DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ভারত থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড

1_98100বিদেশে বসে দেশে টাকার বিনিময়ে হত্যা, এলাকাভিত্তিক ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা সংঘবদ্ধ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে পলাতক সন্ত্রাসীরা। দেশে অবস্থান করা সহযোগীদের দিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে তারা। পলাতক এমন ৪৯ ভয়ঙ্কর শীর্ষ সন্ত্রাসীর অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। এদের ৪৩ জনই ভারতে অবস্থান করছে।
 
এ তালিকায় ধরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের পুরস্কার ঘোষিত (মোস্ট ওয়ান্টেড), ইন্টারপোলের রেড নোটিশভুক্ত ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের চরমপন্থী সন্ত্রাসী রয়েছে। ভারতে অবস্থানকারী ৪৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অবস্থান শনাক্ত ছাড়াও তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সন্ত্রাসীদের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর-সংবলিত একটি প্রতিবেদন র‌্যাব সদর দফতর থেকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এ সন্ত্রাসীরা মূলত ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব সন্ত্রাসী ধরতে ও দেশে আনতে নতুন করে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

 

র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, শীর্ষ ৪৩ সন্ত্রাসী ভারতের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে আছে। তাদের বেশির ভাগেরই অবস্থান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায়। তারা ভারতের সীমানায় অবস্থান করে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন নম্বর ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ফোনে চাঁদাবাজিসহ সহযোগীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক সময় এ বিষয়টি প্রযুক্তির মাধ্যমে টের পেলেও দেশের সীমানার বাইরে হওয়ায় সন্ত্রাসীদের ধরতে পারছে না। এছাড়া বাকি শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আমেরিকা, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশে অবস্থান করছে।

 

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার দৈিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, বিদেশে অবস্থানরত দাগি সন্ত্রাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সেসব দেশের পুলিশসহ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

 

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, বিদেশে অবস্থারত সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। ভারতে অবস্থানরত ৪৩ সন্ত্রাসীর অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সন্ত্রাসীদের দেশে থাকা ক্যাডাররা বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে, চাঁদা আদায় করছে। সীমান্তের ওপারের ফোন নম্বর ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে হুমকি দিচ্ছে তারা। এ সন্ত্রাসীদের দেশে ফিরিয়ে আইনের আওতায় আনলে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ কমে যাবে।

 

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের নির্দেশনায় তার সহযোগীরা সম্প্রতি রাজধানীর মগবাজারের ট্রিপল মার্ডার করে। চাঞ্চল্যকর অন্যান্য হত্যাকান্ডের ঘটনা বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীদের নির্দেশে ঘটেছে। বিদেশে অবস্থান করে কলকাঠি নাড়ায় এসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করছে পারছে না র‌্যাব-পুলিশ। ফলে চাঞ্চল্যকর অপরাধ নিয়ে তাদের তদন্ত একটা পর্যায়ে গিয়ে থেমে যাচ্ছে।

 

তবে আবারও বিদেশে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ আগস্ট মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সঙ্গে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। বিএসএফকে তালিকা ধরে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দেশে পাঠাতে অনুরোধ জানিয়েছে বিজিবি।

 

র‌্যাবের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ভারতে অবস্থানরত তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা ভারতে বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করছে। তারা প্রত্যেকে ১০ থেকে ১৫টি ভারতীয় মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে দেশে চাঁদার জন্য হুমকি দিচ্ছে। সহযোগীরা দেশ থেকে চাঁদাবাজির যে টাকা পাঠায়, তা দিয়েই চলছে তাদের বিলাসী জীবন। অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে সরাসরি ভারতে নির্দিষ্ট সন্ত্রাসীকে টাকা পাঠাচ্ছে, এমন তথ্যও রয়েছে।

 

সন্ত্রাসীদের অবস্থান :
 
ভারতেই অবস্থান করছে ৪৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাদের মধ্যে সাহাদাৎ হোসেন মুর্শিদাবাদে রয়েছে। অন্যদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে কলকাতায়।

 

শাহাদাৎ হোসেন :
আটটি হত্যাসহ ১৬ মামলার আসামি শাহাদাতের নামে মিরপুরসহ সারা ঢাকায় চাঁদবাজি হচ্ছে। র‌্যাবের ওই প্রতিবেদনের তথ্য মতে, শাহাদাতের বর্তমান অবস্থান ভারতের মুর্শিদাবাদে। বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দিতে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সাতটি মোবাইল নম্বর সে ব্যবহার করেছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন।

 

জিসান :
মগবাজার-রমনা এলাকায় চাঁদাবাজি হচ্ছে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ওরফে নয়াটোলার জিসানের নামে। সম্প্রতি মগবাজারে ট্রিপল মার্ডার ও চাঞ্চল্যকর ছিনতাইয়ের ঘটনায় তার হাত রয়েছে। তার বর্তমান অবস্থান ভারতে। তার বিরুদ্ধে আট হত্যাসহ ৯টি মামলা রয়েছে। কিছুদিন আগে সে দুবাইয়ে ছিল। সেখানে তার নিজের ফ্লাটও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ওয়ারেন্ট আছে।

