DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

উপজেলা ভোটের ফলাফল নিয়ে আওয়ামী-বাম মিডিয়ার ভণ্ডামি (!)

P1_upozila-voter-folafolঅলিউল্লাহ নোমানঃ  প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনে এক দিনের বাদশাহী দেখিয়েছিলেন দেশের মালিকরা। দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। যদিও সরকারি দলের গুণ্ডা, সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী দিয়ে কেন্দ্র দখলের অভিযোগের অন্ত নেই। এমনকি মোট ভোটার সংখ্যার চেয়ে বেশি ভোট কাস্টিংয়ের খবরও এরই মধ্যে বের হয়েছে। তারপরও জয় হয়েছে দেশের মালিকদের। শেখ হাসিনার সরকারের (জবরদস্তি করে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা) বিরুদ্ধে জনমতের সুস্পষ্ট প্রতিফলন হচ্ছে উপজেলার ফলাফল। এতে কারও দ্বিধা আছে বলে মনে হয় না। শেখ হাসিনার পায়ের তলার মাটি সরে গেছে এটাই জানান দিচ্ছে উপজেলা ইলেকশন।
কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে বিস্ময় লাগে। আওয়ামী-বাম মিডিয়াগুলোর কাণ্ড দেখে সেই বিস্ময়। তারা যেন সর্বশেষ চেষ্টায় থাকেন বিএনপি-জামায়াতকে পরাজিত করার জন্য। এর কিছু উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। গত বৃহস্পতিবারের উপজেলা নির্বাচনের ফলাফর আসতে শুরু করে রাত ৮টার পরই। তখন লন্ডনে বেলা ২টা। উদ্বেগ উত্কণ্ঠায় চোখ ইন্টারনেট থেকে সরে না। এই পত্রিকা তো ওই পত্রিকা। এই অনলাইন নিউজ পোর্টাল তো আরেকটা। ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুক। সবখানেই কিছু কিছু করে ফলাফল আসছে। কিন্তু বিস্মিত হয়েছি হিন্দুস্থানপন্থি আওয়ামী-বাম পত্রিকাগুলোর কাণ্ড দেখে।
বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ১০ মিনিট। লন্ডনে তখন বিকাল ৫টা ১০ মিনিট। অনেক উপজেলার ফলাফল বের হয়ে গেছে। বিএনপির প্রাধান্য স্পষ্ট। তারপরও ‘প্রথম আলো’র অনলাইনে তখন সংবাদ শিরোনাম-‘১২টিতে আওয়ামী লীগ ৬টিতে বিএনপি সমর্থকরা জয়ী।’ এই সময়ে কট্টর আওয়ামী পত্রিকা ‘সমকাল’-এর অনলাইনে শিরোনাম- ‘১৩টি বেসরকারি ফলাফল-আওয়ামী লীগ ৮ বিএনপি ৩, একটিতে ইউনাটেড পিপলস্ পার্টি (ইউপিডিএফ), আরেকটিতে মান্নান ভূইয়া পরিষদ সমর্থিত প্রার্থী জয়ী।’
একই সময়ে প্রাচীন পত্রিকা, হালে আওয়ামীপন্থি ইত্তেফাকের শিরোনাম-‘আওয়ামী লীগ ১৯, বিএনপি ১৮ অন্যান্য ৩।’ আওয়ামী লীগকে এগিয়ে রাখার সর্বশেষ চেষ্টায় তখন ইত্তেফাক।
ঠিক একই সময়ে দৈনিক মানব জমিনের শিরোনাম-আওয়ামী লীগ ১৩, বিএনপি ১৮, জামায়াতে ইসলামী ৬। তখন দৈনিক আমাদের সময় ডক কম-এর সংবাদ শিরোনাম হলো-৫৬ উপজেলার ফলাফলে বিএনপি ২৬, আওয়ামী লীগ ১৬, জামায়াত ৮, অন্যান্য ৬। কালের কণ্ঠের শিরোনাম ছিল ৫০ উপজেলায় বিএনপি ২১, আওয়ামী লীগ ১৭, জামায়াতে ইসলামী ৬, অন্যান্য ৬।
বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ১০ মিনিটের এই ফলাফল চিত্র ছিল পত্রিকাগুলোতে। একই সময়ে মানব জমিন, কালের কণ্ঠ এবং আমাদের সময় ডটকম-এর চিত্র ছিল বিএনপি এগিয়ে রয়েছে। এছাড়া আমাদের সময় ডটকম বলেছে জামায়াতে ইসলামী ৮, মানব জমিন এবং কালের কণ্ঠে তখন জামায়াতে ইসলামী ৬। সবগুলোর উপজেলার ফলাফল আসতে তখনও বাকি এটা সবাই জানে। তবে প্রথম আলো, সমকাল এবং ইত্তেফাকের ভূমিকা মানুষ দেখেছে তখন। অন্য গণমাধ্যমগুলোতে যখন ফলাফলে বিএনপি স্পষ্ট এগিয়ে থাকার চিত্র,
প্রথম আলো তখন বলছে আওয়ামী লীগ ১২, বিএনপি ৬। জামায়াতে ইসলামীর কোনো খবর নেই।
সমকালের চিত্রটা আরও জঘন্য। তারা মনে হয় লজ্জাই পাচ্ছিল বিএনপির এগিয়ে থাকায়। সমকালে তখন ১৩টির ফলাফলে বলা হয় আওয়ামী লীগ ৮, বিএনপি ৩। ইউপিডিএফ এবং মান্নান ভুইয়া সমর্থক পরিষদের একটি তারা খুঁজে পায় তখন। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর কোনো ফলাফল তারা খুঁজে পায়নি। এই হলো তথাকথিত বনেদি সম্পাদকদের সম্পাদনায় প্রকাশিত আওয়ামী-বামপন্থি পত্রিকার চরিত্র। তারাই আবার নিজেদের স্বগৌরবে স্বঘোষিত নিরপেক্ষ (!) সম্পাদক হিসেবে দাবি করেন। যদিও নিজেদের লেখায় শেখ মুজিবুর রহমানকে তাদের আদর্শিক পিতা হিসেবে উল্লেখ করেই নিরপেক্ষ (!) দাবি করে থাকেন।
