DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ঝুলে আছে ৯৮৭ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায়

image_85633_0দেশের বিভিন্ন কারাগারে বর্তমানে ৯৭৮ আসামি মৃত্যুদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ৮ থেকে ১০ বছর কনডেম সেলে আটক।

উচ্চ আদালতের বিভিন্ন আইনি জটিলতা, রায়ের কপি ছাপাতে বিজি প্রেসের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি কারণে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করতে চলে যাচ্ছে দিনের পর দিন।

আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে রায়ের পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে সেই কপি আসামিপক্ষের হাতে পাওয়ার বিধান রয়েছে। এরপর ওই আসামি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল, রিভিউ বা রিভিশনের জন্য আবেদন করতে পারেন, এটা তার আইনগত অধিকার।

আবার যেহেতু দেশের নিম্ন আদালতগুলোর দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে হাইকোর্টের আইনানুগ অনুমতির (ডেথ রেফারেন্স) প্রয়োজন রয়েছে, সেহেতু নিম্ন আদালতের অসংখ্য রায় হাইকোর্ট বিভাগে এসে থেমে থাকছে। ফলে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের রায় বছরের পর বছর ঝুলে থাকছে।

সুপ্রিমকোর্ট থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য মতে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এমন আসামির সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৯৮৭ জন। এর মধ্যে হাইকোর্টে প্রায় ৪০৭টি ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আর অনেকেই প্রায় ৮ থেকে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কনডেম সেলে আটকাবস্থায় রয়েছেন।

সুপ্রিমকোর্ট থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ১৯৭১ সালের পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিগত ৪২ বছরে ৪৩০ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আর ২০০৫ সালের ১টি, ২০০৮ সালের ৯৬টি, ২০০৯ সালের ৭৫টি, ২০১০ সালের ৭৪টি, ২০১১ সালের ৬৬টি, ২০১২ সালের ৬০টি এবং ২০১৩ সালের ৩৫টি ডেথ রেফারেন্স এখনও হাইকোর্ট বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। এর মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ২০১০ সালে দায়েরকৃত ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে বলেও জানা যায়।

অর্থাৎ ২০১০ সালে যাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে তাদের আপিলের শুনানি চলছে ২০১৪ সালে। এমন প্রক্রিয়া বহাল থাকলে চলতি বছর যাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হবে তাদের আপিলের শুনানি হতে পারে ২০১৮ সালে।

এর সঙ্গে ২০১৪ সালে যুক্ত হয়েছে পিলখানা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স। কিন্তু ডেথ রেফারেন্সের পেপারবুক তৈরি না হওয়ায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের শুনানি শুরু করতে পারছেন না দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের আইনজীবীরা। ফলে কালক্ষেপনের বিষয়টিও একেবারেই স্পষ্ট হয়ে থাকছে।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের মতে, এ হত্যা মামলায় ১৩৮ জনের ডেথ রেফারেন্স ও বাকি আসামিদের ক্রিমিনাল আপিলের পেপারবুক, সব মিলিয়ে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ পৃষ্ঠার মতো হতে পারে। এতে পিলখানা হত্যা মামলার বিচার আপিলে নিষ্পত্তি হতে স্বাভাবিকভাবেই ৩ থেকে ৪ বছর সময় লাগতে পারে।

কিন্তু ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তিতে কেন এত বিলম্ব? এমনটি জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, বিজি প্রেসের মাধ্যমে মামলার পেপারবুক তৈরিতে দীর্ঘসূত্রিতা, মামলা পরিচালনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বেঞ্চের অভাব এবং এর কারণে বিলম্বে শুনানি, এছাড়া সরকার বা আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উদাসীনতাই এর প্রধান কারণ।

উপরোক্ত অভিযোগগুলোর সত্যতার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘হাইকোর্টে থেমে থাকা মামলাগুলোর বাদী, বিবাদী দুই পক্ষেই মতবিরোধ রয়েছে। ফলে শুনানিতে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া আদালতে মামলা বেড়ে যাওয়া ও মামলার পেপারবুক তৈরিতে বিজি প্রেসের অপারগতাও ডেথ রেফারেন্স শুনানিতে ব্যর্থ হচ্ছে।’

বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন, বিচারপতি শহীদুল ইসলাম ও বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে চারটি বেঞ্চ ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তিতে কাজ করলেও বেঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলাম দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে  বলেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলার আপিলের পেপারবুক প্রস্তুত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলতি বাজেটের অধীনেই বিশেষভাবে তিনটি ডুপ্লিকেটিং মেশিন কেনা হচ্ছে। এরইমধ্যে ক্রয় সংক্রান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ের এই ডিজিটাল ডুপ্লিকেটিং মেশিন আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে দেশে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ফলে পিলখানা হত্যা মামলাসহ হাইকোর্টে জমে থাকা অন্যান্য মামলাগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!