DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

চলমান রোহিঙ্গা গনহত্যাকেই সমর্থন দিলেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূচি।

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ   সমগ্র বিশ্বকে হতবাক  রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে অং সান সু চি সেনাবাহিনীর চলমান গণহত্যাকেই সমর্থন করলেন। সাফাই গাইলেন দেশের সেনাপ্রধানের পক্ষেই। এর মাধ্যমে তিনি বিশ্ববাসী ও মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন।

তার ভাষনে পুরো বিশ্ব হতবাক ও স্তম্ভিত হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে মায়ানমার সরকারের উপদেষ্টা অং সান সু চি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপে মায়ানমার কোনোমতেই ভীত নয়।

রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসীদের উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গারা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। মায়ানমার সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ফলে রাখাইনে শান্তি ফিরে না আসা পর্যন্ত সেখানে সেনা অভিযান চলবে। তিনি বিশ্ববাসীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনেকটাই ঔদ্ধত্যের সুরে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণ মিয়ানমার ভয় পায় না।’

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্ব নেতারা মায়ানমারে আসুন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন, দেখুন কেন রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে।

এর আগে এক ভাষণে দেশবাসীকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মায়ানমার কসাই সেনাপ্রধান রোহিঙ্গা ইস্যুতে পুরো দেশবাসীকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মায়ানমার সেনাপ্রধান দাবি করেন, তার দেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন সম্পর্ক নেই।

সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রাখাইন প্রদেশে তাদের ‘উচ্ছেদ অভিযানের’ উদ্দেশ্য হলো ২৫ আগস্ট যেসব রোহিঙ্গা বিদ্রোহী পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়েছে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া। তাদের এই অভিযানে অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। আর এই সহিংসতা থেকে বাঁচতে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

পালিয়ে আসা শরণার্থীরা জানাচ্ছে, সেনাবাহিনীরা তাদেরকে হত্যা করছে ও তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এই অভিযানকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে এ খবর দিয়েছে দ্য ডেইলি মেইল।

খবরে বলা হয়, মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের অবস্থান বহু সময় ধরেই ব্যাপক আলোচিত বিষয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অনেকেই এই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়টিকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখে। এমনকি তাদেরকে রোহিঙ্গা বলেও স্বীকৃতি দেয়না। তাদের কাছে রোহিঙ্গাদের পরিচয় বাঙ্গালি।

মায়ানমার সেনাপ্রধান, জেনারেল মিন অং হয়াইংয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে শনিবার এক পোস্টে বলেন, ‘তারা রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করছে; যা মায়ানমারে জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবে কখনো ছিল না। বাঙালি ইস্যু আমাদের জাতীয় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করতে আমাদেরকে একত্রিত হতে হবে।’

পুরো বিশ্বজুড়ে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর এই নৃশংস অভিযানের সমালোচনা করা হচ্ছে, নিন্দা জানানো হচ্ছে। মায়ানমারের কার্যত বেসামরিক নেত্রি অং সান সুচির হাতে সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই। তবে সামরিক বাহিনীর এই অভিযানের প্রতি নিন্দা প্রকাশ না করায় তিনিও সমালোচিত হয়েছেন ব্যাপকভাবে।

মঙ্গলবার এই নোবেলজয়ী দেশনেত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশবাসীর কাছে বক্তব্য রাখেন। অনেকের ধারণা ছিল এই বক্তব্যে তিনি এতদিন কেন এই ইস্যুতে চুপ ছিলেন তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। কিন্তু তিনি সেদিকে না গিয়ে গণহত্যাকেই সমর্থন করলেন।

এদিকে রাখাইন প্রদেশের এই নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মায়ানমারে এক দূত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই মার্কিন দূত হচ্ছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ডেপুটি সহকারী সচিব প্যাট্রিক মার্ফি। তিনি মায়ানমারের সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করেন।

তবে রাখাইনের আরো উত্তরে, যেখানে সংঘর্ষ বিদ্যমান সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি তাকে। মায়ানমারে ৫০ বছর ধরে চলা সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে এখনও দেশটিতে সামরিক বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। দেশটির সীমান্ত রক্ষা, প্রতিরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!