DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

গণশুনানিতেও র‌্যাবকে গনহারে দোষারোপঃ নজরুলদের অপহরণের বিবরণ দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী

image_90787_0দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ নারায়নগন্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ সেভেন মার্ডারের ঘটনার গণশুনানির প্রথম দিনে সাড়া মেলেনি। সাক্ষ্য প্রদানের জন্য শতাধিক ব্যক্তি নাম অন্তর্ভুক্ত করলেও সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাত্র ৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে এদের মধ্যে একজন নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। আর অন্যরা শুনানিতে অংশ নিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষ কোনো বিষয় জানাতে না পারলেও ঘটনায় পলাতক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাব থেকে চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তাকে দায়ী করে তাদের বিচার দাবি করেছেন।

 

সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা সার্কিট হাউজে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান আলী মোল্লার নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি এ সাক্ষ্যগ্রহণ করে। হাইকোর্টের নির্দেশে সরকার এ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী ১৪ মে গণশুনানির শেষ দিন।

 

এর আগে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিহত ৭ জনের পরিবারের ২৫ সদস্যের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করেন সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি। তখনও নিহতের পরিবাররা ঘটনার জন্য র‌্যাব ও নূর হোসেনকে দায়ী করে।

 

এদিকে গণশুনানি চলাকালে নিহত নজরুল ইসলামের ভাই আবদুস সালাম তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, ‘এভাবে সার্কিট হাউজে এসে লোকজন সাক্ষ্য দিতে ভয় পায়। কারণ এখানে অনেক মিডিয়াসহ লোকজন থাকায় অনেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হলেও কেউ আসেনি। তাই তদন্ত কমিটির উচিৎ ঘটনাস্থল ও সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ করা।

 

সোমবার যারা সাক্ষী দিয়েছেন তারা হলেন- ফতুল্লার মাসদাইরের মুজিবুল হকের ছেলে জালালউদ্দিন, সিদ্ধিরগঞ্জের আজিবপুরের আব্দুল হামিদের ছেলে মো. নূর হোসেন মুন্না, আবুল কাশেম, কাঁচপুর এলাকার আলহাজ্ব গিয়াসউদ্দিনের ছেলে জেলা জজ আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ রাসেল, মজিবুর রহমান ও শাহীন আজাদ।

 

র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে হাইকোর্টে রিট দায়েরকারী ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল সোমবার সাক্ষ্য দেয়ার কথা থাকলেও তিনি দেননি। নীরব এলাকায় গণশুনানির আয়োজন নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।  

 

সাক্ষ্য প্রদান করা প্রত্যক্ষদর্শী ফতুল্লার মাসদাইরের মুজিবুল হকের ছেলে জালালউদ্দিন সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে তিনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকায় ময়লার স্তূপের পাশে বসে প্রস্রাব করছিলেন। সেখানে র‌্যাবের একটি গাড়ি ও একটি কালো রঙের ১২ থেকে ১৩ সিটের মাইক্রোবাস পূর্ব থেকেই অবস্থান করছিল। ওই সময় তারা দু’টি প্রাইভেটকার আটক করে। সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকারে ছিলেন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জন এবং নীল রঙের প্রাইভেটকারে ছিলেন আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক। র‌্যাবের কর্মকর্তারা ওই প্রাইভেটকার দু’টি থেকে তাদের নামিয়ে কালো রঙের ওই মাইক্রোবাসে উঠিয়ে স্প্রে ছিটিয়ে দিলে এক মিনিটের মধ্যেই তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে কালো রঙের মাইক্রোবাসটি ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় স্টেডিয়াম সংলগ্ন তক্কার মাঠের বিপরীতে লামাপাড়া মার্কাজ মসজিদের সামনের সড়ক দিয়ে চলে যায়। ঘটনার সময় লিংক রোডের অপরপ্রান্তে একটি প্রাইভেটকারে ছিলেন নূর হোসেন।

 

জেলা জজ আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ রাসেল বলেন, ‘নূর হোসেন ও র‌্যাব জড়িত থাকার বিষয়টি পানির মতো পরিষ্কার। নূর হোসেন ছিল অর্থের জোগানদাতা। ৬ কোটি টাকার ভাগ ডিসি, এসপিসহ অনেকেই পেয়েছেন। নূর হোসেন বাহিনীর নামে ১২টি অস্ত্রের লাইসেন্স নিলেও ২০ থেকে ২৫টি বেনামে অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিল। তার আতঙ্কে কেউ এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে পারতো না। যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য, হাউজি, অসামাজিক কার্যকলাপসহ এহেন কাজ নেই যা নূর হোসেন করতো না। প্রশাসনের শেল্টারেই নূর হোসেনের আধিপত্য বিস্তার ঘটেছে। তার উত্থানের পেছনে গডফাদারের হাত রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’

 

শাহীন আজাদ বলেন, ‘হোসেন চেয়ারম্যান (নূর হোসেন) একা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারেনি। সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও র‌্যাব জড়িত ছিল। যে ৩ কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করতে পারলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’

 

এদিকে ১৬ দিনেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে না পারায় ও প্রটেকটিভ এরিয়ায় গণশুনানির আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাক্ষীদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। গণশুনানির কার্যক্রমটি কোনো পাবলিক প্লেসে করা প্রয়োজন ছিল, যাতে সাক্ষীরা সহজেই আসতে পারে।’



আসামিদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোনো আসামি পালিয়ে গেলে এজন্য সরকার দায়ী। পুলিশ প্রশাসন মামলা নিতে গড়িমসি করেছিল। কাদের কারণে আসামিরা পালিয়ে গেছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’

 

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্যু-মোটো ক্রিমিনাল রুল নম্বর ১৮৪০৩/১৪ মামলার গত ৫ মে আদেশ মোতাবেক ৭ জনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৭ মে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান আলীর মোল্লাকে। তার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের ওই তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব আবদুল কাইয়ুম সরকার ও আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, আইন ও বিচার বিভাগ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোস্তাফিজুর রহমান ও মিজানুর রহমান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শফিকুর রহমান ও সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।

 

কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে- কমিটি গণতদন্তের মাধ্যমে অপহরণের পর হত্যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না তা উদঘাটন। অপহরণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অপহৃতদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা ইচ্ছাকৃত গাফিলতি ছিল কি না তা নির্ণয়। সেই সঙ্গে কমিটি ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল।

 

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!