 

আশিক :
আশিকের অবস্থান ভারতে। তার নামে চাঁদাবাজি চলছে ফার্মগেট ও কারওয়ানবাজার এলাকায়। পাঁচটি হত্যাসহ ১৬টি মামলার আসামি আশিক ভারতে সৌমেন খান হিসেবে ছদ্ম নামে পরিচিত। ভারতে তার গাইড হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশ থেকে পলাতক নারায়ণগঞ্জের আরেক সন্ত্রাসী সেলিম।

 

জয় :
শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীর ইসলাম জয়ের অবস্থান ভারতের কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায়। নিজে বাড়ি কিনে সেখানেই পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে অবস্থান করছে এ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ আটটি অভিযোগ রয়েছে।

 

নবী :
ভারতের কলকাতার আলীপুর জেলে বন্দি আট হত্যাসহ ২৪ মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেন। বিদেশের জেলে থাকলেও তার নামে রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় চলছে চাঁদাবাজি।

 

আনু :
কুষ্টিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী আনোয়ার হোসেন আনুর অবস্থান ভারতের গোবিন্দপুরে। তিন হত্যাসহ ছয়টি মামলার আসামি আনু ভারতে অবস্থান করলেও সীমান্তে এসে বাংলাদেশী মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে দেশে চাঁদাবাজি করছে।

 

অমল কৃঞ্চ :
রাজবাড়ীর শীর্ষ সন্ত্রাসী অমল কৃঞ্চ মন্ডলের অবস্থান ভারতের বনগাঁওয়ে। সে ভারতীয় সীমান্তে থেকে ফোনে চাঁদাবাজি করছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।

 

সুব্রত বাইন :
এক সময়ের ত্রাস সুব্রত বাইন কলকাতা কারাগারে বন্দি। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৩০টি মামলা রয়েছে। ২০১২ সালে নেপালের জেল ভেঙে পালানোর পর ওই বছরেরই ২৭ নভেম্বর কলকাতা পুলিশের হাতে সে গ্রেফতার হয়।

 

অন্যান্য সন্ত্রাসী :
শীর্ষ সন্ত্রাসী আনিসুর রহমান ওরফে ফিঙ্গে লিটনের অবস্থান বনগাঁও থানার সাতাবাওর পোস্ট অফিসের ভিবা গ্রামে। আমিনুল ইসলাম মুকুল ভারতের জেলে বন্দি। আগরতলায় আছে হত্যাসহ ১৩ মামলার আসামি শাহীন সিকদার। চট্টগ্রামের খন্দকার তানভীর ইসলাম ওরফে জয় আছে কলকাতায়। আটটি হত্যা মামলার আসামি তৌফিকুল আলম খান ওরফে পিয়াল খান আছে বনগাঁওয়ে। চারটি হত্যাসহ ১৭ মামলার আসামি মামুনুর রশীদ মামুনের অবস্থান ভারতের ত্রিপুরায়। কলকাতায় অবস্থান করছে পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ ও শামীম আহমেদ ওরফে আগা শামীম। পাঁচ হত্যাসহ ৯ মামলার আসামি চরমপন্থী নেতা এনামুল হক এনার অবস্থান নদীয়ার করিমপুর থানার বকশীপুরে। চট্টগ্রামের নুরুল আলম প্রকাশ ওরফে এতিম প্রকাশ থাকে কলকাতায়। তার বিরুদ্ধে চার হত্যাসহ ১৬টি মামলা। শীর্ষ সন্ত্রাসী মনু থাকে শিলিগুড়ি, মাসুদ থাকে আগরতলা ও পুরস্কার ঘোষিত অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস থাকে কলকাতা এলাকায়।

 

এছাড়া শাহী ওরফে রুমী, নরোত্তম সাহা ওরফে আশিক, কালু, চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী সুনীল কান্তি দে, গৌতম চন্দ্র শীল ওরফে গৌতম চেয়ারম্যান, চপল, মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, বাবু ওরফে মিরপুর বাবু, মিন্টু, পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী হারিছ আহমেদ, আতাউর রহমান আতা, হালিম, জাফর আহমেদ ওরফে মানিক, কালাচান ওরফে চান, মিনহাজ উদ্দিন ওরফে দুখু, সিদ্দিক, তৈমুর, মোর্শেদ খান, রাজিব দত্ত ওরফে প্রকাশ, সাজ্জাদ খান, শহিদুল ইসলাম ও ইব্রাহিম খলিল ভারতে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
 
দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের চরমপন্থী দলের নেতা মনতোষ বশাক ও শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ভারতের হুগলিতে অবস্থান করছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যাকান্ডের এজাহারভুক্ত আসামি ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চলের অবস্থান বর্তমানে আমেরিকায়। আরেক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আবদুল মাজেদের অবস্থান পাকিস্তানে। সন্ত্রাসী মোসলেমুদ্দিন খান প্রকাশ, কিলার মুসলিমও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থান করছে। টোকাই সাগর অবস্থান করছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!