DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে জেলে গিয়ে নতুন করে আবেদন করতে হবে: আনিসুল হক

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে মিডনাইট হাসিনা সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়া যদি এখন বলেন, ‘আপনারা আমাকে যে শর্তযুক্ত (শর্তে) ছেড়ে দিয়েছেন, এটা আমি মানি না, আমাকে জেলে নিয়ে যান, আমি আবার দরখাস্ত করব। তখন উনি আবার দরখাস্ত করতে পারেন।’ এই অবস্থায় ফৌজদারি কার্যবিধিতে কোথাও নেই যে তাকে আমরা আগের দরখাস্তের বিবেচনায় বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারব।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কাউকে বিদেশ যেতে দেওয়া যাবে না, এটা আমি কখনো বলিনি। একবার নিষ্পত্তিকৃত কোনো দরখাস্ত আবার পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় নেই।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কেএম আজাদ। ক্র্যাব সভাপতি মিজান মালিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, যে মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেটি কিন্তু আওয়ামী লীগ করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলা হয়েছে। সবকিছুর পর রায় হয়েছে। তিনি যখন সাজা ভোগ করছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি বিশেষ শর্তে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, আইনে আছে শর্তযুক্ত, শর্তমুক্ত। খালেদা জিয়ার দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। পুনরায় যদি একটি দরখাস্ত করা হয়, সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমি এখানেও বলছি, সংসদেও বলেছি। শর্তযুক্ত শর্তে তিনি সাজা স্থগিতে যে মুক্তি পেয়েছেন, সেটি যদি না মেনে পুনরায় জেলে যেতে চান, সেটাও হতে পারে। কিন্তু এই অবস্থায় ফৌজদারি কার্যবিধির কোথাও নেই যে তাকে আমরা আগের দরখাস্ত বিবেচনা করে বিদেশ যাওয়ার সুবিধা করে দিতে পারি, সেটা নেই।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী তার সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি তারা সর্বশেষ টেকনোলজির একটি ক্যাপসুল আমদানি করেছেন। যেটা খেয়ে ফেললে ভেতরে গিয়ে ক্যামেরা কাজ করবে। ভেতরের সব অবস্থান ক্যামেরাবন্দি হবে। আমি তার সর্বশেষ অবস্থা জানি না, তবে যতটুকু জানি তার শারীরিক অবস্থা আগের চাইতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখানে তিনি যতটুকু সম্ভব সুচিকিৎসা পাচ্ছেন। সেখানে সরকারের কোনো হাত নেই।

নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসি গঠনে আইন করা উচিত বলে আমি মনে করি। আইন হবে। কিন্তু যদি ওই করোনার সময়ে সংসদ বসে, তবে আমরা সব সংসদ সদস্যকে ডাকি না। আমাকে বলা হয়েছিল, এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ব্যাপারে একটি অর্ডিন্যান্স করে দেন। আমি বলেছি, সেটা সম্ভব না। আমি এই সংসদকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচন কমিশনের যেটি সংবিধান বলছে আইন করে দিতে, এ রকম একটা আইন সংসদকে পাশ কাটিয়ে করতে রাজি না। মন্ত্রী আরও বলেন, আগামী নির্বাচন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি সংলাপ শুরু করেছেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি নিশ্চয়ই তার সুবিবেচনায় যোগ্য মনে করে সংবিধানের পরিধির মধ্যে তার যে ক্ষমতা, তা ব্যবহার করবেন। হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে যারা বিচারপতি আছেন, আমি মনে করি, তারা প্রত্যেকে প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্য, যোগ্যতা রাখেন। দেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রয়োজন আছে-এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আইন কখনোই বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য করা হয়নি। এ সময় গণমাধ্যমকর্মী আইন পাশে অগ্রগতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।

যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োজন আছে। যে কোনো দেশের জন্যই প্রয়োজন আছে। আমি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হই, তখন কিন্তু আমি দারুণভাবে উপলব্ধি করি। কোনো প্রতিষ্ঠান যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তারা উপলব্ধি করে। যখন দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখনও কিন্তু আমরা সবাই মিলে উপলব্ধি করি যে, আসলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির প্রয়োজন আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই আইন হয়েছে, আমাদের দেশেও হয়েছে। কিন্তু আমরা একটি শঙ্কার মধ্যে সব সময় থাকি যে, আইনটির যেন অপপ্রয়োগ না হয়। বিশেষ করে আমরা যারা সাংবাদিকতা পেশায় আছি, তাদের ক্ষেত্রে যেন এটির অপপ্রয়োগ না হয়। এ নিয়ে আমরা আইনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অকারণে, অহেতুক এই আইনের প্রয়োগ হবে না। আমরা এই বক্তব্যে আস্থা রাখতে চাই। বিশ্বাস রাখতে চাই।

র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কোনো একটা ঘটনা ঘটলে আমরা নিজস্ব চ্যানেলে খবর নিই, খবর দিতাম। এখন সাংবাদিকরা অনেক কিছু জানছে, আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আগে চলে আসছে। যে কারণে সাংবাদিকতাও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকদের সুবিধার জন্য র‌্যাব মিডিয়া সেন্টার কাওরান বাজারে আনা হয়েছে।

কর্নেল কেএম আজাদ বলেন, আমরা যে কাজটি করি, আপনারা তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে জাতির সামনে তুলে ধরেন। দুটিই কিন্তু কষ্টকর। কারণ একটা জিনিসের ফর্ম থেকে মানুষের জন্য বোধগম্য করা চাট্টিখানি কথা নয়, যেটা সাংবাদিকরা করেন। মহামারি করোনায় প্রথম সারির যোদ্ধা হিসাবে সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় যারা অসুস্থ হয়েছেন, তাদের সুস্থতা কামনা করি এবং যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আপনাদের উদ্দেশে আমার স্যালুট। আপনারা এগিয়ে যান। আপনারা জাতির বিবেক।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ক্র্যাব-র‌্যাব ভাই-ভাই। আগামী দিনে আমাদের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!