DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

গালফ নিউজকে আম আদমী পার্টির কুমার বিশ্বাসঃ রাহুল গান্ধীর আইকিউ নিম্নমানের

image_80537_0ভারতের নতুন ধারার রাজনীতিবিদ এবং দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে কংগ্রেসের ঝানু নেত্রী এবং নয়াদিল্লির তিন মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী শিলা দীক্ষিতকে বড় ধরণের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। কংগ্রেসের সমর্থনে দিল্লিতে সরকারও গঠন করেছিলেন আম দল। কিন্তু লোকপা্ল বিল উত্থাপন করতে না পারার অজুহাত তুলে মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় কেজরিওয়াল সরকার পদত্যাগ করে। এখন তারা দেশের সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দিল্লিতে কেজরিওয়ালের বিজয়ী হওয়ার পিছনে যিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন তিনি হলেন কুমার বিশ্বাস। কেজরিওয়ালের ডান হাত হিসেবে পরিচিদত কুমার এখন বিখ্যাত গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরী রাজীব গান্ধীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। ভারতের পার্লামেন্ট নির্বাচনে তিনি গান্ধী পরিবারের দুর্গ হিসেবে পরিচিত আমেথি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। অতীতে রাহুল গান্ধীর মা সোনিয়া গান্ধী এবং বাবা রাজীব গান্ধী এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাহুল নিজে এখান থেকে দু দুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কংগ্রেস মাত্র দুবার (১৯৭৭ ও ১৯৯৮ সাল)এ আসনে পরাজিত হয়েছিল।
 
হিন্দি সাহিত্যের শিক্ষক কুমার বিশ্বাস তার তেজস্বী বক্তৃতার জন্য বিখ্যাত। আপের প্রতষ্ঠা লগ্ন থেকেই তিনি কেজরিওয়ালের সঙ্গে কাজ করছেন। দলের চিত্তাকর্ষক শ্লোগানগুলোও নাকি তিনিই তৈরি করে থাকেন। এছাড়া সোসাল নেটওয়ার্কে দুর্নীতি বিরোধী প্রচারনার চুম্বক অংশগুলোতেও নাকি তারেই লেখা।
 
গত দু মাস ধরে তিনি আমেথিতে ব্যস্ত রয়েছেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রাম থেকে গ্রামে। ছুটে যাচ্ছেন সেখানকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে। নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন গালফ নিউজের সঙ্গে। তার বিশ্বাস আমেথির নির্বাচন দেশের প্রচলিত রাজনীতিকে বদলে দেবে।
 
নির্বাচন করার জন্য আপনি আমেথিকে কেন বেছে নিলেন?
 
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বহুবার বলেছেন, তিনি রাহুল গান্ধীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে রাজি। আমি মনে করি দেশের তরুণ সমাজ বিশেষ করে যারা কঠোর সংগ্রাম করছেন এবং যারা বাপদাদার পরিচয়ে পরিচিত নন, তাদের জন্য প্রদানমন্ত্রীর এই বক্তব্য অপমানজনক। আমি মনে করি আমাদের দেশে দুর্নীতির মূল কারণ হচ্ছে পারিবারিক শাসন। এছাড়া রাহুল নিজে অনেক বিতর্কিত বিষয়ে নীরব থেকেছেন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করতে পারেননি। এ কারণেই আমি আমেথি থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া উত্তর প্রদেশের এ এলাকাটিতে তেমন উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। অপুষ্টি, অশিক্ষা, বেকার নানা দিক দিয়েই আমেথি অনেক পিছিয়ে আছে।
 
কেউ কেউ বলছেন আপনি নাকি কেবল প্রচারণার জন্যই রাহুলের সমালোচনা করছেন?
 
কুমার বিশ্বাসের প্রচারণার দরকার হয়না। রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই আমি জনপ্রিয়। আমি যদি ঝামেলা মুক্ত নির্বাচন করতে চাইতাম তবে দিল্লি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতাম। আমি প্রচারণার জন্য রাহুলের মতো একজন নিম্নমানের আইকিউ বিশিষ্ট লোকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছি না। তার পারফরমেন্সটা দেখুন। সে তার নিজের এলাকার উন্নয়নে পার্লামেন্টের উন্নয়ন তহবিলের মাত্র ১০ ভাগ ব্যয় করেছেন এবং নিজের সরকারে কল্যাণ প্রকল্পগুলো  পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
 
এপিপি পারিবারিক রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু রাহুল তো বলেছেন, নেহেরু গান্ধী পরিবারে তিনি নিজের ইচ্ছায় জন্ম নেননি এবং এটি তার ভুল নয়।
 
আমি জানি এতে তার কোনো দোষ নেই। কিন্তু রাজ্যের বহু ভোটার রাজীব গান্ধীর প্রতি তাদের ভালোবাসা থেকে  তাকে ভোট দিয়েছে এবং সে পার্লামেন্টে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। রাহুল তো নিয়মিত পার্লামেন্টেও যায় না। গত দশ বছরে লোকসভায় সে আমেথি সম্পর্কে একটি প্রশ্নও করেনি। পার্লামেন্টে তার দুর্বল ভূমিকার কারণে ভারতের অন্য আসনগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে আমেথি।এখানে শিক্ষার হার অনেক কম কিন্তু  বেকারের সংখ্যা বেশি। তাহলে এতগুলো বছর ধরে সে কি করেছে? গত কয়েক দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরও আমেথির ১৩টি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। এমনকি অনেক এলাকায় রয়েছে খাবার পানির সঙ্কট।
 
আমেথির প্রধান ইস্যু কী?
 
