DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

এবার কলকাতার হোস্টেল থেকে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য সরানোর দাবী

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  কলকাতার বেকার হোস্টেল থেকে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানের একটি মূর্তি সরিয়ে দেওয়ার দাবি আজ এক নতুন মোড় নিয়েছে।

ওই বেকার হোস্টেল এবং শেখ মুজিব যে কলেজে পড়তেন সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ বলছেন মূর্তি সরানোর দাবি অযৌক্তিক। মূর্তি এবং হোস্টেল চত্বরের মসজিদ সম্পূর্ণ পৃথক, তাই ইসলাম ধর্মের সঙ্গে ওই মূর্তি রাখার ব্যাপারে কোনও সংঘাত নেই। মূর্তিটি প্রাক্তণ ছাত্র ও আবাসিক হিসাবে শেখ মুজিবকে সম্মান জানানোর জন্যই স্থাপিত হয়েছে বলে মত ছাত্রছাত্রীদের একাংশের।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী মূর্তি সরানোর বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নেওয়াতে, মূর্তি সরানোর দাবি তুলেছিল যারা, তারা এবার রাজপথের আন্দোলনে নামবে বলে জানিয়েছে।

কলকাতার বেকার হোস্টেলের যে ঘরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমান থাকতেন, সেখান থেকে তাঁর একটি আবক্ষ মূর্তি সরিয়ে দেওয়ার যে দাবি ওই হোস্টেলের বর্তমান আবাসিক এবং সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন তুলেছে, তার বিপরীত মতও এবার সামনে এল।

শেখ মুজিব যে কলেজে পড়াশোনা করতেন, সেই ইসলামিয়া কলেজ, যার এখন নাম মৌলানা আজাদ কলেজ, সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের একাংশ বলছেন তিনি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, সেই হিসাবেই মূর্তি স্থাপিত হয়েছে বেকার হোস্টেলে।

যে কারণে মূর্তিটি সরিয়ে দেওয়ার দাবি করা হচ্ছে, অর্থাৎ হোস্টেল চত্বরে একটি মসজিদ রয়েছে – তাই ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী ওই চত্বরে কোনও ব্যক্তির মূর্তি বা ছবি রাখা নিষেধ, সেটাও মানতে চাইছেন না কলেজের বর্তমান পড়ুয়াদের একাংশ।

কলকাতার বেকার হোস্টেল
Image captionকলকাতার বেকার হোস্টেল

বেকার হোস্টেলেই থেকে মৌলানা আজাদ কলেজে পড়ছেন মুহম্মদ জীশান। তিনি বলছিলেন, "যে ভবনে সংগ্রহশালা এবং শেখ মুজিবের মূর্তি আছে, সেটা তো মসজিদ থেকে একেবারেই আলাদা। মসজিদের কাছে বা ভেতরে যদি মূর্তি থাকত, তাহলে হয়তো মুসলিম হিসাবে আপত্তি জানানোর একটা জায়গা থাকত আমাদের। কিন্তু এক্ষেত্রে তো কোনও সমস্যা হওয়ার কথা না!"

মৌলানা আজাদ কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ আলম বলছিলেন, "বেকার হোস্টেল চত্বরে যে মসজিদটি আছে, সেটা মূর্তি বা সংগ্রহশালা থেকে অনেক দূরে। হোস্টেল ভবনের তিনতলায় অবস্থিত ওই সংগ্রহশালা। দুটোর মধ্যে কোনও সম্পর্কই নেই। শেখ মুজিবের মূর্তি রাখায় ধর্মের সঙ্গে সংঘাত হচ্ছে বলে যেটা বলা হচ্ছে, তার কোনও ভিত্তিই নেই। আর শেখ মুজিব এই কলেজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তিনি ছাত্রদের কাছে একটা আদর্শ। তাঁর মূর্তি সরানোর দাবি তুলে রাজনীতি করা হচ্ছে।"

ইংরেজী অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শাবানা।

"মূর্তিটা থাকলে সমস্যাটা কী? ওটা তো একটা স্মারক হিসাবে রাখা আছে। এতে আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে কেন আঘাত আসবে?" প্রশ্ন শাবানার।

মুহম্মদ জাভেদ মালিক অর্থনীতির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মৌলানা আজাদ কলেজের।

তার কথায়, "কারও ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত না দিয়েও বলা যায় যে ওই হোস্টেলে তো এতবছর ধরে মুসলমান ছাত্ররা থাকছে, ওই হোস্টেলের সুপারিটেন্ডেন্টও তো মুসলমান। কেউ তো এতদিন কোনও আপত্তি করেছে বলে শুনি নি।"

"শেখ মুজিব তো সবার কাছে আদর্শ, একটা অনুপ্রেরণা। তাঁর কাছ থেকে নেতৃত্ব দেওয়া শেখা উচিত সব ছাত্রদের। মূর্তিটাও সেই হিসাবেই রাখা হয়েছে – শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। কখনও শুনি নি যে হস্টেলের মুসলমান ছাত্রদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে ওই মূর্তিটা থাকার জন্য। আর যেটাতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না, সেটা সরানোর দাবি উঠবে কেন?" প্রশ্ন পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র শাহকার শিবলির।

একটি সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে।
Image captionএকটি সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে।

মূর্তি সরানোর দাবিতে কলেজ আর বেকার হোস্টেলের ছাত্রদের একাংশের মধ্যে দ্বিমত দেখা দেওয়ার মধ্যেই কলকাতার একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর একটি উদ্ধৃতি ছাপিয়েছে এই প্রসঙ্গে। মমতা ব্যানার্জী ওই সংবাদপত্রটিকে বলেছেন শেখ মুজিবের স্মৃতি শ্রদ্ধার সঙ্গে সংরক্ষণ করাই তাঁদের কর্তব্য। এর কোনও রকম বিরোধীতা বরদাস্ত করা হবে না।

অন্যদিকে বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সূত্রগুলি বলছে মূর্তি সরানোর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের এই কঠোর অবস্থান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের জানানো হয় নি।

কিন্তু সংবাদপত্রে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রকাশের পরে মূর্তি সরানোর দাবি নিয়ে সরব হওয়া পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বিবিসিকে বলছিলেন, "এদেশের মুসলিমদের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী ধর্মপালনের অধিকার দেশের সংবিধান আমাদের দিয়েছেন। এটা একটা বিরল ঘটনা যে একটা মুসলিম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি মূর্তি বসিয়ে দেওয়া হবে। এটা কোনওভাবেই আমরা মেনে নেব না।"

"যদি সরকার মূর্তি সরানোর উদ্যোগ না নেয়, তাহলে আমাদের জন্য রাজপথ তো খোলাই আছে। আমরা রাস্তাতেই নামব তাহলে," বলছিলেন মি. কামরুজ্জামান।

তার কাছে আরও উল্লেখ করেছিলাম যে মৌলানা আজাদ কলেজের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ যে শেখ মুজিবের মূর্তিটি রাখার পক্ষেই সওয়াল করছেন।

তিনি জানিয়েছেন, "ওই কলেজটি কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়, সেটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে ওইরকম মত দেওয়ার। কিন্তু বেকার হোস্টেল চত্বরে একটি মসজিদ থাকার কারণে সেটি একটি ধর্মীয় স্থান। সেখানে কী থাকতে পারে, বা পারে না, সে বিষয়ে বৃহত্তর মুসলিম সমাজের মতামতই বেশী গুরুত্ব পাবে।"

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!