DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ঐতিহাসিক আফগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন

afgahn_electionbg_393266948বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেলেও বেশ সন্তোষজনকভাবেই সম্পন্ন হলো আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। প্রবল বৃষ্টিপাত ও তালেবানদের হুমকির মুখে চরম আতঙ্কের পরও দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ কর‍ার এ সুযোগ দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করেছেন আফগানরা। 



সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।



তবে তারা মনে করছেন, কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশের ভোট পেয়ে সরাসরি বিজয়ী হতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে ২৮ মে দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে লড়তে হবে তাদের। এর আগে, প্রথম দফার ফলাফল প্রকাশ হবে ২৪ এপ্রিল।



শনিবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হতেই রাজধানী কাবুলসহ দেশের ভোট কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক নারী ও তরুণ ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।



বর্তমান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজায়ের উত্তরসূরী হতে আটজন প্রার্থী নির্বাচনে লড়াই করছেন। এদের মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ, জালমেই রাসূল, সাবেক অর্থমন্ত্রী আশরাফ গণি আহমেদজাই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে আছেন।



দিনের শুরুতেই প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের কাছে একটি স্কুলে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন হামিদ কারজাই। ভোট প্রদান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একজন আফগান নাগরিক হিসেবে আমি আনন্দ ও গর্বের সঙ্গে ভোট দিয়েছি।



ভোট দিতে আসা নারী ও তরুণদের মধ্যেও দারুণ ‍উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, ভোট শুরুর একঘণ্টা আগ থেকেই ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন। ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল উৎসবমুখর। 



লাইলা নিয়াজী নামে এক নারী ভোটার বলেন, আমি তালেবানদের মোটেই ভয় পাই না। আমরা যে কোনো দিন যে কোনোভাবে মারা যেতে পারি। আমার একটি ভোট মানে তালেবানদের গালে একটি চড়।



ভোট দিতে আসা এক তরুণ জানান, নাশকতার আশঙ্কায় তার বাবা তাকে ভোট দিতে নিষেধ করলেও তিনি বাবার কথা শোনেননি।



ভোটকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আফগান পুলিশের ৪ লাখ সদস্যের সবাইকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিশাল বহরকেও কঠোর প্রহরায় রাখা হয়।



স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচন বন্ধে তালেবানরা বড় ধরনের হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিলেও তাদের সে ছক নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে। ভোটকে কেন্দ্র করে যান চলাচল ও মোবাইল ফোন ব্যবহারেও কঠোর নির্দেশনা  দেওয়া হয়।



ভোট উপলক্ষে শুক্রবার দুপুর থেকে রাজধানী কাবুলে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি সংযোগ সড়কে পুলিশ কঠোর নিরাপত্তা তল্লাশি কেন্দ্র বসায়।



শেষ মুহূর্তে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মোবাইল অপারেটরদের টেক্সট মেসেজ পাঠানোও বন্ধ করে দেওয়া হয়।



অপর দিকে, ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা সত্ত্বেও বিক্ষিপ্ত হামলা-সংঘর্ষ ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের খবর পাওয়া যায়। ভোট শুরুর আগেই ৭৫০টি কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, নিরাপত্তা শঙ্কায় সেসব কেন্দ্রে ১০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতিও ছিল না। 



স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, পশ্চিমের হেরাত প্রদেশ ও কাপিসা, কাবুলের উত্তর-পূর্বের এলাকায় বিরূপ আবহাওয়া ও নিরাপত্তাজনিত কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কেন্দ্রে আবার ব্যালট পেপারই সময়মতো পৌঁছায়নি। কিছু কেন্দ্রে আবার ব্যালট পেপারও ছিল অপর্যাপ্ত।



কিছু ‘ভৌতিক’ কেন্দ্রে তালিকাভুক্ত ভোটারের চেয়ে ব্যালট পেপার ছিল ‘অনেক বেশি’। ওয়ার্দাক প্রদেশে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে দুই পুলিশকে গ্রেফতার করা হয়।



লোগার প্রদেশে এক পুলিশ সদস্য নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনকালে বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন। এ হামলায় চার ভোটারও আহত হয়েছেন। বারাক জেলায় ভোটারদের মধ্যপথে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট না দিতে দেওয়ার অভিযোগও আসে।



ইতোমধ্যে শুক্রবার নির্বাচনী সহিংসতায় দুর্বৃত্তের গুলিতে মারা গেছেন পুরস্কারজয়ী জার্মান ফটোসাংবাদিক আনজা নেইড্রিংগাস। একই দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হয়েছেন কানাডিয়ান প্রতিবেদক ক্যাথি গেনন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!