DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

শাওন হত্যাঃএসআই কনক চাইনিজ রাইফেল কোথ্বেকে পেলোঃমির্জা ফখরুলের প্রশ্ন

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নারায়ণগঞ্জে যুবদলকর্মী শাওন প্রধানকে গুলি করে হত্যার জন্য ডিবি পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমানকে (কনক) দায়ী করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

 

তিনি বলেন, এসআই কনকের চায়নিজ রাইফেল রাখার কোনো এখতিয়ার ছিল না। তাহলে এই চায়নিজ রাইফেলটা এল কোত্থেকে। কোন আদেশ বলে সে গুলি করল আমার ভাইকে।

পুলিশকে কি সেই এখতিয়ার দেয়া হয়েছে যে, একজন মানুষকে বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করবে? এই হত্যার জন্য দায়ী কে? সরকারকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে? অবশ্যই তদন্ত করে এসআই মাহফুজুর রহমানকে আইনের আওতায় এনে সাজা দিতে হবে।

শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সারা দেশ সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশের হামলা এবং নারায়ণগঞ্জে যুবদল নেতা শাওনকে পুলিশ কর্তৃক গুলি চালিয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যার প্রতিবাদে’

এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কার করে জানতে চাই, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কী কারণে সরকারের পেটুয়া বাহিনী গুলি করেছে। জবাব দিতে হবে।

তিনি বলেন, দুদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের এসপি, আওয়ামী লীগ নেতারা বোঝানোর চেষ্টা করছেন এ ছেলেটা যুবদলের ছেলে নয়, ওয়েল্ডিং ফ্যাক্টরিতে কাজ করত।

যদি তর্কের স্বার্থে ধরেও নিই যে সে যুবদলের কর্মী নয়, একটা ওয়ার্কশপের কর্মী। তাহলে এই সরকার, পুলিশকে সেই এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে একটা মানুষকে বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করার?

এ সময় মির্জা ফখরুল নারায়ণগঞ্জে শাওন নিহত হওয়ার ঘটনায় রাইফেল তাক করা এসআই মাহফুজুর রহমানের ছবি দেখিয়ে বলেন, এই সভা থেকে আমরা দাবি করছি, এই ছবির তদন্ত করা হোক এবং এই রাইফেল নিয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক গুলি করেছে, তার তদন্ত করে তাকে আইনের আওতায় এনে সাজা দিতে হবে।

সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, যদি সাজা না দেন, আমরাও বসে থাকব না, বসে নেই। ভোলাতে মামলা করেছি, নারায়ণগঞ্জেও মামলা করব।

যতবার আপনারা আইন ভঙ্গ করবেন, আমার ভাইদের ওপর অত্যাচার করবেন, ততবার মামলা হবে। ভাবছেন ক্ষমতায় আছেন, মামলা কী হবে। মামলায় হয়, মামলায় খুবই হয়।

আওয়ামী লীগ আরেকটি পাতানো নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার পাঁয়তারা করছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সে কারণে আবার তারা বিরোধী দলের ওপর চড়াও হতে শুরু করেছে।

গুলি করছে, ভাঙচুর করছে এবং হত্যা করছে মানুষকে। কিন্তু এবার কি তা পারবে? জনগণ কি তাদের এভাবে একা নির্বাচন করতে দেবে? আমরা কি আমাদের ভাইদের হত্যার প্রতিশোধ নেব না?

আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, নির্যাতন করছে-তার প্রতিশোধ নেব না? এবার আর কোনোভাবেই একতরফা নির্বাচন করতে দেব না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভোলায় দুজনসহ বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তিনজনকে তারা হত্যা করেছে। মামলায় আসামির সংখ্যা এখন প্রায় ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

এই মামলা দিয়ে, হামলা করে, আহত ও পঙ্গু করে আবারও তারা একই কায়দায় বিরোধী দলকে মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে চায়। মাঠের ভেতরে একা থেকেই আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে চায়। এবার আর তা হবে না।

সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনও সময় আছে, জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন।

সংসদ বাতিল করুন, সংসদ বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এ দেশের জনগণ আপনাদের কোনো দিনই ক্ষমা করবে না। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার জানে, কোনো পরিস্থিতিতেই তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। সুতরাং হত্যা করো। কিন্তু আমাদের কর্মীরা মার খেতে শিখেছে, রক্ত দিতে শিখেছে। সুতরাং শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। 

দুপুর ১টা থেকে সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাগম হতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। বিএনপিসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানারসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন। ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে নেতারা বক্তব্য দেন।

এদিকে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তা বলায় গড়ে তুলতে দেখা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন-বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম আজাদ, শামা ওবায়েদ, মীর সরাফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, ইশরাক হোসেন, যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের নেত্রী আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।

এবার কোনোমতেই পরাজিত হব না : এদিকে সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এবার কোনোমতেই পরাজিত হব না। কারণ, এবার বিজয় লাভ করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের যৌথ উদ্যোগে এ সভা হয়।

এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাংগঠনিক দক্ষতার প্রশংসা করেন বিএনপির মহাসচিব। সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওয়ান-ইলেভেনের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, সে সময়ে ‘মাইনাস টু’ বলে একটা কথা খুব প্রচার হয়েছিল।

মাইনাস টু তো হয়নি, হয়েছে মাইনাস ওয়ান। তাদের উদ্দেশ ছিল খালেদা জিয়াসহ বিএনপিকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র বিশ্বাসীদের ‘মাইনাস’ করতেই দেশে ওয়ান-ইলেভেন ঘটানো হয়।

বাংলাদেশ ছাত্র ফোরামের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা শাম্মী আখতার, শামা ওবায়েদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মোরতাজুল করীম বাদরু, মোস্তাফিজুর রহমান, ফজলুর রহমান খোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!