সড়ক যোগাযোগ, স্বাস্থ্য এবং বিদ্যুৎ। আমেথিতে সাইফাই, লক্ষৌ, নোয়দা এবং অন্যান্য শহরগুলোর মতো  উন্নত সড়ক নেই। রাহুল যদি আমেথির সঙ্গে সংযুক্ত ৬০ কিলোমিটার সড়ক নির্বিঘ্নে সফর করতে পারতো এবং তার মা সোনিয়া গান্ধী যদি তার আসন রায়বেরেলি থেকে তিন ঘণ্টায় আমেথি আসতে পারতেন তাহলে আমি এ আসন থেকে নির্বাচন করতাম না। মহাসড়ক ধরে আমেথি থেকে রায়বেরেলির যেতে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। রাস্তার এই বেহাল দশার কারণে গত বছর এই সড়কে চার নারীর গর্ভপাত ঘটেছিল।
 
ভোটারদের কাছে আপনার প্রতিশ্রুতি কী?
 
আমি এ আসন থেকে নির্বাচিত হলে একটি দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণমূলক সরকার গড়ে তুলব। এখানকার   জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ অর্থ এবং উন্নয়নমূলক তহবিলের ব্যবহার নিশ্চিত করবো। আমেথিতে উল্লেখিত উন্নয়ন না হলে মন্ত্রীদের জবাবদিহিতারও ব্যবস্থা করবো।
আপনার নির্বাচনে লড়াই করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ আছে কি?
 
রাহুল গান্ধী তার প্রচারণার জন্য এক জাপানি সংস্থার সঙ্গে অর্ধ কোটি রুপির চুক্তি করেছেন।কিন্তু আমি নির্বাচন কমিশনের বেধে দেয়া ৭০ লাখের বেশি খরচ করতে পারবো না। এ অর্থের বেশির ভাগই আসবে স্থানীয় ভারতীয় এবং দেশের বাইরের প্রবাসীদের দেয় চাঁদা থেকে। দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে আমাদের দলকে এই প্রবাসী ভারতীয়রাই সহায়তা করে থাকে।
    
নরেন্দ মোদি সম্পর্কে আপনার ধারণা কি? একবার আপনি তাকে হিন্দু দেবতা শিবের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
 
২০০৫ সালে গুজরাটে এক অনুষ্ঠানে আমি এ মন্তব্য করেছিলাম। আমি তখনও রাজনীতিতে আসিনি। আমার বিরোধীরা এখন পুরনো ভিডিও ক্লিফ ঘেটে সেসব বের করে এনে ইউটিউবে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি রাহুল বা মোদি দুজনার কাউকেই এতটা গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। ব্যক্তি বন্দনা বাদ দিয়ে দলগুলোর বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুগুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত।
 
নীতি ও আদর্শ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান দিয়েই জনতার রাজনৈতিক দলগুলোকে বিবেচনা করা উচিত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে বলেই আমি আম আদমী পার্টির সঙ্গে রয়েছি। আপ এ ইস্যুতে ব্যর্থ হলে আমি একদিন এ দল ছেড়ে দিব।
 
এক শ্রেণীর ভোটার মনে করেন গুজরাট দাঙ্গায় ইন্ধন যোগানোর কারণে মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কিন্তু এ ইস্যুতে আপনার দল নীরব কেন?
 
এটা মিথ্যা কথা। আমরা বিভিন্ন জনসভায় মোদির ইস্যুটি তুলেছি এবং হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ভারতের মানুষ মোদির বিভেদের রাজনীতি সমর্থন করে না। এছাড়া মোদি নিজেও কিন্তু তার ধর্মভিত্তিক নীতির প্রতি আন্তরিক নন। এজন্য তিনি পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাসী কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তুলেছেন। উদাহরণ হিসেবে পাঞ্জাবের ক্ষমতাসীন বাদল পরিবারের কথা বলা যায়। আমরা ভারতের রাজনীতি থেকে চার সি(ক্যারেক্টার, কম্যুনাল, করাপসন ও ক্রিমিনাল) বিতাড়িত করে এক বিশুদ্ধ ধারা গড়ে তুলতে চাই।
 
আপনি এবারই প্রথম নির্বাচনে দাঁড়ালেন। আপনার অনুভূতি কি?
 
আমার বিশ্বাস আমেথিতে এবার একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটবে। আমি যদি দিল্লি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করি মনে হয় তবে সেখান থেকেও পাস করবো। এটি হবে একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন। আমি বিজয়ী হতে পারলে গোটা ভারতে একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়বে আর তা হলো:  পারিবারিক রাজনীতি আর দুর্নীতিতে ভারতীয়রা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!