DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

খালেদা জিয়ার আইনজীবি লর্ড কার্লাইলকে ভারতে ঢুকতে দেয়া হলো না কেন ???

PICTURE JEREMY SELWYN

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী  বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড আলেকজান্ডার কার্লাইল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমস্যা তৈরি করতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছে নয়াদিল্লি।

তার ভিসা যে বাতিল করা হয়েছে সে কথা আগেই তাকে জানানো হয়েছিল বলেও দাবি করেছে দিল্লি। তবে ভারতে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় ব্রিটেনের হাউস অব লর্ডসের প্রবীণ এ সদস্য বলেছেন, ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতি আমার শ্রদ্ধা চুরমার হয়ে গেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক চাপের মুখে তারা যেভাবে নতিস্বীকার করল এবং সত্তর বছর বয়সী একজন ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ানের সঙ্গে যে আচরণ করল, তাতে তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত; কৈফিয়ত দেওয়া উচিত।

গতকাল লন্ডন থেকে একটি ভিডিও কনফারেন্স করে এসব কথা বলেন তিনি। দিল্লি বিমানবন্দর থেকেই তাকে ব্রিটেনে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে লন্ডনে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন বলেও জানান কার্লাইল।


এদিকে কার্লাইলকে ভারতে ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনায় বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছে বিএনপি।

দলটি বলেছে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে মুক্তচিন্তা অনুশীলনের সঙ্গে এ ঘটনা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনির্বাচিত সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে এ দেশে গণতন্ত্র অনুশীলনে যে বাধা সৃষ্টি করেছে, তার প্রতিবাদ জানানোর জন্য বিশ্বখ্যাত আইনজীবী লর্ড কার্লাইল দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিলেন।

বাংলাদেশ সরকার তাকে ভিসা না দেওয়ার কারণেই তিনি ভারতে আসতে চেয়েছিলেন। তাকে ভারতে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় আমরা মর্মাহত।
এতে আরও বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে চলমান স্বৈরতান্ত্রিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের অব্যাহত আন্দোলনের প্রতি মুক্তবিশ্বের সমর্থন থাকবে।
এদিকে লর্ড কার্লাইলকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তি তুলে ধরেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভিসায় ভারতে প্রবেশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কার্লাইল যা বলেছেন, এর সঙ্গে তার আসার উদ্দেশ্যের মিল না থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বৃহস্পতিবার বলেন, লর্ড কার্লাইলের ভিসা বাতিলের কথা তাকে আগেই জানানো হয়েছিল। কারণ এখানে আসলে আমাদের দেশের আইন মানতে হবে। তাকে জানতে হবে বাণিজ্যিক ভিসায় এসে সাংবাদিক সম্মেলন করা যায় না।


রবীশ কুমার অভিযোগ করেন, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমস্যা তৈরি করতে তিনি (কার্লাইল) আসছিলেন। এর ফলে বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলোর সঙ্গেও আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হতে পারত। তার কিছু বলার থাকলে উনি কেন লন্ডন থেকে বলেননি? কেন ভারতে এসেছিলেন? 


অন্যদিকে লর্ড কার্লাইলের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি যখন দিল্লিতে নেমে তার ফোন অন করেন, তখন দেখেন তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে বলে বার্তা পাঠানো হয়েছে। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে তাকে জানানো হয়, ভারতে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু ইমিগ্রেশনের কর্মীদের কাছে কোনো জবাবই ছিল না, কেন তাকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। 


ভারত সরকারকে রাজি করিয়ে দিল্লিতে ঢোকার ব্যবস্থা করতে লর্ড কার্লাইল দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনারকেও ফোন করেছিলেন। কিন্তু তিনিও এ ব্যাপারে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।

পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ভারতের সিদ্ধান্ত নড়চড় হওয়ার সুযোগ নেই। এর কিছুক্ষণ পরই কার্লাইলকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের লন্ডনগামী ফিরতি বিমানে উঠিয়ে দেওয়া হয়।


কারাবন্দি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী হিসেবে সম্প্রতি নিযুক্ত হয়েছেন লর্ড কার্লাইল। সেই কাজের সূত্রেই তিনি নয়াদিল্লিতে পা রাখতে চেয়েছিলেন। দিনকয়েক আগে তিনি জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়াকে কীভাবে ‘সাজানো মামলা’য় ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ হেনস্তা করা হচ্ছে, দিল্লিতে এসে সংবাদমাধ্যমের কাছে সেসব তুলে ধরাই তার উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে তার ভিসার আবেদন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলেই তিনি ঢাকার পরিবর্তে দিল্লিতে বসে সংবাদ সম্মেলন করতে চান বলে জানিয়েছিলেন লর্ড কার্লাইল।
বিবিসি বাংলার গতকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, লর্ড কার্লাইল দিল্লিতে বসে সংবাদ সম্মেলন করবেন এ খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকেই দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে যে ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছিল, তা-ও ছিল নজিরবিহীন। সাকুল্যে দিল্লির মাটিতে লর্ড কার্লাইল ছিলেন তিন ঘণ্টা। কিন্তু ওই তিনটি ঘণ্টা ঘিরে ভারত, বাংলাদেশ এবং সম্ভবত যুক্তরাজ্যের সম্পর্কেও যে পরিমাণ তোলপাড় হয়ে গেল, তেমন নজিরও খুব কমই আছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!