DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

জঙ্গিবাদ ইস্যুতে বিরোধী দল দায়ী নয়ঃ কঠোর অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র

heri-1 copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে সরকার ও বিরোধী দলকে অবিলম্বে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌছাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরো বেশি মনোযোগী  হবার পরামর্শও দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসাই বাংলাদেশের উন্নতি ও স্থিতিশীলতার একমাত্র পথ বলেও মনে করেন দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে যাওয়া সহিংতার ঘটনায় বিরোধী দলকে দায়ী করা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেও মনে করেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে হেরিটেজ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশে বেড়ে যাওয়া জঙ্গিবাদী সহিংসতা কিভাবে বন্ধ করা যায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব মন্তব্য করেন বক্তারা।

হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক ওয়াল্টার লোহম্যান-এর সঞ্চালনায় এতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী মানপ্রিত সিংহ আনান্দ।

প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ-এর এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা ড. শামিনা আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ষ্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের সিনিয়র ফেলো লিসা কার্টিজ। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক বৈদেশিক উপদেষ্টা ও বিএনপির বিশেষ দূত জাহিদ এফ সরদার সাদী এবং ওয়াশিংটন ডিসি বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ জে হোসেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানপ্রিত সিংহ আনান্দ সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে যাওয়া সহিংসতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী সহিংসতার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেশটির সরকারের সাথে কাজ করছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গত সপ্তাহে এই বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন , আমার সিনিয়র সহকর্মী নিশা দেশাই বাংলাদেশ সরকারের সাথে কথা বলতে বাংলাদেশে গিয়েছেন।

তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, আইনের শাসন, বহুমাত্রিক রাজনৈতিক দল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব মূলত জঙ্গিবাদী সহিংসতাকে সুযোগ করে দিচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা ও রাজনৈতিক অধিকার সমুন্নত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া কঠিন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. শামিনা আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী সহিংসতা বাড়ার জন্য সরকারের সমালোচনা সহ্য না করার মানসিকতা, পুলিশের রাজনীতিকরণ ও বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার দায়ী। তিনি মনে করেন, বর্তমান এ পরিস্থিতিতে একমাত্র গণতান্ত্রিক পথেই বাংলাদেশের অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা আসতে পারে।

এজন্য বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি।

ড. আলী রিয়াজ বর্তমানে চলা সহিংসতা গুলোকে জঙ্গিবাদী সহিংসতা হিসেবে তুলে ধরে এবিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিবর্তন হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জুলহাস হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তের আগেই সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে দায়ী করা হয়েছে। যা সন্ত্রাসীদের সুযোগ করে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জঙ্গিবাদী সহিংসতার পরিস্থিতি যদিও আফগানিস্তানের মতো হয়নি, কিন্তু আমরা কি এ সহিংসতাকে সেই মাত্রায় নিয়ে যাবার পর ব্যবস্থা নেব?

এধরণের সহিংসতা কমাতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সকল ধরণের হত্যাকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য- এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান ড. আলী রিয়াজ।

লিসা কার্টিজ বলেন, জঙ্গিবাদী সহিংসতার সঙ্গে বিরোধী দলকে দোষারোপ করা অগ্রহণযোগ্য। এছাড়া তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার বিষয়টি খুবই মারাত্মক। তিনি উগ্রবাদী সহিংসতা রোধে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌছাতে যুক্তরাষ্ট্রেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান।

তিনি মনে করেন জঙ্গিবাদের বিস্তার আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী- কোনো দলের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনবে না। এসময় তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মতো তিনিও মনে করেন আদালতকে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।

এদিকে, বাংলাদেশ সফরের প্রথম দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল।

বুধবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপি বৈঠক করেন নিশা। পরে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। এরপরই এক টুইটে নিশা বৈঠকের বিষয় প্রকাশ করেন। সকাল সাড়ে নয়টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে শুরু হওয়া বৈঠক শেষে শুরু হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট, ইউএসএআইডির কেন্দ্রীয় প্রশাসক, বাংলাদেশ প্রতিনিধিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক সূচি রয়েছে।  ঢাকাস্থ মার্কিন মিশন কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নানকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশটির অব্যাহত উদ্বেগের মধ্যে ঢাকা সফরে এসেছেন নিশা দেশাই।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির টেলিফোন আলাপেই নিশাকে ঢাকায় পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঘটমান হত্যাকান্ডের পর জন কেরি নিশা দেশাইকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে শক্ত ভাষায় কথা বলার জন্য।

রাজনৈতিক বিশ্লষকরা বলছেন, হাসিনা জঙ্গী তত্ত্ব নিয়ে মিথ্যাবাদী রাখালের মতো বাঘ বাঘ খেলা খেলতে গিয়ে এখনই নিজেই সে ফাঁদে পরেছে। অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করে জন প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য চাপ দিতেই নিশা দেশাই বাংলাদেশ সফরে এসেছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছেন।

এই সেমিনারের ভিডিও দেখুনঃ

 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!