DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

প্রসঙ্গ বাংলাদেশঃ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের তিনটি প্রস্তাবের নেপথ্যের দুই বাংলাদেশীর সাথে কিছু আলাপ

 

unnamed (40)সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ- ব্রাসেলস থেকে

 

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ঝুঁকি, আইনের শাসনের অভাব , মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত, গুম, খুন, হত্যা এবং সর্বশেষ এলিট ফোর্স র‍্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন-র‍্যাব বিলুপ্তি ও দায় মুক্তি না দিতে পর পর তিনটি প্রস্তাব পাশ করে মাত্র দুই বছর সময়ের ভিতরে। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, জাতীয় বিষয় নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাশ নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। কেননা এ ধরনের প্রস্তাব কেবল তখনি পাশ বা উত্থাপিত হয় যখন একটি দেশের ভিতরে রাজনৈতিক শূন্যতা বা অস্থিরতা দেখা দেয়, আইন শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি হয়, জনগণের জীবন মান হুমকির মুখে পড়ে, সরকারি বাহিনী ঠ্যাঙ্গারু বাহিনী হিসেবে আবির্ভূত হয়- কেবল তখনি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী মানবাধিকারের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে। সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা তথা মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের তাগিদ দিয়ে থাকে।প্রাথমিকভাবে কেবল সতর্কতা, বিবৃতি, শঙ্কা প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। পরিস্থিতির কোন উন্নতি সাধিত না হলে বা কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হলে ইউ বা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী তখন তাদের আইন পরিষদের মাধ্যমে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে- আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে অবহিত করনের মাধ্যমে নিজেদের বলয়ে নিয়ে অধিক চাপ প্রয়োগের কৌশল নিয়ে থাকে।এভাবে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ধীরে ধীরে একটি দেশের ভিতরকার পরিস্থিতি নিয়ে উন্নতির লক্ষণ না দেখলে আরো অধিকতর অংশ গ্রহণের জন্য আইন পরিষদের সহায়তা দিক 

নির্দেশনার সূত্রপাত করে থাকে। যা একটি স্বাধীন দেশের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক এবং লজ্জাস্করও বটে।

 

গত সপ্তাহের শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে বাংলাদেশ নিয়ে যে যৌথ প্রস্তাব পাশ হয়, তা নিয়ে ইউরোপ সহ বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তুলে।বিশেষ করে বিরোধীদল বিএনপি বর্তমানে র‍্যাব বিলুপ্তি নিয়ে যে দাবী করছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনের প্রস্তাবে র‍্যাব কে তাদের বিনা বিচারে হত্যার জন্য দায় মুক্তি না দিতে বলা হয়েছে। আরো আগ্রহের ব্যাপার হলো পার্লামেন্টের একটি শক্তিশালী পার্টি পিপলস পার্টির প্রধান প্রস্তাবই ছিলো র‍্যাব বিলুপ্তি করে পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা বাড়িয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করা।

 

র‍্যাব- বাংলাদেশের এমন এক সংস্থা, একসময় যাদের জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশছুয়ী। দেশের আপামর সাধারণ জনগণ নিজদের জান মাল সুরক্ষার ও নিরাপত্তার একমাত্র ভরসার আশ্রয় স্থল হিসেবে র‍্যাবকে মনে করতেন, মাত্র কিছু দিন যেতে না যেতেই সেই র‍্যাব জনগণের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্কের  নাম।আর ইউরোপের মতো শক্তিশালী পার্লামেন্টও এখন র‍্যাবের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে।

 

এ নিয়ে ব্রাসেল ও বেলজিয়াম ঘুরে জানার চেষ্টা করি কি এমন উৎস কিংবা যাদের সহায়তায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এরকম প্রস্তাব উত্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হলো বা কারা এর পেছনে মাস্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করছেন। সরেজমিনে ঘুরে অনেকের সাথে কথা বলে যে দুটো নাম জানা গেলো অনেক কষ্টের মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হলো। শুরুতেই তারা মুখ খুলতে চাননি, অভয় দিয়ে বললাম, স্রেফ সংবাদ তৈরির জন্যই যোগাযোগ।বেলজিয়ামের এক বাংলাদেশী ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতায় কথা হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাব উত্থাপনের নেপথ্য কারিগর, যারা বাংলাদেশের গুম, খুন, হত্যা, বিনা বিচারের আটক ও হত্যা ইত্যাদি নিয়ে সকল তথ্য ও তথ্যাবলী পার্লামেন্টের সকল দল ও এমইপিদের সাথে সাক্ষাত করে সরবরাহ করেছেন।সেই দুই কারিগর হলেন বেলজিয়ামের দুই প্রবাসী বাংলাদেশী বেলজিয়াম বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন বাবু এবং দফতর সম্পাদক আলম হোসেন।

