DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনে পদে পদে সমস্যাঃ নেতাকর্মীরা হতাশ-ক্ষুব্ধ

বিএনপি-লোগোক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারা দেশে বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা যেন হঠাৎ থমকে গেছে।

সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ দলের কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হওয়া সত্ত্বেও নতুন কমিটি গঠনে কোনো তোড়জোড় নেই। যে কয়টি এলাকায় পুরনো কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেখানেও দেখা দিয়েছে নানা বিপত্তি।

 

নতুন কমিটি গঠন না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে পছন্দের ব্যক্তি স্থান না পাওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। বিএনপি ও শ্রমিক দলের কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নেয়ারও একাধিক ঘটনা ঘটেছে। দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে একের পর এক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ধীরে চল নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, এ প্রক্রিয়া একটু থমকে গেছে এ কথা ঠিক। এখন দলের নেতাদের মধ্যে কে ভালো, কে মন্দ তা বিচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এত বড় দলের নেতৃত্বে আসার জন্য প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। ঢাকাসহ সারা দেশে একই সমস্যা রয়েছে। তবে খুব শিগগিরই এ সমস্যা থেকে দল উত্তীর্ণ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলকে আন্দোলনের উপযোগী করতে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য বর্তমান নেতাদের দায়ী করে দ্রুত তরুণ ও যোগ্য নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া।

 

ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের জন্য বেশ তৎপরতা দেখা গেলেও তার বাস্তবায়ন আজও হয়নি। কমিটিতে স্থান পেতে কয়েকটি গ্রুপের সক্রিয় তৎপরতায় বেকায়দায় পড়েছে দলটির হাইকমান্ড। শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে এ কমিটির একটি খসড়া তৈরি করা হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আশঙ্কায় তা প্রকাশে দলটি সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে।

 

ঢাকা মহানগরের মতো জেলা কমিটিগুলো গঠন নিয়েও বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। সূত্রমতে, সারা দেশে দলটির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মেয়াদ বেশ কয়েক বছর আগেই শেষ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি অনুযায়ী, সারা দেশে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে।

 

সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী কয়েকদিনের ব্যবধানে ১৩টি জেলার কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করে দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এক থেকে দেড় মাস সময় দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দেয়া হয় কেন্দ্র থেকে। তবে এসব কমিটি নিয়েও সন্তুষ্ট নন সংশ্লিষ্ট সবাই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দেয়ার অভিযোগে বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। আর যথাসময়ে এসব কাউন্সিল অনুষ্ঠানসহ বাকি জেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

 

এতে কমিটি পুনর্গঠনের মাধ্যমে দল শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে কোন্দল ও হতাশা বাড়তে পারে বলেও দলীয় সূত্রের আশঙ্কা। ১২ এপ্রিল ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের কাউন্সিলে কমিটি গঠন নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। একইভাবে ১৯ ও ২০ এপ্রিল সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হলেও কমিটি গঠন নিয়ে একই ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে কিছুদিন পর ঘোষণা করা হয় কমিটি।

 

২১ এপ্রিল বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে কমিটি গঠন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা জেলা নেতাদের বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই হট্টগোল ও চেয়ার ছোড়াছুড়িতে জড়িয়ে পড়েন দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এ সময় উভয় পক্ষের ২৫ নেতাকর্মী আহত হন। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার নেতাদের বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়।

 

পরে ২৫ এপ্রিল অবশ্য ওই বৈঠকের মাধ্যমে পুরনো কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। ঢাকায় বসে শরীয়তপুর জেলা যুবদলের কমিটি গঠন করার অভিযোগ এনে সম্প্রতি যৌথভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। একইভাবে চট্টগ্রাম জেলা উত্তর, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

কমিটি গঠন নিয়ে নানা জটিলতার কারণে চলতি মাসে এ তৎপরতা প্রায় থেমে গেছে। খুলনা, ফেনী, মৌলভীবাজারসহ কয়েকটি জেলার কমিটি ভেঙে দেয়ার জন্য বৈঠক আহ্বান করেও পরে তা বাতিল করেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একইভাবে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি পুনর্গঠন খুব তাড়াতাড়ি হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ধীরগতিতে হলেও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আপাতত কাউন্সিল না হলেও এ কমিটিতে বড় ধরনের রদবদল করা হবে বলে ওই সূত্র আভাস দিয়েছে।

 

তবে কমিটি গঠন নিয়ে কোনো জটিলতার কথা স্বীকার না করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কমিটি গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলছে। যেখানেই কমিটি দুর্বল বা সমস্যা আছে বলে মনে করা হচ্ছে সেখানকার কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির মতো একটি বড় দলের কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও আকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে। তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কোথাও কেউ সমস্যা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সুযোগ আছে। কোনো জটিলতার কারণে এ প্রক্রিয়া থেমে থাকবে না। এজন্য চলমান আন্দোলনেরও কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও আন্দোলনের একটি অংশ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!