DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

র‌্যাবের সমালোচনার আড়ালে কি আসলে বিতর্কিত করা হচ্ছে সেনাবাহিনীকে ?

images (3)ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ    ইদানিং সরকার বাদে প্রায় সকল মহল থেকে দাবি তোলা হচ্ছে, র‌্যাব থেকে সেনা সদস্যদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হউক। শুনতে নিষ্পাপ এই দাবি বাস্তবায়ন হলে, অযথাই সেনাবাহিনীর ঘাড়ে চাপান হবে পুরো সমাজের কলঙ্ক। এছাড়া, এই দাবি বিশ্লেষণ করলে, সেনাবাহিনীর মতো সাংবিধানিক সংস্থাকে রাজনীতির গুটি-চালাচালির অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করার অতীত অপচেষ্টার নবরূপটিও ধরা পড়বে।

র‌্যাব থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেওয়ার দাবি তুলে রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, “র‌্যাবকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় তিন সেনা কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমরা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল দেখতে চাই। এরকম পরিস্থিতিতে র‌্যাবের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। সেনাবাহিনীর উচিৎ হবে, ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল রাখার স্বার্থে র‌্যাব থেকে তাদের সব কর্মকর্তা প্রত্যাহার করে নেয়া।”

downloadসেনাবাহিনীর প্রতি রাজনীতিবিদদের এই প্রকাশ্য আবেদনে উপকারের বদলে একটি অবমাননাকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে পারে বাহিনীটি। বক্তব্যটির নিগুঢ় অর্থ হচ্ছে, র‌্যাবের আড়ালে আসলে সেনাবাহিনীকে দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা হচ্ছে। আর, এতেই ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বাহিনীটির। র‌্যাব ‘রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হলেই, সে খেলার গুটি হয়ে যায় না সেনাবাহিনী। তবুও কেন সেনাবাহিনীকে রাজনীতির সাথে জড়ানোর চেষ্টা?

আইনের আওতায় র‌্যাব থেকে সেনা সদস্য প্রত্যাহারের প্রশ্নে কিছু করার নাই সেনাবাহিনীর। ফলে, সেনাবাহিনীর প্রতি এই দাবি তুললেও পরিস্থিতির কোন হেরফের হবে না। কিন্তু এইভাবে প্রচার চালালে, জনগণের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রের কথা বলার পরও কেন কোন পদক্ষেপ নিল না সেনাবাহিনী? আর, এই প্রশ্নটিই দীর্ঘমেয়াদে জনমনে সেনাবাহিনীকে নিয়ে সৃষ্টি করবে নানান সমালোচনা।

images (5)র‌্যাবের কর্মকাণ্ডের দায়িত্বও কোনভাবেই সেনাবাহিনীর কাঁধে বর্তায় না। সেনাবাহিনী, র‌্যাবে থেকেও পৃথক আইনী কাঠামর মধ্যে থেকেই রাজনীতি নিরপেক্ষভাবে দেশের জন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু,র‌্যাব আইন না ভেঙ্গেও রাজনীতির হাতিয়ারে পরিণত হয়ে যেতে পারে। একারণেই, র‌্যাবে সেনাসদস্য থাকুক আর না থাকুক, বাহিনীটির কোন কলঙ্কের দাগ সেনাবাহিনীর উপর পড়বে না। এমনকি, র‌্যাব যদি ‘রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার’ হয়ও তাতে সেনাবাহিনীর পৃথকভাবে কিছুই করার থাকে না। র‌্যাবে কর্মরত একজন সেনা কর্মকর্তা এই বাহিনীটিকেই প্রতিনিধিত্ব করেন, সেনাবাহিনীকে নয়। এই বাস্তবতা সত্ত্বেও দাবি করা হচ্ছে, র‌্যাবকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হলে সেনাবাহিনীরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। এ চেষ্টা মূলত গায়ে পড়ে সেনাবাহিনীকে দেশের রাজনীতিতে টেনে আনার চেষ্টার একটি উদাহরণমাত্র।

images (4)তবে, র‌্যাবে কর্মরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা সিভিল আইন সম্পর্কে অনেক বেশি যথেষ্ট অজ্ঞাত থাকে বলেও সমালোচনা আছে। এই সমালোচনা থেকে বেরিয়ে আসার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকেই নিতে হবে।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে আজ যত সমালোচনা, এর দায় পুরো সমাজেরই। আইনের ভাষায় অপরাধের মুখোমুখি হওয়ার যোগ্যতা আমাদের রাজনীতিবিদসহ সমাজনেতাদের নাই। একারণেই, আইন-বহির্ভূতভাবে অপরাধীকে দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ক্রসফায়ারকে নিরবে রাষ্ট্রনেতারা সমর্থন দিয়ে গেছেন বছরের পর বছর  আর সর্বোচ্চ সফলতার সাথে রাষ্ট্রনেতাদের এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করাই হয়ে দাঁড়িয়েছে র‌্যাবের দায়িত্ব।

আর, এই কাজ করতে গিয়ে র‌্যাব যত কলঙ্ক কুড়িয়েছে তার সমস্ত দায় রাষ্ট্র ও সমাজ নায়কদের। কোন আইনের নয়, কোন বাহিনীর নয়। তাই আইন সংস্কারে র‌্যাব-সমস্যা থেকে মুক্তি নাই। এছাড়া, র‌্যাব সমস্যার সাথে কোন বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ারও সম্পর্ক নাই। তবুও চলছে, সেনাবাহিনীকে দেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে ফেলার রাজনীতি।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে একই চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। নতুন করে, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের পর সে চেষ্টা নতুন করে শুরু হয়েছে মাত্র।তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান কল্পে সেনাবাহিনী সহ দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহন করতঃ পরিষ্কার নীতিমালার ভিত্তিতে এধরনের বাহিনী পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!