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ পদ থাকা না থাকা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লতিফ সিদ্দিকীর বহিষ্কার আদেশ ইসিতে এলে কমিশনের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ বাংলামেইলকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরাসরি নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিলে আমরা কিছুই করতে পারবো না। তবে তারা যদি জাতীয় সংসদকে লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে চিঠি দেয় এবং সংসদ যদি নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠায় তাহলে বিদ্যমান আইনগুলো পর্যালোচনা করে দেখবো, তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়।’

অপর কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেহেতু লফিত সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিল হয়েছে। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। তাই আমরা আইনগুলোভালো ভাবে খতিয়ে দেখবো। দরকার হলে আইনজ্ঞদের  পরামর্শ নেব।’

তিনি আরো বলেন, ‘দল থেকে নয়, জাতীয় সংসদের স্পিকারের মাধ্যমে লতিফ সিদ্দিকীর বহিষ্কারের চিঠি ইসিতে এলে ব্যবস্থা নেব। যা করবো আইনের মাধ্যমেই।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে হজ, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.), তাবলীগ জামাত নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন লতিফ সিদ্দিকী। সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করার ঘোষণা দেন। গত ১২ অক্টোবর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

ওইদিন লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিতেরও সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। তাকে কেন চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না- তা জানতে চেয়ে ১৪ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়।

দেশের বাইরে অবস্থানরত লতিফ সিদ্দিকী তার কয়েক পৃষ্ঠার চিঠিতে দাবি করেছেন, তার বক্তব্যে খণ্ডিত আকারে প্রচার ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

দীর্ঘ এ চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ ও মন্ত্রী হচ্ছে একজন রাজনীতিবিদের জন্য ‘অলঙ্কার’। আর প্রাথমিক সদস্যপদ হচ্ছে ‘হৃদপিণ্ড’। আমার দীর্ঘ রাজনীতিতে জীবনের ত্যাগ, তিতিক্ষা বিবেচনা করে দল প্রাথমিক সদস্যপদটি বহাল রাখতে বিবেচনা করবে বলে মনে করছি।

তবে জবাব সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!