DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সরকারের ১০০ দিন: জনস্বার্থ ও গনতন্ত্র রক্ষায় ব্যর্থ আওয়ামী লীগঃ কিন্তু টিকে থাকার প্রশ্নে নির্মম আপোসহীন

images7ক্ষমতাগ্রহণের প্রথম ১০০ দিনে টিকে থাকার প্রশ্নে নির্মম ও আপসহীন হলেও সুশাসন ও জনস্বার্থ-নিরাপত্তায় ব্যাপক ছাড় দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৫ই জানুয়ারী জঙ্গীবাদ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশ্নে আপোসহীনতার দোহাই দিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশির ভাগ দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই ভোটার বিহীন  নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। ওই নির্বাচনের পর গত ১২ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।


ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই একাধিক প্রশ্ন ও ইস্যুতে আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিজ্ঞ অবস্থান থেকে সরে এসেছে। বিতর্কিত হয়েছে নিজদলের সমর্থকদের কাছ থেকেই। ভোতা হয়ে এসেছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ধার, এমনকি আওয়ামী লীগের শাসনের মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জঙ্গীবাদ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, প্রথম কয়েক মাসে সরকারের অগ্রাধিকার, ভবিষ্যৎ গন্তব্য ইত্যাদি কিছুটা হলেও বোঝা যায়। পশ্চিমা দেশগুলোতে সরকারের এক শ দিনের ওপর বিশেষ নজর রাখা হয়। বিশেষ করে পশ্চিমা গণমাধ্যম একশ’ দিনের কাজ বিশ্লেষণ করে বলে দেয় সরকারের সামনের দিনগুলো কেমন যাবে। বাংলাদেশেও ২০০১ সালে এক শ দিনের কর্মসূচি দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া| আওয়ামী লীগও নবম সংসদে বেশ গুরুত্বের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রথম ১০০ দিনের অগ্রগতির খতিয়ান হাজির করেছিল। কিন্তু দশম সংসদে আওয়ামী লীগ এনিয়ে একেবারেই নিরব।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ধ্বস

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বদৌলতে ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন আপাতঃ বৈধতা পেলেও দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ধসের শুরু সেখান থেকেই। মাতৃগর্ভ থেকে অসুস্থতা নিয়েই জন্ম নেয় বর্তমান সরকার। এরপর প্রভাব পড়ে বর্তমান সরকারের পরিচালিত উপজেলা নির্বাচনগুলোতে। ব্যাপক অনিয়ম-সন্ত্রাস-অপরাধের মধ্য দিয়ে শেষ হয় কয়েক ধাপের উপজেলা নির্বাচন।

উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে মাঠে বিএনপি নিজেদের অবস্থা সুসংহত করতে শুরু করে। কিন্তু তারপরই শুরু হয়ে যায় উপজেলা নির্বাচনে কারচুপি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্বাচনে কারচুপিতে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুয়া ভোট, ব্যালট বাক্স ধ্বংস, বিরোধী দলের সমর্থিত প্রার্থীদের মারধর করে উপজেলা নির্বাচন আশির দশকের চরিত্রে ফিরে গেছে। শেষ পর্যন্ত খোদ নির্বাচন কমিশন থেকেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে।


সমঝোতা বনাম কালক্ষেপণ

গত ১২ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় যে প্রতিবন্ধকতা তারা সৃষ্টি করছে, সেটা বন্ধ করতে হবে। এরপর সমঝোতা। সমঝোতা হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ নির্বাচনের আগে যে অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল বিএনপি-জামায়াত, সেই অসহনীয় পরিবেশ এখন আর নেই। বিএনপি রাজপথ দখল তো দূরের কথা, দলীয় কর্মসূচিই চাঙ্গা করতে পারছে না। এ অবস্থায় সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া প্রধানমন্ত্রীর আরো সহজ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু সে রকম কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না| একটি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শপথ নেওয়ার পর বঙ্গভবনে বলেছিলেন- সমঝোতার উদ্যোগ নেবেন। সেই উদ্যোগ তিনি নেননি।’

জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ধারণা ছিল, নির্বাচনে হেরে গেলে বা অংশ না নিলে তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদেরও একই ধরনের মনোভাব ছিল। নির্বাচনের পর সেই বিপর্যয় নেমে এসেছে বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর। নীলফামারীতে আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলাকারী হিসেবে অভিযুক্তদের একের পর এক লাশ পাওয়া গেছে। বিএনপি নেতাদের গুম করার অভিযোগ করেছে স্বয়ং খালেদা জিয়া।

নিষ্প্রাণ যুদ্ধাপরাধের বিচার

যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশ্নটিকে ক্ষমতায় আসার জন্য ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রতিনিয়ত ধীরগতির হয়ে উঠেছে যুদ্ধাপরাধের বিচার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ৫৪ দিন ধরে চেয়ারম্যানের পদটি খালি পড়ে ছিল। এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধ যুদ্ধাপরাধের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে নতুন করে।

গণজাগরণ মঞ্চের শ্লীলতাহানী

আওয়ামী লীগের প্রথম ১০০দিনের সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে বিতর্ক। প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই গণজাগরণ মঞ্চ ও তার নেতৃত্বকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে থাকে। এমনকি, গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের চারিত্রিক দূর্বলতা নিয়েও নানান প্রশ্ন তুলতে থাকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ফলে, সঙ্ঘবদ্ধ একটি আন্দোলন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভূমিকার কারণে বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়ে।

জঙ্গীবাদের ‘উত্থান’

বাংলাদেশ থেকে জঙ্গীবাদের শেকড় উৎপাটনের প্রতিজ্ঞা করে সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। এমনকি, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকার একটি অজুহাতও ছিল এই ইস্যুটি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রায়ই বলে আসতেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠে জঙ্গীবাদ। ময়মনসিংহের ত্রিশালে হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত তিন আসামী ছিনিয়ে নেয় জেমবি। এসময় দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়।

গুম-খুন-লাশের দেশ

প্রথম ১০০ দিনে গুম আতঙ্কে কাঁপতে থাকে বাংলাদেশ। অজ্ঞাত পরিচয় লাশ উদ্ধারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এতদসত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। ফলে, গুম-খুনের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। সর্বশেষ, খ্যাতিমান পরিবেশবাদী আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণ করা হয়। অবশ্য, সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপে আবু বকর সিদ্দিক প্রায় একদিন পর উদ্ধার হন। কিন্তু তারপরও জনস্বার্থ সরকারের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা

রাজনীতির বাইরেও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে সরকার, এ রকম চ্যালেঞ্জ আগে কোনো সরকারের সামনেই ছিল না। আগেও বিভিন্ন সময় নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হলেও এবারের হামলার ধরন ছিল ভিন্ন। এবার ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগ এসেছে। এসব হামলার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ওই গোষ্ঠীর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে|

জোড়াতালির গৃহপালিত বিরোধী দল সংসদে :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একহাতে সরকারি দল সামলাচ্ছেন আরেক হাতে সামলান বিরোধী দল। ফলে, কার্যকর গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। সংসদে বিদ্যুতের দাম বাড়ান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষাসহ কোন ইস্যুতেই ক্ষমতাসীন দলকে প্রশ্নের মুখোমুখি করার চেষ্টা করেনি বর্তমান বিরোধী দল। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হলেন রওশন এরশাদ। বিরোধী দলের নেতা হওয়ার পর কোনো বিদেশি কূটনীতিক বা সফররত কোনো প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে দেখাই করেননি|

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!