DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

জাতীয় পার্টি ,ক্ষুব্ধ তৃণমূল: স্যারের পাশে দালালরা কেন?

image_81364দশম সংসদ নির্বাচনে নানা নাটকীয়তার জন্ম দিলেও লাভবান হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও দলের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু সবচেয়ে বঞ্চিত হয়েছে তৃণমূল যারা তার একান্ত অনুগত। শুধু তা-ই নয় তৃণমূল নেতারা তাদের বঞ্চনা, হতাশা ও ক্ষোভের কথা বলার জন্য চেয়ারম্যানকেও এতোদিন কাছে পাননি। মঙ্গলবার ‘স্যারকে’ কাছে পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তৃণমূল ও নির্বাচনের সুবিধাবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। স্যারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ নেই যতো ক্ষোভ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যারা বর্তমানে সরকারের নানাভাবে লাভবান হয়েছেন।

পার্টি যেসব নেতা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি এবং তার কথামতো যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছিলেন মঙ্গলবার তাদেরই বনানীর পার্টি অফিসে ডেকেছিলেন এরশাদ। আর সুযোগ পেয়ে বঞ্চনার ক্ষোভ ঝারলেন তারা।

এরশাদ বক্তব্য শুরু করলে এক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাহারকারী দাঁড়িয়ে যান এবং পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফয়সাল চিশতী ও পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রতি আঙ্গুল তুলে ‘দালাল’, ‘দালাল’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।

ক্ষুব্ধ নেতারা আরও বলেন, দালালেরা স্যারের পাশে কেন? দালালদের শাস্তি দিতে হবে, তাদের বহিষ্কার করতে হবে। এসময় হট্টগোল শুরু হয়ে যায়।

এ কাণ্ড দেখে এরশাদও ইতস্তত বোধ করেন এবং এক পর্যায়ে নেতাদের ইশারায় শান্ত হওয়ার জন্য বলেন। তার সম্মানে নেতারা শান্ত হন।

হট্টগোলকালে নেতারা আরও বলেন, স্যার দালালদের বাদ দেন। তাদের বাদ দিয়ে পার্টিকে নতুন করে সাজান। আজ সারাদেশে সংগঠন নাই। কাজ নেই, কমিটি নেই।

ক্ষুদ্ধ নেতাদের এসব কথা শোনার পর এরশাদ বলেন, ‘আমি তো মহাসচিবকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি সারাদেশে সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে কাজ করছেন।’

তখন তৃণমূলের নেতারা বলেন, সারাদেশে সংগঠন নেই। আপনি তৃণমূলে যান। দেখে আসুন পার্টির কী অবস্থা!

নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, পার্টি থেকে আমাদের কোনো গাইডলাইন দেয়া হয় না। আমরা কীভাবে কাজ করবো তাও বলা হয় না। অন্য দলের প্রার্থীদের দিক নির্দেশনা দেয়া হলেও আমাদের কেউই নেই।

তারা আরও বলেন, যারা পার্টিতে আছেন তারা সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। প্রেসিডিয়ামে যারা আছেন তারা দলের চিন্তা করেন না।  এসময় অনেক নেতাই নিজেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যের চেয়েও বেশি যোগ্য বলে দাবি করেন।

নেতাদের এমন সব কথা শোনার পর এরশাদও তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেন, ‘তোমরা ঠিকই বলেছ। প্রেসিডিয়াম সদস্যদের দলে তেমন কোনো কনট্রিবিউশন নাই। আমি নিঃস্ব, আমি রিক্ত।’

নেতাদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ‘আমি কেন নির্বাচনে যাইনি, তোমরা একদিন তা বুঝবে। এটাই ইতিহাস হবে। ইতিহাসই এর উত্তর দেবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর জেলে ছিলাম। ২৩টি মামলা হয়েছিল। এখনও আমার মামলা শেষ হয়নি। মামলা চলছে। আমার প্রশ্ন, আমার মামলা কেন শেষ হয় না?’

যারা তার নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছে তাদের তিনি বাধ্য সন্তান আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘যারা করেনি তারা আমার অবাধ্য সন্তান। তোমরা সরকারের কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগতে পার আমায় বলো। আমি তোমাদের দেখব।’

যারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি তাদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ‘এই নির্বাচনই জীবনের শেষ নির্বাচন নয়। সামনে নতুন নির্বাচন হবে। জাতীয় পার্টি সে নির্বাচনে অংশ নেবে। সে নির্বাচনে তোমাদের সবাইকে প্রার্থী করা হবে।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, যুগ্ম মহাসচিব জহিরুল ইসলাম জহির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেলসহ সারাদেশের প্রায় দেড় শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাহারকারী নেতা। এরশাদের বক্তব্য শেষে দুপুর ১টায় বৈঠকের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

তবে বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ছিল না।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!