DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ভারতীয় শাখা খোলার ঘোষণা জাওয়াহিরির, ভারতে উচ্চ সতর্কতাঃ আল-কায়েদার নিশানায় বাংলাদেশও

image_944_140490আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার নজর পড়েছে এবার ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে। এই লক্ষ্যে আল-কায়েদার ভারতীয় শাখা খোলার ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি। নিশানায় আছে বাংলাদেশেরও নাম।

 

বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বুধবার অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওবার্তায় এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেন আল-কায়েদার প্রধান। এই ঘোষণার পরই ভারতজুড়ে হাই এলার্ট বা উচ্চ সতর্কতা জারির ঘোষণা দেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।



৫৫ মিনিটের ওই ভিডিওবার্তায় আরবি ও উর্দু ভাষার মিশ্রণে জাওয়াহিরি বলেন, এই পদক্ষেপ ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী আইনের প্রসার ও জিহাদের পতাকা সমুন্নত রাখবে।



ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠাকে মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং ভারতের আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ, জম্মু ও কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্য খুশির সংবাদ বলে অভিহিত করেছেন জাওয়াহিরি। তিনি উল্লেখ করেন, আল-কায়েদার নতুন এই শাখা অন্যায় ও অবিচার থেকে মুসলমানদের উদ্ধার করবে।

আল-কায়েদার প্রধান বলেন, অঞ্চলটির (উপমহাদেশ) মুসলমান জনগোষ্ঠীকে বিভক্তকারী কৃত্রিম সীমান্ত নবগঠিত বাহিনী ভেঙে দেবে। বর্তমানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে আল-কায়েদা সক্রিয় আছে।



বার্তায় তিনি জানান, ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে 'জিহাদের পতাকা' তুলে ধরতেই এই শাখার সূচনা। একই সঙ্গে আফগানিস্তানের পলাতক তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের প্রতি তার বিশ্বস্ততা বজায় থাকবে বলেও জানিয়েছেন জাওয়াহিরি।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থানে শঙ্কিত হয়েই জাওয়ারির এই পদক্ষেপ। এই ঘোষণার কথা প্রকাশ্যে আসার পর ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) দেশের সমস্ত থানাকে সতর্ক করে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ গোয়েন্দা বিভাগকে ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি এর উৎস সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেছেন।



ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর ক্রমেই প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছিল আল-কায়দা। জীবনের শেষ কয়েক বছর মূল সংগঠনের কাজ থেকে দূরে থাকলেও আল-কায়েদা ও তাদের ছাতার তলায় থাকা অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছে ওসামার প্রতীকী ভূমিকা ও অনুপ্রেরণা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

কিন্তু আল-কায়দা বা অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছে ওসামার সহযোগী (দলে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ) মিসরের চিকিৎসক নেতা আল জাওয়ারির ছবি তেমন উজ্জ্বল নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে পরবর্তী নেতা হিসেবে জাওয়ারির ভূমিকার প্রবল সমালোচনা হচ্ছিল জঙ্গিমহলে। পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর।

 



ইরাকে মার্কিন সেনার অবস্থানের সময়ে সেখানে আল-কায়েদার শাখা তৈরি হয়। এর এক নেতা ছিলেন আবু বকর আল-বাগদাদি। তিনি মার্কিন সেনার হাতে ধরা পড়ে কয়েক বছর গুয়ানতানামো বে'তে বন্দি ছিলেন। ২০০৯-এ মুক্তি পাওয়ার পরে ইরাকে নতুন করে আল-কায়দার সংগঠন গড়ে তুলতে শুরু করেন আল-বাগদাদি। এখানেই তার সঙ্গে আল-কায়দার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরোধ শুরু হয়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এই বিরোধ প্রবল হয়। আইএসয়ের নৃশংস কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে জাওয়াহিরিসহ আল-কায়েদার শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের সমালোচনা করতে শুরু করেন। ফলে আইএসয়ের সঙ্গে আল-কায়েদার সম্পর্কই শুধু ছিন্ন হয় না, সিরিয়ার কয়েকটি জায়গায় দু'দলের জঙ্গিরা সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়েন।

 



জেহাদের বিষয়ে আল-কায়েদার 'নরম মনোভাব'-এর নিন্দা করে আইএস তাদের থেকে সরে আসে। এরপর সিরিয়ার পূর্ব ও ইরাকের পশ্চিম দিকের একটি বড় অংশ আইএসয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সেখানে ইসলামিক রাষ্ট্র স্থাপনের কথা ঘোষণা করে নিজেদের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদিকে খলিফা পদে মনোনীত করে আইএস। শুধু সিরিয়া ও ইরাক নয়, এর মধ্যেই আফগান জঙ্গিদের একাংশও ইসলামিক স্টেটের মতাদর্শের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে। এই নিয়ে পাক-আফগান সীমান্তের দুর্গম আদিবাসী অঞ্চলে প্রচারও চলছে বলে জানা গিয়েছে।

 



এর পরেই আল জাওয়াহিরির ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসে। ভিডিওতে মিয়ানমার, বাংলাদেশ, আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ ও কাশ্মিরের মুসলমানদের ওপর অবিচার ও শোষণ থেকে মুক্ত করার জন্য 'আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট' স্থাপনের কথা জানান জাওয়ারি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মধ্যে ভারত থেকে বেশ কিছু যুবক আইএস যোগ দিয়ে সিরিয়া ও ইরাকে যুদ্ধ করছে। কয়েক জন প্রাণও হারিয়েছে। আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ ও কাশ্মিরের মতো সামপ্রদায়িক দিক থেকে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকার যুবকদের নিজেদের দলে টানতে আল জাওয়াহিরির এই পদক্ষেপ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। জাওয়াহিরির দাবি, জেহাদের পতাকা তুলে এই অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সীমানা মুছে দিয়ে মুসলিমদের এক করার কাজ করবে আল-কায়েদার এই নতুন শাখা। মুসলিমরা ভারতের জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ হলেও (প্রায় ১৮ কোটি) তা বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম। তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে গুরুত্ব হারালেও পাক-আফগান সীমানায় এখনো আল-কায়েদার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। ফলে বিষয়টিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত সরকার।

 



ভিডিওটিতে আইএস নেতৃত্বের প্রতি বার্তাও রয়েছে। নিজেদের জেহাদি মনে করলে কোনো জঙ্গি সংগঠনকে রাষ্ট্র স্থাপন ও পরিচালনা করার মতো কাজ থেকে সরে আসা উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি। আল-কায়েদার নতুন শাখাকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপরে অত্যাচার চালাতেও তিনি বারণ করেছেন। একই সঙ্গে অন্য জেহাদিদের নিন্দা না করে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলোকে একই সঙ্গে কাজ করার ডাকও দিয়েছেন। এই তিনটি বিষয়ে আইএসের বিরুদ্ধে বারে বারে অভিযোগ উঠেছে। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!