DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ক্রিকেটের কোটি ডলারের বাজিকর

image_122834৫ এপ্রিল শনিবার। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলছে টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল খেলা। জমে উঠেছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ম্যাচটি। দক্ষিণ আফ্রিকার করা ১৭২ রানের জবাব দিতে ব্যাট করছে ভারত। ১১ ওভার বল শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ভারতের রানের চাকা গতিশীল হয়নি। ১২ তম ওভারে ব্যাট করতে নামলেন সুরেশ রায়না। ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা। স্টেডিয়ামের ইন্টারন্যাশনাল গ্যালারিতে বসে থাকা এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। তার কানে হেডফোন দিয়ে তিনটি মোবাইল ফোনে অনবরত কথা বলছেন। বিষয়টি ইন্টারন্যাশনাল গ্যালারিতে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরায় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। সুরেশ রায়না ঐ ওভারে ১৬ রান নেন। পরের ওভারে ১৭ রান। মাঝে মধ্যেই ঐ ব্যক্তি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন। খেলার ফলাফলে ভারত জয়ী হওয়ার পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঐ ব্যক্তির পিছু নেয়। পরে বিস্তারিত তথ্য জানার পর র্যাব তাকে আটক করে। আটককৃত এই ব্যক্তি হলেন অতুনু দত্ত (৫০)। তিনি ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন বাজিকর।



অতুনু দত্তকে আটকের পর তাকে নেয়া হয় র্যাব সদর দফতরে। র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটের একটি দল তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। আটকের সময় অতুনু র্যাবের সামনে তার ৩ টি মোবাইল ফোনসেট ভেঙ্গে ফেলে। পরে র্যাব ঐ তিনটি মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করে দেখে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরু থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত তার তিনটি মোবাইল ফোনে প্রায় একশ ঘন্টার বেশি সময় কথোপকথন হয়েছে। এই সময়ে তিনি সবচেয়ে বেশি দুবাই ও ভারতে কথা বলেছেন। 



জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া তথ্য : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কলকাতা মিউনিসিপালের ৫৯, দিনেশ পল্লীর বাসিন্দা অতুনু দত্ত। ভারত, পাকিস্তান ও দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাজিকরদের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মূল বাজিকর কুনাল দাগা'র দলে তিনি কাজ করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে কলকাতা, মুম্বাই ও দুবাইয়ের ক্লাব কেন্দ্রিক বাজিকরদের খেলার আগাম তথ্য তিনি মাঠ থেকে দেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাবে প্রায় এক কোটি ডলারের বাজি হয়েছে বলে তিনি জানান। 



যেভাবে বাজি ধরা হয় : স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে মাঠ থেকে ক্রিকেট খেলা সম্প্রচার করার পর এই দৃশ্য অবস্থা ভেদে ডিশ সংযোগের মাধ্যমে টেলিভিশনে দৃশ্যমান হয় অন্তত ২০ সেকেন্ড থেকে ৩০ সেকেন্ড পর। এই সময়ে মধ্যে মাঠ থেকে মোবাইল ফোনে বাজিকরদের কাছে তথ্য দেয়া হয়। র্যাবের গোয়েন্দাদের কাছে তিনি জানান, একজন খেলোয়াড় একটি বলে আউট হয়ে গেছে। কিন্তু টেলিভিশনে তখনও ঐ দৃশ্য দেখা যায়নি। এ সময়ের মধ্যে যিনি বাজি ধরছেন তাকে জানিয়ে দেয়া হলো ঐ খেলোয়াড় আউট হয়ে গেছে। তখন তার বাজির টাকার পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। প্রতিপক্ষ তখনও জানে না যে, ঐ খেলোয়াড় আউট হবে। বাজি ধরার পর যখন টেলিভিশনে দেখেন যে সত্যি সত্যি ঐ খেলোয়াড় আউট হয়ে গেছে, তখন বাজি ধরা প্রতিপক্ষ হেরে যায়। আবার একজন খেলোয়াড় ছক্কা মারলো। এই ছক্কা মারার বিষয়ে ক্লাবগুলোতে বাজি ধরা হয়। বাজি ধরার দুই পক্ষের মধ্যে এক পক্ষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। বাজিতে জেতার পর টাকার একটি ভাগ তাদের কাছে চলে আসে।



র্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান জানান, এ ধরনের বাজি খেলায় কোন প্রভাব না ফেললেও খেলার প্রতিটি বলের আগাম তথ্য দিয়ে আরেকটি পক্ষের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। যারা প্রতি বলে বাজি ধরছেন তারা জানেন না যে, মাঠ থেকে খেলা সম্প্রচারের দৃশ্য টিভিতে গড়ে ২০ সেকেন্ড থেকে ৩০ সেকেন্ড পর দৃশ্যমান হয়। এই বিষয়টি জানা থাকলে ক্রিকেটে প্রতি বলে কেউ বাজি ধরতো না। গ্রেফতার অতুনু দত্ত ৭ বছর ধরে এ ধরনের বাজিকর হিসাবে কাজ করছেন। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অন্য দেশের খেলা চলাকালীন সময়ে দুবাই, মুম্বাই ও কলকাতায় এ ধরনের প্রতি বলে বাজি চলে। 



অতুনু দত্তকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে র্যাব। ঐ মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠালে আদালত তাকে জামিন দিয়ে দেয়। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এনামুল হক বলেন, অতুনু দত্ত একজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বাজিকর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সকল খেলায় মাঠে উপস্থিত ছিলেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!