DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমান এবং বেগম জিয়াঃ সাফল্য ও অগ্রগতির ৩৬ বছরে বিএনপিঃ ৪র্থ পর্ব

aposhhinnetriক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ

পর্ব ৪ :

 

আপোষহীন নেত্রীঃ



গৃহবধু এবং রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ বলে কথিত বেগম খালেদা জিয়া হিংসা প্রতিহিংসা জটিলতা কুটিলতা হত্যা ষড়যন্ত্র নিপীড়ন নির্যাতনকে উপেক্ষা করে প্রাথমিক সময়গুলো অতিক্রম করেন। যা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে ছিল অভাবনীয়। প্রতিকূল পরিবেশে নিজ বুদ্ধিমত্তা সাহস ও দৃঢ়তা দ্বারা তিনি অনুকূলে নিয়ে আসেন। ১৯৮৭ সালেই তিনি জনতার মন জয় করে বরিত হন আপসহীন নেত্রী অভিধায়। তিনি যেমন জাতীয়তাবাদী শক্তি তথা জাতীয়তাবাদী দলকে সংগঠিত করেছেন দলও কতিপয় বিশ্বাসঘাতক বাদে সমস্ত পর্যায়ে সময় শ্রম অর্থ ত্যাগ তিতিক্ষা দিয়ে একজন বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রীকে নির্মাণ করেছে। তার নিজের উদ্যম উদ্যোগ অপরিসীমপরিশ্রম ক্ষমতা তার জনতার সহযেগিতা সহমর্মিতায় তিনি শুধু দলের নন হয়ে উঠেছেন কোটি কোটি মানুষের মহিয়সী নেত্রী-দেশনেত্রী। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রান্তসীমায়ই উদ্ভব লালন বিকাশ ঘটে-একজন ভবিষ্যত রাষ্ট্রনায়কের। ওই সময় ঘটনা প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করেই। সেই যে পাদ প্রদীপে আস-সেই যে কেন্দ্র বিন্দুতে পৌঁছে-সেখান থেকে পিছু হটতে হয়নি কখনও আর। বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তার দৃঢ়তা দেশপ্রেমের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছে।

ভোটারবিহীন দ্বিতীয়বার সংসদ নির্বাচনঃ

‘৮৬ এর ভোটারবিহীন অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির অংশগ্রহন না থাকায় তা আন্তর্জাকিভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এমনিতেই সাজোনো নির্বাচন এরশাদের জন্য বুমেরাঙ হয়ে দাঁড়ায়। আর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে বৈধতা নেযার প্রয়াস পান। ১৯৮৮ সালের ১ জানুয়ারি সরকার ঘোষণা করে যে ২৮ ফেব্রুয়ারি আবার জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ দিন টিএসসি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বেগম খালেদা জিয়া সরকারের বিশ্বাস যোগ্যতার প্রশ্ন তোলেন এবং দৃঢ়তার সাথে ‘একদফার’ ঘোষণা দেন। আট দলীয় জোট নির্বাচনের ঘোষণা প্রত্যাখান করে। জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা করে তারা নির্বাচনে যাবে না। তিনি জোটের লিয়াজোঁ কিমিটি নির্বাচন ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এদিকে ২২টি ছাত্র সংগঠন ঘোষণা দেয় নির্বাচনকে তারা সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করবে। ১২ জানুয়ারি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশব্যাপী জনসংযোগ শুরু করেন। এসব সভায় তিনি এক দফায় অনড় থাকেন।

নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হয়ে ওঠে তখনই যখন দেখা যায় জাতীয় পর্টি তিন চতুর্থাংশ আসন লাভ করে। নামগন্ধহীন প্যাড র্স্ববৃস্ব ৭১ দলের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত বিরোধী মোর্চা (কপ) পেয়েছে ১৮ আসন। ২৪ মার্চ তিন জোট, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য বিরেধীদল পূর্বঘেষিত কালো দিবস উপলক্ষে সমাবেশ বিক্ষোভ মিছিল করে। ২৫ এপ্রিল তিন জোট ও দলসমূহ হরতার পালন করে।

