DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞাঃ শামীম ওসমানকে ভিসা দিলোনা আমেরিকা

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নারায়ণগঞ্জ তো বটেই সারা বাংলাদেশেই প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। সম্প্রতি শামীম ওসমানের ‘খেলা হবে’ ডায়লগের কল্যাণে তো দেশ জুরে ব্যপক আলোচনায় পরিনত হন শামীম ওসমান। প্রভাবশালী এই আওয়ামীলীগ নেতাকে সম্প্রতি দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে সপরিবারে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। সামনে কড়া নাড়ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে।

এমনকি এরই মধ্যে আমেরিকা নতুন করে সাংশন দেয়ার কথা ভাবছে বলে অনেকে মতামত দিচ্ছেন। তবে এর মধ্যে শামীম ওসমানকে নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন ‘সময় টিভি’র টকশোতে দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার এমিরেটাস সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বিস্ময়কর তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকার সাংশনের আওতায় শামীম ওসমানকে ভিসা দিচ্ছেনা আমেরিকা। আফজাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সঞ্চালক বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমেরিকা সাংশন দিয়েছে।বিশেষ করে রাশিয়া, ইরানের মতো দেশে সাংশন হয়েছে আমেরিকার।

তাহলে ছোট-খাটো বিষয় নিয়েও যদি আমেরিকা সাংশন দেয় তাহলে কি ধরণের প্রভাব আসতে পারে। এর উত্তরে সিনিয়র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে টু বি অনেস্ট আমরা এবিষয়ে দুটি বক্তব্য আছে। তিনি বলেন, প্রথমত আমেরিকা এই সাংশনগুলো দেয় এটি তাদের ইচ্ছা। তাদেরকে দমন করার মতোও আমাদের কোন ইন্সট্রুমেন্ট নাই। কিন্তু তারা যেটি করছে ছোটখাটো বিষয়ে, যেমন ‘শামীম ওসমানের ভিসাটা দিচ্ছেনা’। এরকম কিন্তু আমরা খেয়াল করিনা, এমনকি জানিও না। দুই চারজন বাংলাদেশে আছেন কিংবা ভারতে আছেন তাকে দিচ্ছেনা। এগুলো লঘু মাত্রার। ট্রাভেলের উপর সাংশন।’

এদিকে শামীম ওসমানের একাধিক ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাংসদ শামীম ওসমানকে এর আগেও আমেরিকা ভিসা দিতে গড়িমসি করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভিসা পান শামীম ওসমান। সেখানে বেশ কয়েকদিন ঘুরেও আসেন পরিবারসহ। ক্রুজশিপে তিনি স্ট্যাচু অব লিবার্টিও দেখতে যান। সেখান থেকে ফেরার পর আমেরিকার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে কিছুদিন আগে। আবার ভিসার আবেদন করলে তাকে ভিসা দিচ্ছেনা আমেরিকা। নাইমুল ইসলাম খানের বক্তব্যে সেটিই উঠে এসেছে।

এদিকে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গেল কয়েকমাস ধরেই মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন শামীম ওসমান। কিন্তু আদতে তিনি মাঠে নামেননি। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নানা সমালোচনা তৈরি হলেও তিনি মাঠে নামেন নি। সূত্র বলছে, শামীম ওসমান দ্বাদশ নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকতেই বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছেন। শামীম ওসমান সম্প্রতি বেশ কয়েকবার দুবাই সফর করেছেন। এছাড়া সুইজারল্যান্ডেও গিয়েছেন। এরআগে তুরস্ক সফর করেছেন।

সূত্র জানায়, এমন অনেক দেশের ভিসা শামীম ওসমান সপরিবারে করা আছে। সেগুলোতে তিনি ভ্রমণ করার জন্য রেখেছেন। আরেকদিকে জনপ্রিয় এই সাংসদের সমালোচকরা বলছেন, শামীম ওসমান ২০০১ সালের নির্বাচনের পরাজয়ের পরের কথা মনে করেই এমন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। সেবার শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের কাছে পরাজিত হন। এরপর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে বেশ কয়েকবছর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর দেশে ফিরেন।