সমকাল, প্রথম আলো এবং ইত্তেফাকের অনলাইনে ফলাফল দেখে তখন মনে হয়েছে তারা অপেক্ষায় ছিলেন জোর জবরদস্তির ফলে ফলাফল হয়তো আওয়ামী লীগের অনুকূলে আসবে। নতুবা যদি আওয়ামী লীগ সরকারি প্রভাবে ফলাফল পাল্টে দিতে পারে সেটাকে বিজয় হিসেবে ফলাও করে প্রচার করা। যাতে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়। তাদের প্রচারণায় যাতে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে। আসলেই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে মনে মনে ভাবতে থাকে। তাদের সেই খায়েশ কিছু কিছু জায়গায় পূরণ হয়েছে। সরকারি প্রভাবে রাতে অনেক উপজেলায় ফলাফল আওয়ামী লীগের অনুকূলে ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু অনেক জায়গায় ভোটের ব্যবধান এতটাই বেশি ছিল যে, সরকারি প্রভাবেও সমকাল, প্রথম আলো এবং ইত্তেফাকের সেই খায়েশ পূরণের আর সুযোগ ছিল না।
সর্বশেষ সব উপজেলার চূড়ান্ত ফলাফল বের হওয়ার পর বাধ্য হয়ে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর বিজয় লিখতে হয়েছে তাদের। তারা হয়তো আরো লজ্জা পেয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতে ইসলামীর প্রাধান্য দেখে। ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের চেয়ে এগিয়ে। আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে ৩০ উপজেলায় এবং জামায়াতে ইসলামী ৩২টি উপজেলায়। এ খবরও তাদের ছাপতে হয়েছে।
এ পর্যন্ত প্রকাশিত উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে বিএনপি ৬৭, ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে ১০৪টিতে বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগ ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) ৬০টি এবং ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা ৬৯টিতে বিজয়ী। জামায়াতে ইসলামী ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) ৫৫টি এবং ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) ১৯টিতে বিজয়ী। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য, এবারই প্রথম জামায়াতে ইসলামীর মহিলা প্রার্থীরা সরাসরি ভোটে অংশ নিয়েছেন। অংশগ্রহণ অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর মহিলা প্রার্থীদের বিজয় তাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে হয়। কারণ পরাজিত হওয়ার সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগ জায়গায়ই তাদের মহিলা প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলই বলে দিচ্ছে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর ভোটের ঐক্য কেন ফাটল ধরাতে মরিয়া আওয়ামী-বামরা। এমনকি হিন্দুস্তানের উজির-আমলারা পর্যন্ত ব্যস্ত ভোটের ঐক্যে ফাটল ধরাতে। বাংলাদেশের ভোটে জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপির ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারলেই তাদের বিজয়ের সম্ভাবনা জাগে। নতুবা কখনো সম্ভব হবে না। আর সেটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে উপজেলা নির্বাচন।
হিন্দুস্তানপন্থী আওয়ামী-বাম মিডিয়াগুলো হরহামেশা বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যে ফাটল ধরাতে ইনিয়ে-বিনিয়ে লেখেন। এ লেখার মূল উদ্দেশ্যই হলো ১৯ দলীয় জোটের ঐক্যে ফাটল ধরানো। জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপির ভোট বিভক্ত করা। এই ভোট বিভক্ত করতে পারলেই ফায়দা তাদের ঘরে যাবে। এটা তারা ভালো করেই জানেন। ভোট বিভক্তির ফলেই ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে বিজয়ী হতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ। তখন ১৪৫ সিটে বিজয়ী হয় দলটি। জাতীয় পার্টির সমর্থনে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয় তখন। বিএনপি তখন এককভাবে ১১৬ সিটে বিজয়ী হয়। সেই বছর জামায়াতে ইসলামী এককভাবে বিজয়ী হয়েছিল ৩টিতে। ভোট বিভক্তির খেসরাত ছিল এটি। ১৯৯৬ সালে ভোট বিভক্তির খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে পুরো দেশবাসীকে। ভোট বিভক্তির জায়গাটিতেই সতর্ক থাকতে হবে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীকে। দুই দলেরই দায়িত্ব রয়েছে সেদিকে খেয়াল রাখা। উপজেলা নির্বাচনের পর হয়তো ঐক্যে ফাটলের আরো বড় অপচেষ্টা চালানো হতে পারে।

মতামতের জন্য এই পত্রিকার সম্পাদক দায়ী নহেন।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!