DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সরকারের নতুন কৌশল: একই মামলায় জামিন পেয়েছেন গয়েশ্বর, মিন্টু, পাননি মির্জা ফখরুল

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে আদালত দুই ধরণের আচরণ করে। একই মামলায় আগে আওয়ামী লীগের নেতারা জামিন পেলেও বিএনপি নেতারা পেতেন না। এখন খোদ বিএনপি নেতাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করছে আদালত। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও বাসে আগুনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার জামিন পাননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অথচ একই মামলায় গত ২২ জানুয়ারি আগাম জামিন পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ১৫ জানুয়ারি জামিন পেয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু।

‘একই মামলায় আদালত কাউকে জামিন দিচ্ছেন আবার কাউকে জামিন দিচ্ছেন না’-কারণ কি জানতে চাইলে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী অ্যাডভোকে জয়নুল আবেদীন মেজবাহ কিছুক্ষণ হাসেন। এরপর হাসতে হাসতে আউটলুককে বলেন, ‘আশা করি আদালত আমাদের ওপর সদয় হবেন।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আউটলুককে বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করে বলা হচ্ছে সরকারের নির্দেশে আদালত চলছে। কার জামিন হবে কার হবে না তা সরকারের নির্দেশেই হয়। একই মামলায় কাউকে জামিন দেওয়া হচ্ছে আবার কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি দলের নেতাদের মধ্যে পারষ্পারিক সন্দেহ, অবিশ্বাস তৈরি করতে সরকার এমনটা করতে পারে বলে আমার ধারণ।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিনের আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবীরা। কিন্তু আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

এর আগে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয় গত বছর ২৯ অক্টোবর। ওইদিন সকালে তাকে আটক করার পর বিকেলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি হাইকোর্ট মির্জা ফখরুলের জামিন নামঞ্জুর করেন। এরপর গত বুধবার সিএমএম আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়। আদালত আজ শুনানির দিন ধার্য করেন।

গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও বাসে আগুনের অভিযোগে করা পৃথক দুই মামলায় দলটির বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত আগাম জামিন পেয়েছেন। রমনা থানায় করা ওই দুই মামলায় আগাম জামিন চেয়ে তার করা আবেদনের শুনানি শেষে ঐদিন বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমš^য়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এরপর গত ২২ জানুয়ারি একই মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের আগাম জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাকে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত আগাম জামিন দেওয়া হয়। এসব মামলায় আগাম জামিন চেয়ে তার করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ সোমবার বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমš^য়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা–কর্মীরা দুপুর একটার সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগে রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক মফিজুর রহমান মামলা দায়ের করেন। ২৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে মির্জা ফখরুলকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এই মামলায় মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল, বরকত উল্লাহ বুলুসহ ৭২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামিও রয়েছেন।

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর পল্টন শাহজাহানপুর রমনা থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। এর মধ্যে ১১টি মামলায় মির্জা ফখরুলকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ১০ মামলায় মির্জা ফখরুল জামিন পেয়েছেন। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় তিনি কারাগারে রয়েছেন।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলতেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই। আইনের শাসন এখন আওয়ামী শাসনে পরিণত হয়েছে।  জামিনসহ যে কোনো আইনী সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করে আদালত। শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি আর পাচারের সঙ্গে জড়িত সংসদ সদস্য পাপুলের স্ত্রী ও কন্যা জামিন পেয়েছেন। অথচ মিথ্যা অভিযোগে এদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হয় না।’ তিনি বলেন, ‘দেশে এখন হত্যাকাণ্ডের আসামিদের জামিন হয়, ক্যাসিনোকাণ্ডের হোতাদের জামিন হয়, টাকা পাচারকাণ্ডের হোতাদের জামিন হয়, অথচ জামিন হয় না গণতন্ত্রকামী নেতাকর্মীদের।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!