DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বউয়ের গহনা বিক্রি করে শুরু করি ব্যবসা’

image_118536ক্ষুদ্র উদ্যোগই পারে অভাবি জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে। প্রবাদ আছে 'ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল।' ক্ষুদ্র পুঁজি নিয়ে শুরু করলে এক সময় বৃহত্পুঁজি গঠন করা যায়। সেই চিন্তা থেকেই এক সময় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার নীতি গ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠা করা হয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা। বিভিন্ন স্থানে বিসিক শিল্পনগরীও স্থাপন করা হয়। কিন্তুু সেই ক্ষুদ্র শিল্পের যে সংজ্ঞা, তার বাইরেও ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অনেক উদ্যোগ রয়েছে যেগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকলেও স্বকর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের বড় উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্কুলের গন্ডি পেরোয়নি এমন যুবকরা ধারদেনা করে শুরু করে পরবর্তীতে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছেন। এমনি একজন খোকন। পুরান ঢাকার ডিস্ট্রিলারি রোডে ঢালাই কারখানার মালিক। এক যুগ পার করেছেন এই ব্যবসায়। এখন ৬ জন শ্রমিক কাজ করে তার প্রতিষ্ঠানে। নিজে ও তার ছেলেও সার্বক্ষণিক সময় দিচ্ছেন।

কিন্তু শুরুটা অত সহজ ছিলো না। বললেন, 'বিভিন্ন জায়গায় খাটাখাটুনি করে কিছু টাকা জমাই। বেশি নয়, মাত্র দশ হাজার টাকা। এরসঙ্গে বউয়ের গহনা বিক্রি করে আরো কিছু যোগ করি। তাই দিয়ে শুরু জীবন সংগ্রামের।' পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া খোকন মাসখানেকের মধ্যেই বুঝতে পারেন টাকা খাটাতে পারলে ব্যবসা ভালই হবে। বুকে সাহস নিয়ে চড়া সুদে লাখ টাকা ধার করেন। তখন অনেকেই বলতে চেয়েছিল, সুদের টাকা ফেরত দেয়া যাবে তো?

খোকনের আত্মবিশ্বাস ছিল প্রবল। রাতদিন পরিশ্রম করে সেই টাকা ফেরতও দিয়েছেন। ব্যবসায় লাভের টাকা দিয়ে আবার বিনিয়োগ করেছেন। এভাবেই এগিয়েছেন তিনি। ডিস্ট্রিলারি রোডের নামাপাড়ায় এখন খোকনের ঢালাই কারখানা সবার পরিচিত। ১০/১২ হাজার টাকা শ্রমিকদের বেতন গুণতে হয় তাকে। মাসে অন্যান্য খরচ সামলিয়ে ২০/২৫ হাজার টাকা ঘরে আসে। এক ছেলে দুই মেয়ের সংসারে বেশ আছেন খোকন। কিন্তু ছেলের লেখাপড়া চালাতে পারেননি। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পরই বাবার কারখানায় কাজ পায় সে। বিভিন্ন লোকের অর্ডার সরবরাহ করে। পিতলের নানা জিনিস তৈরির অর্ডার পায় তারা। আগুনে গলিয়ে পণ্য তৈরি করতে হয়। একাজে জীবিকা নির্বাহ করলেও প্রায়ই হয়রানির শিকার হতে হয়। কখনো পুলিশি হয়রানি, কখনো মস্তানদের উপদ্রব।

খোকনের মতে, 'মোল্ডিং ওয়ার্কশপগুলোর জন্য সরকার যদি স্বল্প সুদে ঋণ দেয় তাহলে একাজ করেই হাজার হাজার তরুণ জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। নতুন নতুন আইডিয়া দিয়ে এখানেও অনেক কিছু করা সম্ভব।'

শুধু খোকন নয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঢালাই কারখানার মাধ্যমে চলছে হাজারো সংসারের ব্যয় নির্বাহ। নিজেদের ভাগ্য গড়ে তোলা এই উদ্যোক্তারা সমাজকেও উপকৃত করছেন। এটা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিরও সহায়ক।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!