এসব হরতাল মিটিং মিছিলে এরশাদের রাষ্ট্রধর্ম প্রচারণার তীব্র প্রতিবাদ করে হরতাল পালন করেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় সমাবেশে দেশনেত্রী জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার কায়েম করে মুক্তিযুদ্ধের চেতান বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনের দাবিঃ

১৯৮৮ সাল বন্যা বিতর্কিত নির্বাচন আন্দোলন লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হন। জোটসমূহ এবং রাজনৈতিকদলসমূহ আন্দোলনকে চাঙ্গা করার সিদ্ধান্ত নেয়।এ সময় বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টায় ঢাকায় আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এশিয় বিষয়ক সাব কমিটির চেয়াম্যান স্টিফেন সোলার্জ। বেগম খালেদা জিয়া সোলার্জকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন যে এরশাদের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। সুতরাং এরশাদের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। উল্লেখ্য যে, বিএনপি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এরশাদ পতনের একদফা আন্দোলনকে বেগবান করে এরশাদকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে। স্বৈরশাসক সামরিক শাসন, জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী এরশাদের সাথে কোন আপস নেই ১৯৮৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শামসুন নাহার হলের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া পুরোল্লেখিত বিষয় পুনরোক্তি করেন।

৮ ও ৯ মার্চ ‘৮৯ ইঞ্জিনিয়িার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় অধিবেশেনের উদ্বোধনী ভাষণে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন: বিএনপি কারো কাছে মাথা নত করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।

সরকার বিরোধী আন্দোলন যখন বিভক্তির বেড়াজালে বিড়ম্বিত তখন সুপ্রিম কোর্টে হাইকোর্টের বিভক্তি অর্থাৎ বিভিন্ন আঞ্চলিক শহরে প্রতিস্থাপনের আদেশ বাতিলপূর্বক এক যুগান্তকারী ও সাহসী রায় প্রদান করে। এরশাদ প্রথম বারের মত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। বিরোধী শক্তি প্রবল নৈতিক শক্তি লাভ করে। এদিকে ২৭ নভেম্বরর ‘৮৯ শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহুত হরতাল উত্তাপ সঞ্জার করে। স্কাপ আন্দোলানকে আরও জোরদার করার প্রয়াসী হয়। এ সময় আর একটি ঘটনা ঘটে । ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে একীভুত না করার কারণে বেগবান হতে পারেনি।

খালেদা জিয়ার একটানা অনশনঃ

১৯৮৯ সালের ১ নভেম্বর জাতীয়তাবাদী দল তথা ৭ দলীয় জোটের ২৭ জন নেতাকর্মী নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনের দাবিতে গুলিস্তান চত্বরে একটানা ১০ ঘন্টা প্রতীক অনশন পান করেন। সাত দলীয় জোটের অনশনে সংহতি প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন রজনেতিক দলের বিপূর সংখ্যক নেতাকর্মী গুলিস্তান চত্বরে আসেন। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বেগম খালেদা জিয়াকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বলে অবহিত করেন।

মওলানা ভাসানীর মাজারেঃ

১৯৮৯ সালের ১৭ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়া মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মুত্যুবার্ষিকীতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি দেশের ভূখা-নাঙ্গা অসহায় মানুষে অধিকার প্রতিষ্ঠার মজলুম জননেতার মত সংগ্রামের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন: আমরা কিছু পাবার বা নেবার জন্য আন্দোলন করছি না, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের কল্যানের জন্য রাজনীতি করছি। এদিকে ২৯-৩০ নভেম্বর দুদিন এক দফার দাবীতে ৭ দলীয় জোট হরতার পালন করে। ‘৮৯ সারা সময়ই রাজপথে থেকেছেন খালেদা জিয়া। জনগণকে এক দফার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হবার জন্য উৎস প্রনান্তকর চেষ্টা করেছেন।

