DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

এতো কিছুর পরও কিভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে জেকেজি হেলথের চেয়ারপারসন ডা.সাবরিনা?

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  অনুমোদন ছাড়াই টাকার বিনিময়ে করোনার নমুনা সংগ্রহের পর টেস্ট না করেই করোনার রেজাল্ট দিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করা জেকেজি হেলথকেয়ারের কয়েকজন কর্মকর্তা কারাগারে থাকলেও এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।

জেকেজি হেলথ কী করে করোনার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেল, পরীক্ষা ছাড়াই করোনার রিপোর্ট প্রদানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেউ জড়িত রয়েছেন কিনা- এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেজিস্ট্রার চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও তিনি ছিলেন জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারপারসন। এই পরিচয়ে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং কথা বলতেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। এটি সরকারি চাকরি বিধিমালার সুষ্পষ্ট লংঘণ। তার আবেদনেই জেকেজি হেলথকেয়ার করোনার নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপনের কাজ পায়। তিনি নিজে জেকেজির কর্মীদের তিতুমীর কলেজে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। অথচ  করোনা টেস্টের নামে দিনের পর দিন মানুষকে ঠকিয়ে আসছিল তার প্রতিষ্ঠান।  প্রতারণার দায়ে স্বামী আরিফ চৌধুরীসহ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন ৬ জন।

যদিও এখন জেকেজি’র মহা দুর্নীতি ধরা পরবার পরে ডা. সাবরিনা দাবি করেছেন, তিনি ১ মাস আগেই পদ ছেড়ে দিয়েছেন। আবার বলছেন যে তিনি কখনওই চেয়ারম্যান ছিলেন না, সবাই নাকি মুখে মুখে ডাকতো। অনলাইনে এই সেলিব্রিটির বহু ভিডিও ক্লিপিংস আছে যেখানে তিনি নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দেশ বিদেশে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে আরিফুল চৌধুরী ও ডাঃ সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাদের অত্যন্ত রোমান্টিক চলাফেরা, ঘুরে বেড়ানো, অন্তরঙ্গ মধুমাখা ছবি রীতিমত ঈর্ষা জাগানিয়া ছিলো। এখন স্বামী ফেঁসে যাওয়ায় তিনি জানাচ্ছেন যে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিলো না, তার স্বামী নাকি প্রায়ই তাকে মারধোর করতো।

সরকারি চাকরির বিধিমালার সুষ্পষ্ট লংঘণ এবং প্রতারক চক্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকলেও ডা. সাবরিনা চৌধুরী এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। প্রতারক স্বামীর সব শক্তির উৎস এই চিকিৎসককে কেনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তার খুঁটির জোর কোথায়- এসব নিয়ে জনমনে দানা বেঁধেছে নানা প্রশ্ন।

পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজি হেলথকেয়ারের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত অনেকটাই গুছিয়ে আনা হয়েছে। তাদেরসন্দেহ, এর পেছনে জড়িত রয়েছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও। ডা. সাবরিনার কর্মকাণ্ডও অনুসন্ধান করছে পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো.হারুন অর রশিদ বলেন, তাদের সঙ্গে সমাজের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সম্পর্ক থাকতে পারে। তাই আমরা তদন্ত করে দেখছি এর সঙ্গে অন্য দফতরের কোন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন কি না। এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না সেটাও আমরা তদন্ত করে দেখছি।

জেকেজির অপকর্ম যখন প্রকাশ্যে, তখনো তাদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে দায়সারা উত্তর দেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ওরা তো নমুনা সংগ্রহ করার জন্য আমাদের সাথে একটা চুক্তি করেছিল। সেটাতো আমরা সেদিনই বাতিল করে দিয়েছি। সেটা তো ওভাল গ্রুপের ( জেকেজি হেলথ কেয়ার) তাদের সাথে তো আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের তো ছিল, তারা নমুনা সংগ্রহ করতে সাহায্য করবে। আমরা সেদিনই বাতিল করেছি।

পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজির প্রতারণার সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারা জড়িত, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো.হারুন অর রশিদ বলেন, তারা যে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা কিন্তু আমরা এখনো দেখিনি। এ ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। দ্রুতই জড়িতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!