DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

কারফিউ-লকডাউন কোনো সমাধান নয়,আগে ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার দিন: মির্জা ফখরুল

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে উদ্দেশে করে বলেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউন কিংবা কারফিউ জারি কোনো সমাধান নয়। সাধারণ মানুষের জন্য যদি অর্থের ব্যবস্থা করতে না পারেন, খাদ্যের ব্যবস্থা করতে না পারেন- তা হলে এ ধরনের অপরিকল্পিত লকডাউন কোনো সঠিক সমাধান আনতে পারবে না। দেশে পরপর লকডাউন হলেও সামাজিক-শারীরিক দূরত্ব সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। লকডাউনে কি দেখা যাচ্ছে? মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে। অনেকে খাদ্যাভাবে কষ্ট পাচ্ছেন।

গত রোববার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পরামর্শ কমিটির কারফিউ জারির পরামর্শ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। শনিবার অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভা হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, লকডাউনের লক্ষ্যটা হচ্ছে- মানুষকে মানুষের কাছ থেকে দূরে রেখে, দূরত্ব সৃষ্টি করে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা। সেটার জন্য তো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোথায় সেই সচেতনতা? খালি ধমক দিয়ে আর গরিব মানুষকে জেলের মধ্যে পুরে দিলে তো হবে না।

তিনি অভিযোগ করেন, আজকে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষ কোনো রকমের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। ইনফরমাল সেক্টর তো এমনিতেই ছোট ছোট পুঁজি নিয়ে কাজ করে। দুবার লকডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের পুঁজি হারিয়ে ফেলেছেন। তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন, পথে বসে গেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েকদিন আগে পত্রপত্রিকায় বেরিয়েছে-স্বাস্থ্যমন্ত্রী আকুল আবেদন জানিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, কী পরিমাণ টাকা তারা করোনায় ব্যয় করছেন। একটা টেস্টের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা ব্যয় করছেন। তারা যে হিসাব দিয়েছেন তাতে এই কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, কোথাও কোনো রকমের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ নেই, অক্সিজেন নেই, সিলিন্ডার নেই, বেড নেই। চরম অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি। যার ফলে আজকে করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।’ ঢাকা জেলার সব হাসপাতালে সাংবাদিকদের করোনা সংক্রান্ত কোনো তথ্য না দিতে সিভিল সার্জনের সার্কুলার জারির নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স নিচ্ছেন। জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট নিচ্ছেন, অথচ জনগণের জন্য কোনো ব্যয় করছেন না। কীসে ব্যয় করছেন? মেগা প্রজেক্টে ব্যয় করছেন, যেটাতে এ মুহূর্তে দেশের প্রান্তিক মানুষগুলোকে বাঁচানোর কোনো পথ নেই। এখন তাদের বাঁচানো না গেলে সত্যিকার অর্থেই তারা দারিদ্র্যের নিুস্তরে নেমে যাবেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের (সরকার) সমস্যাটা হচ্ছে, তারা কোনো সমালোচনা শুনতে চান না। এই যে তাদের একলা চলো নীতি, দুর্নীতি করো নীতি, লুটপাট করো নীতি- এটাই তো দেশটাকে, জাতিকে চরম বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে গেছে।’

করোনা মোকাবিলায় সরকারের ওয়ার্ড পর্যায় কমিটি গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন আবার ওয়ার্ড কমিটিতে দুর্নীতি শুরু হবে। ওখানে টাকা-পয়সা ভাগ করে নেবে।’

খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ না দেওয়া গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য তাদের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে আটক ও তার প্রতি অমানবিক আচরণের কথা বলেছে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতীয় মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে কর্তৃত্ববাদী বলে উল্লেখ করে বলেছে, এ সরকারের শাসনে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুমের ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রতিবেদনে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সাজা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। এমনকি সুচিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এটা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। অবিলম্বে খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক কারণে আটক সব ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প- নামের আড়ালে উপহারের ঘর নির্মাণে ‘হরিলুট’ চলছে। অবিলম্বে দুর্নীতির লোক দেখানো প্রকল্প বন্ধ করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের ‘হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ’ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার বিগ্রেডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে যে, প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনাটি হত্যার পর্যায়ে পড়ে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থা কলকারখানার নির্মাণ মান, পরিবেশ এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, নিয়মিত পরিদর্শন ও নজরদারি না করার কারণেই এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। ফায়ার ব্রিগেডের ভূমিকা সম্পর্কেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ২৭ ঘণ্টা ধরে আগুন নেভাতে না পারাটা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!