DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

পুঁজিবাজারে ফের ছন্দপতন

image_781_113073কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে আবারো দর পতনে আক্রান্ত দেশের পুঁজিবাজার। অতিরিক্ত বিনিয়োগ পুঁজিবাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশনার পর সমপ্রতি সমন্বিত হিসেবে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা পুনর্নির্ধারণের কারণে নতুন করে দর পতন শুরু হয়েছে। গত তিন বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারকে ঘিরে একাধিকবার ছন্দপতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সমন্বিত (কনসোলিডেটেড) হিসেবে পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর থেকে দেশের উভয় পুঁজিবাজারে ক্রমাগত কমতে থাকে মূল্য সূচক ও টাকার পরিমাণে লেনদেন।

এর মধ্যে গত রোববার দেশের উভয় পুঁজিবাজারে চলতি বছরের সর্বনিম্ন লেনদেনের রেকর্ড হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২৯২ কোটি এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার জারির দিন ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৫৭৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করলেও মাত্র ১৫ কার্যদিবসের মাথায় তা ২০২ পয়েন্ট কমে ৪৫৫৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর দৈনিক লেনদেন গড়ে ৫০০ কোটি টাকা থেকে ৩০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাংকগুলো অতিমাত্রায় বিনিয়োগ করার কারণে ফুলে ফেঁপে উঠে দেশের পুঁজিবাজার।

এমন প্রেক্ষাপটে ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে এক সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত বিনিয়োগ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে দফায় পুঁজিবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ ধস নামে। যার রেশ এখনো কাটেনি। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ মূল্য সূচক ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্ট থেকে বর্তমানে ৪৫৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। দ্বিতীয় দফায় ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজারে আইনি সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বেঁধে দেয়া হয়। একইসঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান (সাবসিডিয়ারি কোম্পানি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের একক গ্রাহক সীমার (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয়ের সময়সীমাও পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সমন্বয় করতে বলা হয়। সে সময়ে ডিএসইর সাধারণ মূল্য সূচক ৬০১৭ পয়েন্টে অবস্থান করলেও পরবর্তী তিন মাসের মাথায় (৭১ কার্যদিবস) সূচক ৭৬০ পয়েন্ট কমে ৫২৫৭ পয়েন্টে নেমে যায়। এরপর তৃতীয় দফায় ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে কয়েকটি নতুন সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ছদ্মনামে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট খোলা নিরুৎসাহিত করা হয়। পাশাপাশি অ্যাকাউন্ট খোলার সময় বিনিয়োগকারী সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত হওয়ার জন্য হাউস কর্তৃপক্ষকে কেওয়াইসি (নো ইউর ক্লায়েন্ট) ফরম পূরণের নির্দেশ দেয়া হয়। যা একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তে হালনাগাদ করার কথাও বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা পালনে ডিএসইর পক্ষ থেকে হাউসগুলোকে চিঠি দেয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরপর থেকেই আশঙ্কাজনকহারে কমে যায় লেনদেনের পরিমাণ। প্রজ্ঞাপন জারির পরের কার্যদিবসেই ডিএসইর লেনদেন ২৪৯ কোটি টাকা থেকে ১৫৩ কোটি টাকায় নেমে আসে। পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসে আর ২০০ কোটির ঘরে পেঁৗছায়নি লেনদেন। বরং ওই সময়ের ১০ কার্যদিবসেই লেনদেন ছিল ১৫০ কোটি টাকার নিচে। অথচ প্রজ্ঞাপন জারির আগের ১০৩ কার্যদিবসের কোনো সময় ডিএসইর লেনদেন ১৫০ কোটি টাকার নিচে নামেনি। প্রজ্ঞাপন জারির পর ৩ দফা সর্বনিম্ন লেনদেনের রেকর্ডও সৃষ্টি হয়। মাত্র ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি ডিএসইর লেনদেন ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!