DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংবিধান পরিপন্থিঃ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

ahaque copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার যে রায় দিয়েছেন তা সংবিধান পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল হক।

বৃহস্পতিবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

আনিসুল হক বলেছেন, এই রায় আপিল বিভাগে টিকবে না। রাষ্ট্রপক্ষ এখন আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা আইনি পথেই যাব। আমরা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করব না।

উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।

ওই সংশোধন চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবীর একটি রিট আবেদনের রায়ে বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের তিন বিচারপতির একটি বেঞ্চ সংসদের ওই পদক্ষেপকে অবৈধ বলে রায় দেয়।

আদালতের এই আদেশ নিয়ে সংসদ অধিবেশনের শুরুতেই পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইসলাম।

পরে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ এবং জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল। তারা আদালতের রায়ের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন। এসময় সংসদে ছিলেন না সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ সদস্যদের দাবির মুখে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সংশোধনীটা পাস করেছিলাম বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য, বিচারপতি-বিজ্ঞ বিচারকদের সন্মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য। আর্টিকেল ৯৬ এ সংশোধনীর আগে যেটা ছিল, তা হল মার্শাল ল ফরমান দ্বারা তৈরি। ১৯৭৮ এর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। আমরা সেটা পরিবর্তন করতে গিয়েছিলাম।’ ‘উনারা (হাই কোর্ট) সেটা আজকের রায়ে বলে দিলেন, এটা ‘ইলিগ্যাল’। এখনও আমি বলি এটা মোটেও ইলিগ্যাল নয়। উনারা যেটা বলছেন সেটা নট মেইনটেনেবল।’

১৯৭২ সালে মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের উপর ন্যস্ত ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয় একটি সামরিক ফরমানের মাধ্যমে।

আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। এখনও বিশ্বাস করি বিচার বিভাগ স্বাধীন। আপিল করলে এই রায় গ্রহণযোগ্য হবে না। সে জন্য আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে আপিল করব।’

এর আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বৃহস্পতিবার অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আশফাকুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রায় দেন।

রায়ের ফলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকল না। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র।

রায়ে আরও বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে।

আদালত রায়ে আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সাংসদেরা ভোট দিতে পারেন না। তারা দলের হাইকমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার ফলে সংসদদের সবসময় দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারেন না। যদিও বিভিন্ন উন্নত দেশে সংসদদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা আছে।

রায়ে আরো বলা হয়, মানুষের ধারণা হলো, বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। সে ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

অসদাচরণের জন্য উচ্চ আদালতের কোনো বিচারককে কীভাবে অপসারণ করা যাবে, সে প্রক্রিয়া নির্ধারণে আরেকটি আইনের খসড়ায় ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে এই রিট আবেদন হয়। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভম্বর রুল দেন। রুলে ওই সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, আইন সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এ রুলের ওপর গত বছর ২১ মে শুনানি শুরু হয়। ওইদিন আদালত মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ পাঁচ আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানিতে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। ১৭ দিন শুনানির পর গত ১০ মার্চ আদালত এ বিষয়ে রায়ের দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন। ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও রিট আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ শুনানিতে অংশ নেন।

১৯৭২ সালে মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের উপর ন্যস্ত ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। পরে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়।

তবে ষোড়শ সংশোধনীর ৯৬(২) অনুচ্ছেদে অনুসারে, প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ছাড়া কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাবে না।

এছাড়া ৯৬(৩) এ বলা হয়, দফা (২) এর অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!