DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

র‌্যাব সদরদপ্তরে ছিনতাইকারীর জবানবন্দিঃ যুবলীগ নেতার পরিকল্পনায় জেএমবি জঙ্গি ছিনতাই

image_88871_0ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী ভালুকা থানা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান কামাল ওরফে যুবরাজ। তার পরিকল্পনাতে জঙ্গি ছিনতাইয়ের অপারেশনে অংশ নেয় একটি গ্রুপ।



একাধিক গ্রুপের মধ্যে এই গ্রুপটির দায়িত্ব ছিলো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাকিবকে (পরে ধরা পরে নিহত হয়) নিরাপদে নির্দিষ্ট গন্তব্য ফুলবাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। এ জন্য ওই গ্রুপের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে দিতে হবে বলে চুক্তি হয়।



র‌্যাবের সদরদপ্তরে গ্রেপ্তার হওয়া ওই গ্রুপের দলনেতা কামাল হোসেন সবুজ বুধবার ছিনতাইয়ের ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদেরএ তথ্য জানান।



২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৩ জঙ্গিকে ছিনতাই করা হয়। তাদের গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহে নেয়া হচ্ছিল। এ সময় হামলাকারী জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা গুলি ও বোমা ফাটিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। ঘটনায় আহত হয় আরো দুজন পুলিশ সদস্য।



ঘটনার পরপরই টনক নড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। পরে ছিনতাই হওয়া জঙ্গিদের ধরতে ময়মনসিংহসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে জোরালো অভিযান শুরু করলে ছিনতাই হওয়া জঙ্গিদের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি রাকিব পুলিশের হাতে ধরা পরে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে (?)মারা যায় রাকিব।



হামলা চালিয়ে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় একাধিক গ্রুপের মধ্যে একটি গ্রুপের ৬ জনকে আটক করে র‌্যাব। এছাড়া ওই গ্রুপের সদস্যদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২ আদম ব্যবসায়ীকেও আটক করা হয়।



বুধবার র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়।



গ্রেপ্তারকৃত ৬ জঙ্গি হচ্ছেন- দলনেতা মো. কামাল হোসেন সবুজ (৩৪), মো. ইউসুফ আলী সোহাগ (২০), মো. সোহেল রানা (২৮), মো. মোর্শেল আলম (২২), মো. ইলিয়াস উদ্দিন (৩৪), মো. আবু বকর সিদ্দিক ওরফে স্বপন এবং দুই আদম ব্যাপারী আনোয়ার হোসেন (৪০), মো. বাছির উদ্দিন (২০)।



সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান জানান, ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় একাধিক গ্রুপ অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেয়া ছিল। একটি গ্রুপের কাজ সম্পর্কে অন্য গ্রুপ জানতো না।



তিনি জানান, দীর্ঘ পরিকল্পনা করে এ হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে একটি গ্রুপ ছিলো ময়মনসিংহের ভালুকা থানার একটি কোচিং সেন্টারের মালিক কামাল হোসেন সুবজ গ্রুপ। এ গ্রুপের ৬ জন সক্রিয় সদস্য ৩টি মোটর সাইকেল যোগে অপারেশনে অংশ নেয়। এ গ্রুপটির দায়িত্ব ছিলো ৩ জনের যে কোনো একজন জঙ্গিকে নিরাপদে পৌঁছে দেবে। তাদের দায়িত্বের অংশ হিসেবে তারা ছিনতাই হওয়া ৩ জঙ্গির মধ্যে রাকিবকে নিয়ে ভালুকা চলে যায়।



তিনি আরো জানান, এর আগে গ্রুপটি ৩টি মোটরসাইকেল নিয়ে ভরাডোবা বাজারে অবস্থান নেয়। সেখানে আগেই অবস্থান নিয়ে থাকা একটি কালো মাইক্রোবাসে অবস্থানকারী এক নেতার কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়ে তারা অপারেশনে অংশ নেয়। এজন্য গ্রুপের প্রত্যেক সদস্যকে ২০ হাজার করে টাকা দেয়ার কথা হয়।



এ গ্রুপটির দলনেতা হিসেবে কাজ করে কামাল হোসেন সুবজ। এ গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলেন- সোহাগ, সোহেল রানা, মোর্শেল আলম স্বপনসহ ৬ জন।



গ্রেপ্তারকৃত দলনেতা কামাল হোসেন সবুজ জানান, তিনি ভালুকা থানায় একটি কোচিং সেন্টারের মালিক। তার কিছু বন্ধুবান্ধব রয়েছেন। তিনি কোচিং সেন্টার পরিচালনার পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। ভালুকা থানার যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান কামাল ওরফে যুবরাজ তাকে ডেকে বলে একটি কাজ করতে হবে। কাজটি হলো গাজীপুর থেকে আসা প্রিজন ভ্যানে ৩ জন আসামি ছিনতাই হবে। তাদের মধ্যে একজনকে নিরাপদে পৌঁছে দিতে হবে। কিভাবে কোন পথ দিয়ে পৌঁছে দিতে হবে তা তাকে বলে দেয় যুবলীগ নেতা যুবরাজ।



পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ৩টি মোটরসাইকেলে তারা ৬ জন অংশ নেয়। ঘটনাস্থলের কাছে কালো মাইক্রোবাসে অবস্থান করছিলো ওই যুবলীগ নেতা। পরে তার কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে তারা হামলার পর জঙ্গি রাকিবকে নিয়ে রওনা দেয়। রওনা দিয়ে রাকিবকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এরপর তারা যে যার মতো চলে যায়।



র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পরপরই পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ঘটনার সঙ্গে জড়িত জঙ্গি গ্রুপকে সনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে তারা সবুজ গ্রুপটি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। এরপর এ গ্রুপের ৬ জনকে আটক করা হয়।



এ গ্রুপ ছাড়াও আরো একাধিক গ্রুপ অপারেশনে অংশ নেয়। ওইসব গ্রুপকে সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে র‌্যাবের তদন্তে জঙ্গি ছিনতাইয়ের সঙ্গে কারা জড়িত, কারা অর্থের যোগান দিয়েছে এবং কিভাবে হামলা হয়েছে, এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে।



উল্লেখ্য, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতে নেয়ার পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের প্রিজনভ্যানে বোমা হামলা ও গুলি চালিয়ে জেএমবির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামিকে ছিনতাই করে নিয়ে যায় জঙ্গিরা।



ওইদিন বিকেলেই টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে ছিনিয়ে নেয়া আসামিদের একজনকে আটক করে পুলিশ। পরদিন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি। বাকি দুই আসামির কোনো হদিস এখনো মেলেনি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!