দেশ ছেড়ে পালানোর সময় তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল এবং নানা ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল যার দরুণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে শামীম ওসমান নির্বাচনের নেতিবাচক ফলাফল কিংবা নির্বাচনের নিজের মনোনয়নের নিশ্চয়তার বিষয়টি মাথায় রেখে কৌশলী হয়েই বিদেশ সফরের দিকটি আমলে নিয়েছেন। সম্প্রতি শামীম ওমসান কর্মসূচি কিংবা মাঠে উন্নয়নের প্রচারণাতেও খুব বেশি সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছেনা। এমিরেটাস সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খানের বক্তব্যে আমেরিকার লঘু সাংশন হিসেবে শামীম ওসমানের ট্রাভেল ভিসা না দেয়ার বিষয়টি তাই নানা আলোচনা তৈরি করেছে।

নাইমুল ইসলাম খান একই অনুষ্ঠানে বলেন, আমি ধারণা করি, যদি কোন সাংশন আসে লঘু মাপের আসবে। আমার সেকেন্ড আর্গুমেন্ট যেটি মৌলিক আর্গুমেন্ট, আমেরিকা সব সময় রুল অব ল এর কথা বলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব এসটাবলিশড করেছে, সেটি হলো রুল বেজড অর্ডার। এখন আমরা র‌্যাবকে যে কারণে দোষী করি, যে তুমি একজনকে শাস্তি দিয়ে দিচ্ছ, মেরে ফেলছো হয়তো বিনা বিচারে।

আমরা এক্সট্রা জুডিশিয়ার কিলিং বলতে বোঝাই যেটা তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ দেয়া হলো না। এখন একটা জাতীয় পর্যায়ের ঘটনা। আমেরিকা এগুলো নিয়ে আপত্তি করছে। আমেরিকা তাহলে কী করছে, আমেরিকা বৈশ্বিক পর্যায়ে আরেকটি দেশকে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে আমাদের রুল বেজড অর্ডার এগুলো বিচার করার জন্য তো আমাদের সংস্থা আছে। সর্বোচ্চ সংস্থা হচ্ছে জাতিসংঘ।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যদি কারো অভিযোগ থাকে, তাহলে জাতিসংঘে প্রস্তাব আনো। সেখানে হিয়ারিং হোক, সেখানে বাংলাদেশ ডিফেন্ড করুক। কিন্তু এটা তো হচ্ছেনা। এটাও কিন্তু এক্সট্রা জুডিশিয়ারি পানিশমেন্ট। পানিশমেন্ট সারা দুনিয়াতে একটা অশান্তি তৈরি করছে। একটা অসন্তোষ একটা প্রতিবাদের আবহ তৈরি হয়ে গেছে। আমেরিকাও এটি নিয়ে খুব একটা কমফোরটেবল না। তাদেরও এটি রিভিও করতে হবে। নাহলে আমেরিকার বাইরে বৈশ্বিক ছড়িটা অনেকটা চলে যাচ্ছে। তারা এটা নিয়ে সতর্ক হবে, তাদের স্বার্থ তারা দেখবে।

পৃথিবীর যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের দ্বারা তৈরি হয়েছে তা তাদের কার্যকর করা উচিৎ। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেসব নিয়ে একটা ফোরাম করো। যেখানে এটি নিয়ে আলোচনা হবে। সংশোধনী হবে, জাজমেন্ট হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। আমার মনে হয় আমেরিকা অচিরেই এটি ভেবে দেখবে। আমেরিকার সাংশনে অন্য দেশের ক্ষতি হয়েছে কিন্তু তাদেরও বিশেষ কোন লাভ হয় নাই। ডলারের বিপরীতে অন্যভাবে লেনদেন শুরু হয়ে গেছে।

এগুলো আমেরিকার জন্য সতর্ক সংকেত। বাংলাদেশ তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্ট। বাংলাদেশের মতো গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশ যাকে গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে গড়তে আগ্রহী তারা এমন দেশের উপর সাংশন দিয়ে রাশিয়া চায়নার দিকে ঠেলে দেয়া হয় তবে পশ্চিমের যে আগ্রহ গণতন্ত্র এবং রুল বেজড রাষ্ট্রের দিকে আনা সেখানেও তারা পিছাবে। এগুলো দিয়ে আমেরিকা কোথাও সফল হয় নাই। বাংলাদেশের উপর সাংশন দিলে তাদের জন্য একটা ক্ষতিকর উদাহরণ তৈরি হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!