DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

রানা প্লাজা ট্রাজেডিঃ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘ঘুমাচ্ছে’ একশ কোটি টাকা

image_87872আজ ২৪ এপ্রিল। ক্যালেন্ডারের পাতায় অন্যান্য দিনের মতোই এটি একটি তারিখ। কিন্তু পোশাক শিল্পের জন্য দিনটি বিভীষিকাময় ইতিহাস। শুধু তাই নয়, শ্রমিক অধিকারের জন্য কাজ করে এমন কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন দিনটিকে ‘ফ্যাশন বিপ্লব দিবস’  হিসেবে ঘোষণা করেছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘আপনার পোশাক বানায় কে?’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ পোশাক উল্টো করে পরে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ানো এ দিনটিতে অনেক প্রশ্ন জাগে।

মর্মান্তিক এ ঘটনার জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের মুখে অনেক আশার বাণী শোনা গেলেও তা আজো নিরাশার অন্ধকারে ঢাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যে কজন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তা নিতান্তই নগন্য। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ত্রাণ তহবিলে জমা হওয়া টাকার মধ্যে এখনো একশ কোটিরও বেশি টাকা এখনো বণ্টন করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় একশ পাঁচ কোটি টাকা তার তহবিলে অলস পড়ে থেকে ‘ঘুমাচ্ছে’।
 
গত বছরের ২৪ এপ্রিল সাভারের যুবলীগ নেতা সোহেল রানার মালিকানাধীন রানা প্লাজায় ঘটে স্মরণকালে ভয়াবহতম দুর্ঘটনা। ওই ট্র্যাজেডিতে সেদিন এক হাজার ১৩২ জন পোশাক শ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়। এখনো নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ১৮২ শ্রমিক।

images (30)২৪ এপ্রিলের ওই ঘটনা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট বিপর্যয়। এ ঘটনায় শুধু বাংলাদেশই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিলো গোটা বিশ্ব। ভয়াবহ এ ট্রাজেডিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অনেক আশার বাণী শোনা গিয়েছিল। এ নিয়ে অনেক শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। তবে রাজনৈকি চাপে অনেক সংগঠনের আন্দোলন থেমে গেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ভয়াবহ এ ঘটনার জন্য প্রথম অবস্থায় শ্রমিকদের পক্ষ থেকে মামলা করার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। শুধু তাই নয়, শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য তিন দফায় কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের কথা ছিল। তারও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

যে তিনটি দফায় আন্দোলন করার কথা ছিলো সেগুলো হচ্ছে প্রথম অবস্থায় রাজপথে আন্দোলন, এর পর জনমত সৃষ্টি ও আইনি লড়াই। এগুলোর সব কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও করেছিল শ্রমিক সংগঠনগুলো। কিন্তু পরে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবি বাস্তবায়ন ও রাজনীতির তীব্র ঝড়ে সবার দৃষ্টি চলে যায় সেদিকে। ফলে এর কোনোটিই বাস্তবায়ন করতে পারেনি শ্রমিক সংগঠনগুলো।

এর বাইরেও শ্রমিক সংগঠনগুলো যেসব দাবি তুলছিল তা হচ্ছে রানা প্লাজায় নিহত ও আহতদের ‘লস অব ফিউচার আর্নিং’ ও ‘পেইন অ্যান্ড সাফারিং’ নীতিমালা ও আইএলও এর কনভেনশন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ। কিন্তু তা আজো বাস্তবায়ন হয়নি। এর পরেও ক্ষতিগ্রস্তরা যেটুপু পেয়েছেন এটি শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্দোলনেরই ফসল।

রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ পাবেন কী না, তা নিয়ে আজও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। রানা প্লাজার ঘটনাটিকে বিশ্বে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

এ বিষেয় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ইতিহাসের ভয়াবহ এ ঘটনার এক বছর অতিবাহিত হলেও সরকার শ্রমিক সংগঠনগুলোর কোনো দাবি দাওয়া মেনে নেয়নি। শ্রমিকদের  গণতান্ত্রিক দাবি ট্রেড ইউনিয়ন হয়নি। আইনি সুবিধা নিশ্চিত হয়নি। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যে যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয় তা এক পর্যায়ে বিস্ফোরণের সৃষ্টি হয়, যা শ্রমিক এবং গার্মেন্ট শিল্পের জন্য ক্ষতিকর।’

শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আন্দোলন শুরু করছিল তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি বলেও জানান তিনি।

দেশীয় পোশাক শিল্পের উন্নয়নের জন্য তিনি সরকারকে শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেয়ার দাবি জানান।

গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু  বলেন, ‘শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিকদের দাবির জন্য যে কোনো আন্দোলন করলে তাদের মামলায় জড়িয়ে দেয়। আমি নিজে ৩০টি মামলার আসামি। তাহলে শ্রমিকদের অধিকার কীভাবে প্রতিষ্ঠা হবে?’

তিনি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, ‘তার ব্যক্তিগত ত্রাণ তহবিলে সাভারের রানাপ্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সর্বমোট একশ ২৭ কোটি ৬৭ লাখ তিন হাজার তিনশ ৪৯ টাকা জমা হয়েছে। কিন্তু তা থেকে তিনি ব্যয় করেছেন মাত্র ২২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা তিনি কেন ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন করেননি?

মোশরেফা মিশু শ্রমিকদের ‘লস আফ আর্নিং’ বাবদ ৪৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!