DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সীমান্তে প্রতিরক্ষাবলয় সৃষ্টি করছে মিয়ানমারঃ বাংলাদেশের করনীয় কি?

image_85354_0দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ রিপোর্টঃ বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে ব্যাপক সমর প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া সমরসজ্জার প্রস্তুতির লক্ষ্যে আরাকান রাজ্যে পরিত্যক্ত বিমানবন্দরসহ চারটি স্থানে যুদ্ধবিমানের ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত।



মিয়ানমারের সমরসজ্জার উদ্দেশ্য এখনো অস্পষ্ট। তবে গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের মংডুর টাউনশিপে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) সঙ্গে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিজিপির ডিরেক্টর জেনারেল বিগ্রেডিয়ার থিন কো কো আরাকানে সৃষ্ট জাতিগত দাঙ্গার জের ধরে সম্প্রতি সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনার জন্য রোহিঙ্গা সলিডারি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যদের দমন করতে সমর শক্তি বাড়ানো কথা স্বীকার করেন।



বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে প্রায় ৬৩ কিলোমিটার জলসীমা। বাকি ২০৮ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে দুর্গম পাহাড়ি অরণ্য ও বিচ্ছিন্ন জনপদ। এর সবটাই প্রতিবেশী দেশটির আরাকান রাজ্য। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে তুমব্রু যোগবইন্যা থেকে থানচির বড় মোদক পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সীমান্তে প্রতিরক্ষাবলয় তৈরি করছে মিয়ানমার।



মিয়ানমার সীমান্ত আরকান রাজ্যে এনজিও কর্মরর্ত ও পেশাজীবী সুত্র জানায়, সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে (অফিসিয়াল নাম টাটমাডো দ্য মিলিটারি) নিউকিয়ার ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ বাহিনীর শাখায় রয়েছে আর্মি, নেভি ও এয়ার ফোর্স। বাংলাদেশ সীমান্তে দায়িত্বরত এই বাহিনীর নাম দিয়েছে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)।



বিদেশে গোপনে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেনাবাহিনী থেকে  সৈনিক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে সম্প্রতি গড়ে তোলা হয়েছে নিউকিয়ার ব্যাটালিয়ন। প্রথম প্রথম এই বাহিনী কার্যক্রম ছিল সেদেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তে।



সম্প্রতি আরাকানের অভ্যন্তরে দুই বছর আগে সৃষ্ট জাতিগত দাঙ্গার জের ধরে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলার ঘটনা প্রতিরোধ করতে নিউকিয়ার ব্যাটালিয়ন কার্যক্রম শুরু করেছে। বঙ্গোপসাগর তীরের আকিয়াবের সিটওয়ে বিমানবন্দরকে সেদেশের অন্যতম বড় এয়ারফোর্স ঘাঁটি বলে বিবেচনা করা হয়। যদিও সিটওয়ের কিয়াকপপ্র এবং থান্ডওয়েতে এয়ারফোর্স ঘাঁটির নিজস্ব দুটি স্বতন্ত্র রানওয়ে রয়েছে।



জানা গেছে, এগুলোকে মিগ-২৯সহ অন্যান্য আধুনিক জঙ্গি ও বৃহদাকার বোমারু বিমান রাখা ও ওঠানামার উপযোগী করা হয়েছে।  সাথে বসানো হয়েছে সামরিক হেলিপ্যাড। এছাড়াও সিটওয়ে বিমানবন্দরে এরই মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে শক্তিশালী রাডার।



একটি সূত্র দাবি করেছে, বাংলাদেশের কুমিল্লা কিংবা বরিশালের যেকোনো স্থান থেকে আকাশে কোনো বিমান উঠলেই মিয়ানমারের এ রাডারে ধরা পড়বে। টেকনাফের শাহপরী দ্বীপের মাত্র ১৮ কিলোমিটার পূর্বে আরকানের বুচিডং শহরের উত্তর-পশ্চিমের লউ-এ ডং বিমান ঘাঁটিটি বিমান বাহিনীর নিজস্ব সুবিশাল



আধুনিক বিমান ঘাঁটি হিসেবে তৈরি করেছে। আকাশপথে বাংলাদেশ সীমান্তের মাত্র ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যেই এর অবস্থান। ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও আট থেকে নয় কিলোমিটার চওড়া এ বিমান ঘাঁটি নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারি নিশ্চিত করে। এর চারপাশে কমপক্ষে ২০টি দূরপাল্লার কামান বসিয়ে সার্বক্ষণিক পাহারা দেয়া হচ্ছে। কোনো বেসামরিক ব্যক্তির কাছাকাছি যাওয়াও নিষেধ।



অপরদিকে আকিয়াব তথা সিটওয়ের বিমান ঘাঁটিটি লউ-এ ডং বিমান বন্দরসংলগ্ন এলাকায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও পুরনো সেসনা ধরনের ক্ষুদ্র বিমান ওঠানামার উপযোগী সাহেববাজার ও দরগার বিল ও নাইচাদং এয়ারস্ট্রিপকেও সংস্কার করে মিগ-২৯ এর মতো যুদ্ধজাহাজের ব্যবহার উপযোগী রানওয়ে তৈরির কাজ চলছে।



উখিয়া (কক্সবাজার) থানার ৪০ নম্বর সীমান্ত পিলার থেকে সোজা পূর্ব দিকে আকাশপথে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে দরগার বিল এয়ারস্ট্রিপ।



তবে মিয়ানমারের এ সমরসজ্জার উদ্দেশ্য কি- তা এখনো অস্পষ্ট। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।



কেউ বলছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গার প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে চাচ্ছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারে ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ করাটাই আসল উদ্দেশ্য। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সীমান্তে প্রতিরক্ষাবলয় তৈরি করছে মিয়ানমার।



গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের মংডুর টাউনশিপে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) সঙ্গে  অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিজিপির ডিরেক্টর জেনারেল বিগ্রেডিয়ার পিন কোকো আরাকান রাজ্যে সৃষ্ট জাতিগত দাঙ্গার জের ধরে সম্প্রতি সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনার জন্য রোহিঙ্গা সলিডারি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যদের দমন করতে সমর শক্তি বাড়ানো কথা স্বীকার করেন।



এছাড়া নব গঠিত মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) জনবল কম থাকায় তাদেরকে সহযোগিতা করতে সীমান্তে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারের সাথে আরো ৪টি দেশের সীমান্তে তাদের সামরিক মোতায়ানের কথা স্বীকার করেন।



মিয়ানমার থেকে ফিরে বিজিবি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদানকারী কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খন্দকার ফরিদ হাসান টেকনাফে সাংবাদিকদের এইসব তথ্য জানিয়েছেন।

 

বৈঠকে বিজিপির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সলিডারি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যদের গ্রেফতারে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব দেয়া হয়। জবাবে বিজিবি বলেছে, এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানানো হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!