DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

অবশেষে অবসান হলো ৬৮ বছরের পরাধীনতা আর বঞ্চনার

sitmahalক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ শনিবার প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের সীমানায় যোগ হওয়া ছিটমহলগুলোতে ওড়ানো হয় বাংলাদেশের পতাকা, ৬৮ প্রদীপে প্রোজ্জ্বল প্রতিটি বাড়ি। ছিটমহলগুলোতে একসঙ্গে জ্বালানো হয়েছে ৬৮টি মোমবাতি। অবশেষে অবসান হলো ৬৮ বছরের বন্দিদশার। ৬৮ বছরের বন্দিদশা কাটিয়ে আজ রাত ১২টা এক মিনিটে কার্যকর হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহল বিনিময়। ভারতের সঙ্গে যোগ হওয়া ছিটমহলগুলোতেও ছিল একই চিত্র।

এর মধ্যে দিয়ে বিলীন হয়ে গেল এ দুটি দেশের ছিটমহল নামের বন্দিশালাগুলোর। মুক্তি মিললো এসব বন্দিশালায় দুঃসহ জীবন কাটানো প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের।

আর সেই সঙ্গে দীর্ঘ অপেক্ষার মুক্তির স্বাদ অনন্য হয়ে ধরা দিয়েছে পঞ্চাশ হাজার অধিবাসীর কাছে, ঘুচেছে ‘নিজ দেশে পরাধীনতার’ গ্লানি।

এ ইতিহাস সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব আর মানবতার ইতিহাস। ৬৮ বছর ধরে যাদের কোনো রাষ্ট্র ছিল না, ছিল না পরিচয়, সবাই যাদের চিনতো ছিটবাসী হিসেবে। এখন থেকে এই মানুষগুলো তাদের জাতীয়তার পরিচয় পাবেন। নাগরিকত্বের পরিচয় দেবেন গর্বে বুক ফুলিয়ে।

১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে এই  সমস্যার সমাধান হওয়ার কথা থাকলেও ভারতের একগুয়েমীর কারনে তা সম্ভব হয়নি।সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েই এই ৪১ বছরের পুরোনো চুক্তিটি লোকসভায় পাশের ব্যবস্থা করলে আশার আলো দেখা দেয়।যদিও শেখ হাসিনার সরকার এই ছিটমহল সংক্রান্ত স্থল সিমানা চুক্তিটি সরাসরি তাদের কৃতিত্ব বলে দাবী করে আসছে।

ভারত ও বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী, ১ অগাস্ট থেকে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর আয়তনের ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখণ্ড।

আর ভারতের মধ্যে থাকা ৭ হাজার ১১০ দশমিক ০২ একর আয়তনের বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল মিলে গেছে ভারতের মানচিত্রে।

দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত এই সমস্যার অবসানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মানচিত্র পেল পূর্ণতা। বাংলাদেশে এখন থেকে ছিটমহল শব্দটি থাকবে কেবল ইতিহাসের পাতায়।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে দেশ ভাগের সময় সিরিল রেডক্লিফ কমিশনের তাড়াহুড়োয় চিহ্নিত করা সীমান্তে ছিটমহল জটিলতার শুরু। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়। এরপর তা কার্যকরে প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয় ২০১১ সালে।

গত ৭ মে ভারতের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ওই চুক্তি বাস্তবায়নের পথ তৈরি হলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তর হয়।

নিজ নিজ দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এসব ছিটমহলের সরাসরি কোনো যোগাযোগ না থাকায় রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ছিল না। আরেক দেশের সীমানার ভেতরে হওয়ায় হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, স্কুল-কলেজ বা বিচার- প্রশাসনও ছিল না সেখানে।

ফলে ছিটের বাসিন্দাদের ইচ্ছা থাকলেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর সুযোগ ছিল সীমিত। অনেকেই বাংলাদেশি বা ভারতীয় ঠিকানা ব্যবহার করে লেখাপড়া করলেও ছিটমহলের বাসিন্দা হওয়ায় চাকরির সুযোগ তাদের এতোদিন হয়নি।

ভারতের সবগুলো ছিটমহলের অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায়। আর বাংলাদেশে ছিটমহলগুলো পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলায়।

ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ অংশের সভাপতি ময়নুল হক বলেন, শোষণ ও বঞ্চনার ইতিহাসের অবসান ঘটার এই দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে দুই দেশের সব ছিটমহলে ৬৮টি করে মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালানো হয়েছে।

এছাড়া ছিটমহলের প্রতিটি অন্ধকার সড়কে মশাল জ্বালিয়ে আলোকিত করার পাশাপাশি ফানুস ওড়ানো হয়েছে।

একই সঙ্গে পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি ছিটমহলে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয় বলেও জানান ময়নুল।

তিনি জানান, এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে শুক্রবার সারাদিন ছিটমহলগুলোর নাগরিক কমিটির উদ্যোগে স্থানীয় বিভিন্ন খেলাধুলা, গান ও নাটকসহ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা চলেছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!