DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

চট্টগ্রামে আটককৃত কোকেনের পরবর্তি গন্তব্য ছিলো কোলকাতা বন্দর

kokenক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চাঞ্চল্যকর কোকেন পাচারের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাবার পর তদন্তে অবিশ্বাস্য সব তথ্য বেরিয়ে আসছে।কোকেনের চালান পাচারের নেপথ্যে ছিল মাফিয়া চক্রের কোটি কোটি টাকার কারবার। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মূল্যবান মাদকের এ চালানটি নিরাপদে অন্য কোন বন্দরে পাচার করে দেয়ার জন্য নেয়া হয় মোটা অংকের বাজেট। আর এই টাকার প্রলোভনে পড়েই তাতে জড়িয়ে যায় বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তারা এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন।এদিকে এই পাচারে জড়িত সন্দেহে গেফতারকৃত মন্ডল গ্রুপের দুই পরিচালককে ছাড়িয়ে নিতে ব্যাপক তদবীর চলছে বলে জানা গেছে।উল্লেখ্য এই মন্ডল গ্রুপের একজন পরিচালক আওয়ামী লীগের সাংসদ হওয়ায় তাদের প্রভাব সবখানেই প্রবল।

গ্রেফতারকৃতরাও কোকেন পাচারের ঘটনায় মোটা অংকের লেনদেনের কথা স্বীকার করেছেন। চালানটি উরুগুয়ের মন্টিভিডিও থেকে জাহাজিকরণ করা হয়। পরে তা সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এজন্য কোন ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা অবস্থায় চালানটি ভারতের কোলকাতা বন্দরে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল।

আর এ চালানের সর্বশেষ গন্তব্য ছিল উত্তর আমেরিকা বা পশ্চিম ইউরোপের কোন দেশে। আমদানি থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পুনঃরপ্তানি কার্যক্রমের এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত ছিলেন তাদের সবাই ওই মোটা অংকের টাকার ভাগ পেয়েছেন বলেও নিশ্চিত হয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। বিসিএসআরআই এবং বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পৃথক পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে বন্দরে জব্দ চালানের ৯৬ নম্বর ড্রামে কোকেন রয়েছে।

এ ড্রামটিতে ১৮৫ কেজি সূর্যমুখী তেল রয়েছে। আর এ তেলের এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৬১ কেজি কোকেন রয়েছে বলে ধারণা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের। প্রতিকেজি কোকেনের দাম কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা হলে ওই ড্রামে থাকা কোকেনের দাম ৩০০ কোটি টাকার বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ চালানটি নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে আটক সূর্যমুখী তেলের চালানে ‘তরল কোকেন’ পাওয়ার ঘটনায় ঢাকা থেকে গ্রেফতার তিন জনের প্রত্যেককে ১০দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।

kokenগতকাল (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম ফরিদ আলমের আদালত এ আদেশ দেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান বলেন, প্রত্যেককে দশ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এ তিন জন হলেন- গার্মেন্টপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মন্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান খান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে আজাদ এবং রাজধানী ঢাকার একটি আবাসন কোম্পানির কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল।

এর আগে বুধবার গভীর রাতে ঢাকায় আটক তিনজনকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল তাদের আদালতে হাজির করা হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরা থেকে মন্ডল গ্রুপের কর্মকর্তা আতিকুর রহমানকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সদস্যরা। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গুলশান থেকে আটক করা হয় মোস্তফা কামালকে। পরে রাজধানী থেকে আটক করা হয় কসকো শিপিং লাইনের কর্মকর্তা এ কে আজাদকে। আটকের পর তাদের ৩ জনকে ঢাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

জানা যায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কোকেন পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করেন। অর্থের প্রলোভনে পড়ে তারা এ কাজে জড়িয়েছেন বলেও স্বীকার করেন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মোস্তফা কামালের আত্মীয় বকুল মিয়া এই ‘পাচারচক্রের’ হোতা, যিনি যুক্তরাজ্যে থাকেন। রাজু নামের এক ভারতীয় নাগরিকও এর সঙ্গে জড়িত। এ চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতের কোলকাতা বন্দরে পুনঃরপ্তানির পরিকল্পনা করছিল তারা। আর এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য ভারতীয় নাগরিক রাজুর চট্টগ্রাম আসার কথা ছিল।

কিন্তু তার আগে চালানটি জব্দ হওয়ায় তিনি আর চট্টগ্রাম আসেননি। সূর্যমুখী ভোজ্য তেলের ঘোষণা দিয়ে দেড়মাস আগে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা কন্টেইনারটিতে থাকা নমুনা পরীক্ষা করে গত ২৮ জুন তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা জানায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেড বলিভিয়া থেকে ওই তেল আমদানি করে। কন্টেইনারে থাকা ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটিতে পাওয়া গেছে তেল মেশানো তরল কোকেন। ওই ড্রামটির ১৮৫ কেজি সানফ্লাওয়ার তেলের এক-তৃতীয়াংশই তরল কোকেন বলে পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দার। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দর থানার এসআই ওসমান গণি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা সোহেলকে আসামি করে গত রোববার একটি মামলা দায়ের করেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সোহেলকে গ্রেফতার দেখিয়ে গত মঙ্গলবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। গত ৬ জুন রাতে খাতুনগঞ্জ থেকে সোহেলকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এরপর তার দেখানো মতে বন্দর জেটিতে থাকা সূর্যমুখী তেলের চালানটি জব্দ করা হয়। প্রাথমিক পরীক্ষায় কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া না যাওয়ায় সোহেলকে ৫৪ ধারায় আদালতে চালান দেয়া হয়। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। কমিটিকে দশ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো.কামরুজ্জামান জানান, আসামীদের খুব শিগগির জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে। তিনি জানান, আটকের পর ঢাকায় ৩ জনকে পৃথকভাবে এবং চট্টগ্রামে সোহেলকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কিছু দালিলিক প্রমাণও হাতে এসেছে। এসব তথ্য প্রমাণ যাচাই-বাছাই করতে প্রয়োজনে ৪ আসামীকেই মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান তিনি। মামলার প্রধান আসামী খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিক নূর মোহাম্মদ পলাতক রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাকেও গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!