DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

মোদি সরকারের ১০০ দিনঃ বদলায়নি ভারতের বাংলাদেশ নীতি

images3ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্বের ১০০ দিনের শাসন ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বৈদেশিক নীতি। এছাড়া প্রথম ১০০ দিনে মোদীর জাপান সফরে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে ইন্ডিয়ার আগ্রহের বিষয়টি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কে আসেনি বিশেষ কোন পরিবর্তন।

যদিও মোদীর ক্ষমতাগ্রহণের ফলে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া সম্পর্কে বড় ধরণের পরিবর্তন আসার ধারণা করছিলেন বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিশ্লেষকরা। আর এই পরিবর্তনের বিষয়টি আলোচনায় আসে মোদীর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের দিন থেকেই। কারণ মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত সবকয়টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা উপস্থিত থাকলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেননি। তার এই অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী অন্য একটি দেশে সফরে যাওয়ার বিষয়টি আগে থেকেই ধার্য্য করা আছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে দেখছেন অন্যভাবে। তারা বলছেন নির্বাচনী প্রচারণার সময় মোদী বাংলাদেশ বিষয়ে এমন সব মন্তব্য করেছেন যা শেখ হাসিনাকে মোদীর এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যেতে অনুৎসাহী করেছে। কেননা আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার সময় মোদী ইন্ডিয়াতে থাকা সকল অবৈধ বাংলাদেশীদেরকে বাক্স-পেটরা নিয়ে তৈরী থাকার জন্য বলেছেন। মোদী ক্ষমতায় আসলে এদেরকে বের করে দেবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। এমনকি ঐ সময়ে অন্য দলগুলো বাংলাদেশ ইস্যুকে কেন্দ্র করে মোদীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার অভিযোগও তুলেন।

কিন্তু বাস্তবিক দিক বিবেচনা করে মোদীর ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিন পর বাংলাদেশ বিষয়ে ইন্ডিয়া সরকারের অবস্থানের বিশেষ কোন পরিবর্তন আসেনি। কংগ্রেসের মতোই বিজেপি সরকারও বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট চুক্তিগুলো সাক্ষর করেনি।


সম্প্রতি ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে সর্বপ্রথমেই বাংলাদেশ সফর করেছেন। ওই সফরে তিস্তাচুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি হতে পারে, এমন আশা করছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হয়নি কিছুই। বরং সুষমা স্বরাজের সফরে প্রাধান্য পায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ইস্যুগুলো।

বরাবরের মতোই ভূরাজনীতির বিবেচনায় বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে উপস্থাপন করে সরকারকে চাপে রেখেছে ইন্ডিয়া। ধারাবাহিকভাবে ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশ হচ্ছে ইন্ডিয়াবিরোধীদের স্বর্গরাজ্য। যদিও প্রতিবারই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই দাবির বিরোধীতা করা হয়েছে। এই ইস্যুটিকে কেন্দ্র করেই বছরের পর বছর বাংলাদেশ ইন্ডিয়া সম্পর্কে উত্থান পতন দেখা গেছে। এছাড়া তিস্তা চুক্তি ও দু’দেশের মধ্যকার সীমানা চুক্তিও দু’দেশের সম্পর্কের উত্থান পতনের বিষয় হিসেবেই থেকে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রধান ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ঘোর বিরোধীতার মুখে ইন্ডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সরকার প্রাথমিকভাবে এই দুই চুক্তি স্বাক্ষর করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ওই ব্যর্থতার উত্তরাধিকারই বয়ে চলছেন মোদী।


সুষমা স্বরাজ তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকালে বলেছিলেন, ‘আমরা তিস্তা চুক্তির বিষয়ে একমত হওয়ার চেষ্টা করছি। এমনকি মমতা ব্যানার্জীও এ বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন’। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিস্তা নদীর ইন্ডিয়ার অংশে বাধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ছেই।

এত কিছুর মধ্যেই ঘটেছে কিছু ইতিবাচক ঘটনাও। আকস্মিকভবেই মোদী সরকার বাংলাদেশ–ইন্ডিয়ার মধ্যকার ভিসা ব্যবস্থায়ও সহজতর করেছে। এমনকি সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের ঠিক কদিন আগেই ১৮ বছরের নীচে এবং ৬৫ বছরের উপরে বাংলাদেশীদের জন্য কোনোরকম ভিসা ছাড়াই ইন্ডিয়ার সফরের সুযোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও ইন্ডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বিষয়টি নাকোচ করে দিয়েছে। এছাড়া ত্রিপুরার পল্টনা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে ইন্ডিয়া। তাছাড়া চলতি অর্থবছরেই বাংলাদেশকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ৬০ কোটি রুপি সহযোগিতার কথাও ঘোষণা দিয়েছেন সুষমা স্বরাজ। সুষমা বলেন, আমরা বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া রক্তের সম্পর্কে জড়িত, আমাদের গন্তব্য এক অপরের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি আরও বলেন, ইন্ডিয়া সবসময় বাংলাদেশের পাশে আছে।

এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে ইন্ডিয়ার সাথে বাংলাদেশের সাথে অনেকগুলো বাণিজ্যিক, সামাজিক চুক্তি হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে দু’দেশকেই বিষয়গুলোতে সমান আগ্রহী দেখা গেছে। এজন্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন এ ইঙ্গিতগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে দু’দেশই নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরীতে আগ্রহী এবং চলমান ভালো সম্পর্কের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।

এতকিছুর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাড়ছে ইন্ডিয়ার প্রভাব। বর্তমান সরকারের মেয়াদকাল, জামায়াত-বিএনপি ইস্যু, বাংলাদেশ সরকারের সাথে পশ্চিমাবিশ্বের ইত্যাদি বিষয়ে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার চেষ্টা করছে ইন্ডিয়ার সরকার। বর্তমান সরকারের মন্ত্রীসভা থেকে জাতীয় পার্টির সদস্যদের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে জোড় তৎপরতা চালাচ্ছে ইন্ডিয়া। ফলে, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ইন্ডিয়ার যেমন ইতিবাচক মনোভাবও আছে, তেমনি নেতিবাচক মনোবৃত্তিও গাড় হচ্ছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!