গণ-অভ্যুত্থান ও বেগম খালেদা জিয়াঃ

শহীদ জিয়ার শাহাদতের ঘা মুছতে না মুছতেই বিএনকি তছনছ করে দেয় আর একটি বিপর্যয়। সেনা প্রধান লে. জে. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ষড়যন্ত্রের অনেক বাঁক অতিক্রম করে অবশেষে একটি সাংবিধানিক সরকারকে ‘শুধুমাত্র ক্ষমতার জোরে শুধুমাত্র অস্ত্রের জোরে’ পদচ্যুত করেন। যার করুনা আশীর্বাদ আনুকূল্য তাঁকে অবাঞ্ছিত অবস্থা থেকে একটি বাঞ্ছিত অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে তার আদর্শ ভাবনীতি নৈতিকতা তার উত্তরাধিকার কোন কিছুই তাকে নিবৃত করতে পারেনি। যখন তার উত্তরসূরী সহধর্মিনী তার আদর্শ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতার জন্য অগ্রসর হয়েছেন তখনও বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ মমত্ববোধ পোষণ না করে পথে পথে কন্টক বিছানোর দুষ্কর্মটি করেছেন। শাহাদাতের পরে স্বার্থ সুবিধা এবং ক্ষমতা লিপ্সা যখন অনেক লোককে অন্ধ করে ফেলে তখন শহীদ জিয়ার জীবনাদর্শ নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন তাঁর জীবন সাথী বেগম খালেদা জিয়া।

প্রায় ৯ বছর দীর্ঘ ওই সংগ্রামের ইতিহাস বড়ই কঠিন নির্মম। কোরাজন একিনো- বেগম খালেদা জিয়ার মতো যাঁকে উত্তরাধিকার অর্জনের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে কিন্তু অপেক্ষার এতো দীর্ঘ রাত্রি তাঁকে অতিক্রম করতে হয়নি। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯ বছরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে এ নিবন্ধে। শুরুতেই এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ‘বন্দুকের নল দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা বেড়িয়ে এসেছ’জনমনে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে মাত্র ছ’মাসের মধ্যেই। ১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসকে কেন্দ্র করে যার সূচনা ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বৈরাচারীর পতনের মধ্যদিয়ে তার সমাপ্তি। নানা চড়াই উৎড়াই বিশ্বাস এবং বিশ্বাসঘাতকাতার মধ্যদিয়ে এগিয়ে গেছে গণতন্ত্রিক সংগ্রাম। আমরা দেখেছি প্রায় ৯ বছরের ইতিহাস। সব ঘটনা উল্লেখ সম্ভবও নয়। প্রযোজ্য নয়। তবে জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি আন্দোলনও প্রতিটি প্রত্যয় ব্যক্ত করার সীমিত প্রয়াস এতে বিধৃত।

এখন ৯০ বিজয়ের মূল লক্ষ্যের দিকে ধাবমান তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাবলীর দিনপঞ্জির দিকে অগ্রসর হব:

নব্বই এর নববর্ষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা দিয়ে শুরু হয় নবযাত্রা। শুভেচ্ছা বাণীতে তিনি বলেন:

স্বৈরাচারী বিরেধী গণআন্দোলনকে শানিত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আমরা বরণ করছি ইংরেজি ১৯৯০ সালকে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অবক্ষয় ও নৈরাজ্যকর অবস্থা আজ জাতিকে গ্রাস করতে বসেছে। সকল শ্রেণী ও পেশার জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে গণআন্দোলনকে দুর্বার বেগবান করে এই স্বৈরাচারী সরকারকে বাধ্য করে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ ও তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে জনপ্রনিধিত্বিশীল সরকার প্রতিষ্ঠা মাধ্যমে গণতন্ত্র ন্যায় বিচার, সুষমবন্টন ভিত্তিক অর্থনীতি শোষণমুক্ত সমাজ কায়েম করতে হবে-এটাই হোক আমাদের নববর্ষের শপথ। শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না। জনতার বিজয় অবশ্যম্ভাবী।

০৪ জানুয়ারি ’৯০:

: সাত, পাঁচ দলীয় জোট এবং অন্যান দলের জতীয় সংসদ অভিমুখ যাত্রা

: পুলিশী নির্যাতন ও লাঠিচার্যের প্রতিবাদে খালেদা জিয়াসহ অপরপর নেতৃবৃন্দের ফার্মগেটে রাজপথে অবস্থান ধর্মঘট।

২৪ জানুয়ারি ’৯০:

: গণঅভ্যুত্থান দিবসে খালেদা জিয়া গুলিস্তানের জনসভায় এক দফার পুনরাবৃত্ত।

৯ জানুয়ারি ’৯০ :

: নেত্রকোনা বিএনপি আয়োজিত সভায় খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করেছে সোনার বাংলা নাম নিয়ে আর জাতীয় পার্টি করেছে নতুন বাংলা নাম নিয়ে।

১৭ জানুয়ারি ’৯০ :

: উপজেলা নির্বাচন-দ্বিতীয় পর্যায় প্রতিহত করণের প্রচেষ্টা।

২১ জানুয়ারি ’৯০:

: শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের পথে খালেদা জিয়াকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষন। খালেদা জিয়ার উক্তি: হত্যা করে অথবা হত্যার ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না।

২২ জানুয়ারি ’৯০: 

: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নানের স্বৈরাচারীর সঙ্গে সম্পৃক্তকতা এবং নিরপেক্ষতা হারানোর অভিযোগ।

২৬ জানুয়ারি ’৯০ :

: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়ার অবদান স্মরণ। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের আহ্বান।

২৮ জানুয়ারি ’৯০: 

: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের নিরঙ্কুশ জয়লাভ। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুরুপ ফলাফল।

৩১ মার্চ ’৯০: 

: আমান উল্লাহ আমান ছাত্রদলে আহ্বায়ক নিযুক্ত।

০৬ জুন ’৯০ :

: ডাকসু নির্বাচনের ছাত্রদলে ‘আমান-খোকন-আলম’ এর নিরঙ্কুশ জয়লাভ।

২৭ জুন ’৯০ :

: বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অর্থনৈতিক দূরবস্তার জন্য খালেদা জিয়া ওয়ান ম্যান শো’কে দায়ী করেন।

২৫ আগস্ট ’৯০ :

: ডাকসু ঘোষিত স্বৈরাচার বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল আমানসহ ছাত্রনেতাদের পুলিশের বেধড়ক পিটুনি।

২৩ সেপ্টেম্বর ’৯০ :

: সরকারী প্রত্যক্ষ মদদে চট্টগ্রাম ছাত্রদল নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন মিঠুর মৃত্যু।

২৯ সেপ্টেম্বর ’৯০: 

: ডাকসুর সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা।

০১ অক্টোবর ’৯০:

: সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ছাত্র কনভেনশন। উল্লেখ্য ছাত্রদল এ সময় বিপুল বিজয় অর্জন করে। কনভেনশনে প্রকারান্তরে এক দফার পক্ষে ঘোষিত দাবীনামা গৃহিত হয়। আন্দোলন ক্ষেত্রে এটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়।

১০ অক্টোবর ’৯০:

: বায়তুল মোকাররমের সমাবেশে খালেদা জিয়ার ভাষণ মুহূর্তে পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ। লাঠিচার্জে খালেদা জিয়াসহ নেতৃবৃন্দ আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পুলিশ গুলি করে। জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে। ছাত্র নেতা জেহাদ নিহত হয়। ক্লান্ত খালেদা জিয়া জেহাদের লাশ দেখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে ছুটে আসেন।

জেহাদের লাশ এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যঃ

জেহাদের লাশ ক্যাম্পাসে নিয়ে আসলে সাধারণ ছাত্ররা আবেগপূর্ণ হয়ে ওঠে। ছাত্রদের অনৈক্যের কারণেই আন্দোলন সফল হচ্ছে না বলেই সাধারণ ছাত্রদের ধারণা। কোন রকম আলোচনা বা প্রস্তাবনা ছাড়াই সাধারণ ছাত্রদের কণ্ঠে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ধ্বনি শোনা যায়। জেহাদের লাশকে সমানে রেখে প্রকৃত প্রস্তাবেই সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠিত হয়। সর্বমোট ২৩ সংগঠন জেহাদের লাশকে সামনের রেখে শপথ বাক্য উচ্চারণ করে। ডাকসুর নেতৃত্ব গঠিত এই সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যেই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মূল নিয়ামক শক্তির কাজ করে।

১২ অক্টোবর ’৯০ :

: সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহ্বানে অর্ধদিবস হরতাল পালিত। ছাত্র মিছিলে নজিরবিহীন নির্যাতন। আমানসহ ছাত্র নেতৃবৃন্দ গুরুতর আহত।

১২ অক্টোবর ’৯০: 

: পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রতিবাদ সমাবেশ।

১৩ অক্টোবর ’৯০: 

:সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য আহুত দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘট।

পলিটেকনিকে তান্ডবঃ

ছাত্র ঘর্মঘট চলাকালে পলিটেকনিকে পুলিশি নির্যাতনের বিরল নজির হয়ে দাঁড়ায়। ছাত্র, শিক্ষক, অধ্যক্ষ সবাইকে অপমান অপদস্ত করে। এ সময় পলিটেকনিক ছাত্র মুনিরুজ্জামান মুনির মাথায় গুলি লাগে। দ্রুত হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাশ নিয়ে এলে জাতীয় নেতৃবৃন্দ একাত্মতা প্রকাশ করেন। বিকালে লাশ নিয়ে মিছিল বেরুলে পুলিশ হামালা করে। ছাত্ররা শাহবাগ পুলিশ কন্ট্রোল রুমে আগুন লাগিয়ে দেয়।

জেহাদের গ্রামের বাড়িতে খালেদা জিয়া:

এদিন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নবগ্রামে জেহাদের গ্রামের বাড়িতে যান। তার পরিবারকে সান্তনা দেন। উল্লাপাড়ায় খালেদা জিয়ার আগমনে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা অকার্যকরঃ

সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভীত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠন বন্ধ ঘোষণা করেন। তবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ভিসিকে ঘেরাও করে। সিন্ডিকেট জরুরী সভায় সরকারি আদেশকে ৭৩-এর অধ্যাদেশ পরিপন্থী এবং অভিপ্রেত বলে অভিহিত করে।

১৪ অক্টোবর ’৯০:

: মুনির হত্যার প্রতিবাদে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘট।

: গুলিস্তানে অনুষ্ঠিত জনসভায় যে কোন মূল্যে অর্জিত ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান।

: সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘট আন্দোলন। রাজশাহীতে চরম উত্তেজনা।

১৫ অক্টোবর ’৯০:

: ছাত্র হত্যা ও পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে তিন জোট ও জামায়াতে ইসলামীর অর্ধ দিবস হরতাল পালন। পুলিশি নির্যাতন। ভাঙ্গুরা, ময়মনসিংহে ট্রেনে অগ্নিসংযোগ।

: খালেদা জিয়া ঐক্যের প্রশ্নে বলেন কোন শ্লোগানের ঐক্য নয়। এই ঐক্য ছাত্র যুবক জনতার রক্তে গড়ে উঠেছে। কোন শ্লোগান বা বিভ্রান্তিতে ঐক্যে ফাটল ধরবে না।

১৬ অক্টোবর ’৯০ :

: জোট ও বিরোধী দলসমূহ আহুত অর্ধ দিবস হরতাল স্বত:স্ফুর্তভাবে পালিত।

১৭ অক্টোবর ’৯০ :

: শিক্ষা প্রতিষ্ঠনসমূহে (শান্তি শৃংখলা) অধ্যাদেশ-৯০ দাবি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পায়তারা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধে ব্যর্থ।

১৮ অক্টোবর ’৯০: 

: সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে প্রেসক্লাব সম্মুখে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যর সমাবেশ।

১৯ অক্টোবর ’৯০:

: তিন জোট ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহ্বানে সারাদেশে শোক দিবস পালিত।

২০ অক্টোবর ’৯০:

: রাজশাহীসহ সর্বত্র আঞ্চলিক সমাবেশ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মৌন মিছিল।

২১ অক্টোবর ’৯০ :

: বিভিন্ন জোট ও দলের আহ্বানে বিক্ষোভ দিবস পালিত।

২২ অক্টোবর ’৯০:

: সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত।

২৩ অক্টোবর ’৯০:

: জোট ও রাজনৈতিক দলসমূহ আহুত জেলা-উপজেলা ঘেরাও আন্দোলন। তিন শতাধিক আহত।

২৪ অক্টোবর ’৯০ :

: সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যর আহ্বানে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ।

২৫ অক্টোবর ’৯০:

: বন্ধ ঘোষিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবীতে ছাত্র ঐক্যের সমাবেশ।

২৬ অক্টোবর ’৯০:

: সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের পর্যালোচনা সভা।

২৭ অক্টোবর ’৯০: 

: পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী রাজপথ, রেলপথ, পানিপথ অবরোধ কর্মসূচী পালিত।

: অবরোধ চলাকালে রাজপথে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি।

: গুলিস্তান চত্বরে খালেদা জিয়ার ভাষণ। সরকারের কথায় আর দেশ চলছে না বলে মন্তব্য।

২৮ অক্টোবর ’৯০ :

: দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবস পালিত।

২৯ অক্টোবর ’৯০:

: স্কুল খোলা দিনে ক্লাস বর্জন করার কর্মসূচী ঘোষণা।

৩০ অক্টোবর ’৯০ :

: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন কর্তৃক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি (সভা ও সমাবেশ)।

৩১ অক্টোবর ’৯০ :

: বাবরী মসজিদ ভাঙার ঘটনা যাতে অন্য খাতে প্রবাহের চেষ্টা করা না হয় সে জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ।

০১ নভেম্বর ’৯০:

: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার চেষ্টা।

০২ নভেম্বর ’৯০ :

: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত।

০৩ নভেম্বর ’৯০ :

: সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গা দমনের নামে ১৪৪ ধারা ও সান্ধ্য আইন জারি।

০৪ নভেম্বর ’৯০: 

: সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের মিছিল। পুলিশি নির্যাতন।

০৫ নভেম্বর ’৯০ :

: বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের দাবীতে ৭ দলীয় ঐক্যজোট কর্তৃক টিভি ভবন ঘেরাও।

০৬ নভেম্বর ’৯০ :

: ‘এক দফা এক দাবি’ বাস্তবায়নের দাবীতে রাজধানীর বাংলা মোটরে ৭ দলীয় জোটের বিশাল জনসভা।

০৭ নভেম্বর ’৯০ :

: বিএনপির তথা ৭ দলীয় জোটের বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন।

: দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ৭ নভেম্বের চেতনায় সকল পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান।

৮ নভেম্বর ’৯০ :

: বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল প্রতিষ্ঠান না খুলে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে তালা ঝুলবে-এ আহবান নিয়ে রাষ্ট্রপতির সচিবালয় মুখে মিছিল।

৯ নভেম্বর ’৯০:

: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাথে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের বৈঠক।

১০ নভেম্বর ’৯০:

: স্বৈরাচারের পদত্যাগের দাবীতে তিন জোট, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, পেশাজীবি গ্রুপগুলোর আহবানে সর্বাত্মক হরতাল পালিত।

: বেগম খালেদা জিয়া ঐদিন গুলিস্তান চত্ত্বরে আহুত বিশাল জনসভায় বলেন চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত জনগণ রাজপথ ছেড়ে যাবে না।

১১ নভেম্বর'৯০:

: সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশকে অগ্রাহ্য করে ডাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হয়।

: এটা সরকারের বড় ধরনের প্রশাসনিক ও নৈতিক পরাজয় বলে চিহ্নিত।

১২ নভেম্বর ’৯০:

: স্কুল ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস বর্জন।

১৩ নভেম্বর ’৯০

: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে ঢাকায় মৌন মিছিল অনুষ্ঠিত।

১৪ নভেম্বর ’৯০:

: সারাদেশে জেলা-উপজেলা ঘেরাও কর্মসূচির অংশ হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য ঢাকা জেলা প্রশাসনে স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে মিছিল।

: সরকারী পক্ষের সমাবেশ চেষ্টা। আল্লাহ ওয়ালা ভবন প্রাঙ্গনে শাহ মোয়াজ্জেমের আস্ফালন।

১৫ নভেম্বর ’৯০:

: আদমজী থেকে সরকারী সমাবেশে শ্রমিক আনতে গিয়ে ৫ জন নিহত। খালেদা জিয়ার প্রতিবাদ।

১৬ নভেম্বর ’৯০:

: মোহাম্মদপুরে টাউন হলের সামনে জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন-এরশাদের পদত্যাগ এখন সময়ের দাবী।

: শিক্ষক সমাজের তরফ থেকে আন্দোলনকে সহায়তা করার জন্য সম্মিলিত শিক্ষক আন্দোলন গঠিত।

১৭ নভেম্বর ’৯০:

: সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের গণদুশমন দিবস পালিত। গণদুশমন ঘেরাও এর নামে মন্ত্রী পাড়া ঘেরাও করার কর্মসূচী পালিত। অপর পক্ষে সরকার আইন শৃঙ্খলার বাহিনীর উপরও ভাড়াটিয়া গুন্ডা এবং মাস্তান এতে মন্ত্রীদের রক্ষা করার চেষ্টা করে। ছাত্রদের সাথে ঐসব মাস্তানদের সংঘর্ষের অনেক ঘটনা ঘটে।

: দেশের ৮টি যুব সংগঠন ‘যুব সংগ্রাম পরিষদ’ নামে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গড়ে তোলে।

১৮ নভেম্বর ’৯০:

: জাতীয় পার্টির সমর্থক গোষ্ঠী তথা পেশিশক্তির সাথে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ।

১৯ নভেম্বর ’৯০:

: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রুপরেখা ঘোষিত। এই দিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইল ফলক। আন্দোলনরত সকলপক্ষ ও শক্তি একটি অন্তবর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকারের রুপরেখা সম্পর্কে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত পৃথক পৃথকভাবে স্ব স্ব সমাবেশে ঘোষণা করে।

কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ অথচ স্পর্শকাতর বিষয়ে মীমাসিংত হতে হয়। বেগম খালেদা জিয়ার উদারতা এবং সম্মতিতে পৌঁছার জন্য জোরাগিদ ‘অসম্ভব’কে সম্ভব করে তোলে।

ঘোষিত রুপরেখা:

১. হত্যা, ক্যু, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের ধারায় প্রতিষ্ঠিত স্বৈরাচারী এরশাদ ও তার সরকারের শাসনের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকল্পে।

ক) সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রেখে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী তথা সংবিধানের ৫১ অনুচ্ছেদের (৩) ধারা এবং ৫৫ অনুচ্ছেদের (ক)১ ধারা এবং ৫১ অনুচ্ছেদের ৩নং ধারা অনুসারে এরশাদ ও তার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনরত তিন জোটের নিকট গ্রহণযোগ্য একজন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ করবেন। বর্তমান সরকার ও সংসদ বাতিল করে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করে উক্ত উপ-রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।

খ) এই পদ্ধতিতে উক্ত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি অন্তবর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে যার মূল দায়িত্ব হবে তিন মাসের মধ্যে একটি সার্বভৌম জাতীয় সংসদের অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা।

২.ক) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ হবেন অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোন রাজনৈতিক দলের অনুসারী বা দলের সাথে সম্পৃক্ত হবেন না অর্থাৎ তিনি রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি বা সংসদ সদস্য পদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেন না। তার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন মন্ত্রী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না।

খ) অন্তর্বতীকালীন এই সরকার শুধুমাত্র প্রশাসনের দৈনন্দিন নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনাসহ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন পুর্ণগঠন ও নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম ও দায়িত্ব পুনবিন্যাস করবেন।

গ) ভোটারগণ যাতে করে নিজ ইচ্ছা ও বিবেক অনুযায়ী প্রভাবমুক্ত ও স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই আস্থা পুনঃস্থাপন এবং তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।

ঘ) গণ-প্রচার মাধ্যমকে পরিপূর্ণভাবে নিরপেক্ষ রাখার উদ্দেশ্যে রেডিও, টেলিভিশনসহ সকল রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমকে স্বাধীন ও স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থায় পরিণত করতে হবে এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি সকল রাজনৈতিক দলকে প্রচার-প্রচারণায় অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

৩. অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সার্বভৌম সংসদের নিকট অন্তর্বতীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন এবং এই সংসদের নিকট সরকার জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন।

চলবে…………অপেক্ষায় থাকুন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!