 

বেলজিয়ামের কেন্দ্র স্থলে এক রেস্তোরায় এই দুই নেপথ্যের কারিগরের সাথে দেখা হলো। পরিচয় দিতেই হাত বাড়িয়ে দিলেন। জিজ্ঞেস করার পর ইকবাল হোসেন বাবু জানালেন বর্তমান সরকার যেভাবে একের পর এক জুলুম, নির্যাতন, বিএনপি নেতা কর্মীদের হত্যা, খুন, সন্ত্রাস আর রাজনীতি থেকে উৎখাতের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে, বিশেষ করে র‍্যাব সহ আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, লুট পাটের চিত্র দেখে তারা একজন প্রবাসী হিসেবে দেশের জনগণের জান মাল ইজ্জতের নিরাপত্তা, বাক ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করনের জন্য তারা দুজন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বারস্থ হন। অবশ্য তারা আরো জানালেন শুরুতে তাদের এই কাজে কেউ এগিয়ে আসেননি। তারা ইউরোপ, বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতাদের সাথে যোগাযোগ করেন তাদেরকে পরামর্শ ও সহায়তা করার জন্য যাতে তারা ইউ পার্লামেন্টে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন সরকারের দমন পীড়নের প্রতিবাদে প্রস্তাব আনয়নের জন্যে। কিন্তু তারা জানালেন এতে তারা কারো কাছ থেকে কোন সহায়তা পাননি। সেজন্যে তারা দমে যাননি। অবশেষে তাদের সাথে পরিচয় হয় মধ্যপ্রাচ্যের আরো এক প্রবাসী বিএনপি নেতা, সৌদি আরব বিএনপির সভাপতি আহমদ আলী মুকিবের সাথে।আহমদ আলী মুকিব এই দুই প্রবাসীর বক্তব্য বিস্তারিত শুনার পর এবং তাদের ফাইলিং কার্যক্রম, ম্যাটারিয়েলস দেখে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ইকবাল হোসেন বাবু ও আলম হোসেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের নেতৃবৃন্দের সাথে সংযোগ স্থাপন করে দেন। আর সেভাবে আহমদ আলী মুকিবের অক্লান্ত সহযোগিতায় এই দুই তরুণ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী নেতা পার্লামেন্টে যোগাযোগের মাধ্যমে যৌথ প্রস্তাব পাশের দুর্লভ রেকর্ডের গৌরব কিংবা আলোচনার নেপথ্যের কারিগর।আগামীর ইতিহাস কেবল বিচার করবে এই দুই প্রবাসী বাংলাদেশীর কাজের প্রকৃত মূল্যায়ন।

 

ইকবাল হোসেন বাবু ও আলম হোসেনের সাথে যখন কথা বলছিলাম তখন সেখানে এসে উপস্থিত হন বেলজিয়াম বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সাজা মিয়া ও আক্কাছ উদ্দিন। এর কিছু পরেই সেখানে আরো কয়েকজন বাংলাদেশী এসে উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে রকিব মিয়া, শ্যামল মিয়া, হেলাল মিয়া, রেজাবুল হাশেম ও মহিব উল্লাহ। কুশল জিজ্ঞেস করতেই আব্দুর রাজ্জাক সাজা মিয়া বলেন ইকবাল হোসেন বাবু ও আলম হোসেন প্রবাসী বিএনপির নেতা হিসেবে জাতীয়তাবাদী দলের হয়ে যে কাজ করেছেন, সেজন্যে প্রশংসার দাবীদার, তিনি ও আক্কাছ মিয়া তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। একইভাবে ধন্যবাদ জানান উপস্থিত অন্যান্যরাও।

 

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪-বেলজিয়াম ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!