DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

চট্টগ্রাম বন্দর বাচাও আন্দোলনঃ হালে পানি পাচ্ছেন না মহিউদ্দিন চৌধুরী

মহিউদ্দিনচট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নিয়ে ফের আন্দোলনে নেমেছেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তবে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব পাওয়া দেশীয় প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন কর্মসূচি হালে পানি পাচ্ছে না। যদিও ছিয়ানব্বই সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিদেশি প্রতিষ্ঠান এসএসএ’র বিরুদ্ধে তার আন্দোলন সফল হয়েছিল।

গত কয়েক মাস ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইস্যুতে বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক কর্মসূচি, হুমকি, আলটিমেটামের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও কর্ণপাত করছে না সরকার। আন্দোলনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও নৌ পরিবহন মন্ত্রীর কাছে একাধিক বার চিঠি দিয়েও দাবি আদায়ে এখনো পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন সরকার দলীয় প্রভাবশালী এ নেতা।

বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সাইফ পাওয়াটেককে মাফিয়া চক্র আখ্যা দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী, ষড়যন্ত্রকারী বলে অভিযোগ করলেও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মানার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।

সাইফ পাওয়ারটেকবিরোধী আন্দোলনের প্রথম ধাপে চিঠি চালাচালি ও বিবৃতিতে সফলতার মুখ না দেখায় ‘বন্দর রক্ষা পরিষদের’ প্রধান উপদেষ্টা মহিউদ্দিন চৌধুরী গত মাস থেকে দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলন শুরু করেন। এতে নানা কর্মসূচি, আলটিমেটাম দিয়েও দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছেন সাবেক এ মেয়র।

এরপর সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের লালদীঘির মাঠে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন তিনি। সেই সমাবেশ থেকে আন্দোলনের মাত্রা বাড়িয়ে তৃতীয় ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন।

বন্দর রক্ষা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, নৌ পরিবহন মন্ত্রী, নৌপরিবহন সচিব, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে সাইফ পাওয়ারটেকের ‘দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ’ করে চিঠি দেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

গত ৫ আগস্ট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সমাবেশে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। বর্তমান সরকার দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন কার্যকর করতে যেখানে তৎপর সেখানে বন্দরে তা অনুপস্থিত কেন? এর পেছনে কারা জড়িত তা দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তবে সরকারি দলের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, এমনকি নিজ দলের সমর্থন নিয়ে আন্দোলন করলেও তার দাবি মানছে না নিজ দল আওয়ামী লীগ পরিচালিত সরকারই।

‘বন্দর বাঁচাও, সাইফ পাওয়ারটেক হটাও’ স্লোগানে বন্দর রক্ষা পরিষদের ব্যানারে এর প্রধান উপদেষ্টা মহিউদ্দিন চৌধুরী ২৪ আগস্ট নগরীর বিভিন্ন স্থানে পথসভা ও সাইফ পাওয়ারটেক হটাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ করেন।

এর একদিন পর ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সাইফ পাওয়ার টেকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। এসময় সরকারের কাছে সাইফ পাওয়ারটেককে কালো তালিকাভুক্ত করার জোর দাবি জানান তিনি।

গত ২৭ আগস্ট বন্দর ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বন্দর চেয়ারম্যানসহ সাইফ পাওয়ারটেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন মহিউদ্দিন। এমনকি বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করাসহ বিভিন্ন হুমকি দেন।

এমনকি ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর ‘বন্দর রক্ষা পরিষদ’ এর আন্দোলনে নগর আওয়ামী লীগের সর্মথন আদায় করেও নেন।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনের কালো ব্যাচ ধারণ কর্মসূচি পালন করে মহিউদ্দিনের চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘বন্দর রক্ষা পরিষদ’। এসময় সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের ইকুইপমেন্টস ক্রয় প্রক্রিয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানছে না। তারা মাফিয়াচক্র সাইফ পাওয়ারটেকের সাথে যোগসাজশ করে বন্দরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বন্দর চেয়ারম্যানসহ সাত কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে এই অপকর্মে। তাদের প্রশয় দিয়ে, লালন পালন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ মহাঅন্যায় করছে।’

এসময় তিনি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বন্দরের প্রকৃত চিত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে অনুরোধও জানান।

সর্বশেষ, ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ গেটে দিনভর অনশন কর্মসূচি পালন করে বন্দর রক্ষা পরিষদ। সকাল ১০টায় অনশনের শুরুতে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানতে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষমতা এককভাবে মাফিয়া চক্রের এজেন্ট লাইসেন্সবিহীন ভূইফোঁড় প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আশীর্বাদপুষ্ট এসএসএ’র হাতে বন্দরকে তুলে দেয়ার চেষ্টা যেভাবে নসাৎ করেছি, ঠিক সেভাবেই সাইফ পাওয়ারটেককে হটিয়ে বন্দরকে রক্ষা করবো। বন্দর সাইফ পাওয়ার টেকের হয়ে পাকিস্তানি এজেন্টরা ঢুকে পড়েছে। তাদের তিনজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। এসব কাজে সাইফ পাওয়ার টেককে যারা সহযোগিতা করছে তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’

তবে ‘লাইসেন্সবিহীন ভূইফোঁড় প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের’ বিরুদ্ধে এত আন্দোলন করেও কেন দাবি আদায় করতে পারছেন না মহিউদ্দিন চৌধুরী। এ প্রশ্নের জবাবে কে তিনি বলেন, ‘মাফিয়া চক্র, ডাকাত সাইফ পাওয়ারটেকের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে, সেটি চলবে। আন্দোলনের প্রথম ধাপ, দ্বিতীয় ধাপ শেষ হওয়ার পর তৃতীয় ধাপে লালদীঘির সমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

সরকারি দলের নেতা হলেও সরকার কেন আপনার দাবি মানছে না এমন প্রশ্নে এই সাবেক মেয়র বলেন, ‘অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার আন্দোলন আমি চালিয়ে যাচ্ছি। এখন সরকার কেন মানছে না সেটা সরকারের বিষয়।’

তবে বন্দরের সকল বিধি বিধান মেনেই বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের এমডি তরফদার রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজে যদি কোনো ত্রুটি কিংবা অনিয়ম হতো তাহলে বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সরকার নিশ্চিয় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত। এখন যেখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারীরা কোনো কথা বলছে না, মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো বন্দর সংশ্লিষ্ট নন এমন এক ব্যক্তির আন্দোলন নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!