DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বাংলাদেশের কাছে বিধ্ধস্ত ভারতকে তূলোধূলো করলো আনন্দবাজার

tulodhunoক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে সফরকারীকে ভারতকে ৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে নাকানি-চুবানি খাওয়ানোটা যে ‘ফ্লুক’ ছিলো না ধোনির দলের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে সেটি প্রমাণ করে দিল টাইগার শিবির।

এই অবস্থায় সিরিজ জয়ের স্বপ্ন কোনো বাতুলতা নয়। বাংলাদেশ দল শ্রেয়তর দল হিসেবেই ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ জয় পেয়েছে। তবে ভারতের এমন বিধ্বস্ত হওয়ার কারণটা কী? অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নাকি জঘন্য পারফরম্যান্স? নাকি রণকৌশলে কোনো ভুল ছিল ভারতের?

ভারতের জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা অবশ্য ধোনিদের এমন বাজে হারের জন্য দুটি প্রধান কারণ খুঁজে বের করেছে। পত্রিকাটি ভারতের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীর ভুল রণকৌশলকে দায়ী করেছে। দ্রুত বেশ কয়েকটি উইকেটের পতনের পর ধোনিকে ব্যাটিং অর্ডারে কেন আরেকটু আগে নামালেন না শাস্ত্রী সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

পাশাপাশি ধোনিদের একাদশ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। ভারতের জঘন্য পারফরম্যান্সের জন্য ধোনিদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকে দায়ী করে আনন্দবাজার লিখে, ‘জঘন্য পারফরম্যান্স, না-কি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। কাকে দায়ী করব এই হারের জন্য বুঝতে পারছি না। তবে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল, কীভাবে ভারতের মতো তারকাখচিত দলকেও রীতিমতো নাকানি-চুবানি খাইয়ে হারানো যায়।

কয়েক সপ্তাহ আগে ঘরের মাঠেই পাকিস্তানকে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে হারানোর আত্মবিশ্বাসটাই যেন বৃহস্পতিবার মিরপুরে তামিম ইকবালদের পারফরম্যান্সে ফুটে উঠল।

ওই ঘটনার পরই ভারতের আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল। ওদের মনে রাখা দরকার ছিল ঘরের মাঠে মাশরফিরা বিপজ্জনক হয়ে উঠতেই পারে। কিন্তু ভারতের পারফরম্যান্স দেখে তো মনেই হল না যে, ওরা কোনো সিরিয়াস প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলছে। আগাগোড়া ভাবখানা এমন, যে এখন যা হচ্ছে হোক, পরে ম্যানেজ করে নেওয়া যাবে। এই ‘পরে ম্যানেজ’ করার প্রবণতাই ডুবিয়ে দিল ভারতকে।’

৯৫ থেকে ১১৫- এই ২০ রানের মধ্যে একে একে ফিরে যান শেখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও আজিঙ্কা রাহানে। দলের এই বিপদের মুহুর্তে ব্যাটিং পজিশনে পরিবর্তন এনে কেন ‘ক্যাপ্টেন-কুল’ ধোনিকে নামানো হলো না সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুললো আনন্দবাজার।

প্রশ্ন তোলা হলো টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও। আনন্দবাজারের ভাষায়, ‘শিখর ধাওয়ান-রোহিত শর্মারা ভারতকে ৯৫-০-য় পৌঁছে দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভারতের স্কোরবোর্ডে দেখা গেল ১১৫-৪! বিরাট কোহলি অযথা দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো অফ স্টাম্পের বাইরের একটা বল পেটাতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত চলে গেল।

ওর একটু পরেই রোহিত শর্মা। তখনই কিন্তু নামতে পারত ধোনি। দলের ব্যাটিংয়ের এমন বেহাল অবস্থা যেখানে, সেখানে ক্যাপ্টেন আগে ভাগে নেমে দলের হাল ধরবে না কেন? বাংলাদেশের বোলাররা দুর্দান্ত বল করছে বলে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকব! ধোনি আগে উইকেটে এলে রাহানের সঙ্গে বড় পার্টনারশিপ গড়ার অনেকটা সময় পেত।’ ধোনি যখন ক্রিজে এল, তখন উল্টোদিকে রায়না। তখনও এই আশায় বসে ছিলাম যে ওরা দু’জনে মিলে হাল ধরে নেবে। ওই সময়ে খেলায় ফিরে আসার সেরা ফর্মুলা হল উইকেটে টিকে থেকে বিপক্ষের আত্মবিশ্বাসী বোলারদের হতাশ করে তোলা। তার পর ব্যাটে ঝড় তোলা। ধোনি ও রায়নার মতো দুই ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এই চাওয়াটা বোধহয় বাড়াবাড়ি নয়। ওরা যে সেটা পারবে না, এটা ভাবাও কঠিন। কিন্তু সত্যিই পারল না। সাকিবের অনবদ্য বলে আউট হল ধোনি। রায়না প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা মুস্তাফিজুরের বলে ‘প্লেইড অন’। তখনই ভারতের লড়াই প্রায় শেষ।’ এরপর টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ভারতের জনপ্রিয় পত্রিকাটি বলে, ‘এ রকম পরিস্থিতিতে ড্রেসিংরুমে থাকা কোচের একটা ভূমিকা অবশ্যই থাকে (ভারতীয় দলের কোচ নেই)। এ ক্ষেত্রে টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীরও নিশ্চয়ই একই ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে দলে যেখানে কোনও চিফ কোচ নেই। শাস্ত্রীরই বলা উচিত ছিল, ক্যাপ্টেনকে পাঁচে নামতে।’ ভারতীয় একাদশ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে।

পত্রিকাটির ভাষায়, ‘মাশুল অবশ্য শুরু থেকেই দিতে হয়েছে। প্রথমে মোহিত, ভূবনেশ্বরের আর উমেশের ব্যর্থতার মাশুল দিতে হল। তিন পেসার নিয়ে খেলাটাই বোধহয় ভুল হয়েছে। মোহিতের জায়গায় অক্ষর পটেলকে খেলালে বোধহয় সেটা আরও কাজে দিত। রায়না-অশ্বিনদের বোলিং দেখে সে রকমই মনে হল। বাংলাদেশের ইনিংসের একশো রান উঠল ৭৯ বলে! পেসাররা বেদম মার খাচ্ছে দেখে রায়নাকে বোলিংয়ে আনার ধোনির সিদ্ধান্তটা একদম ঠিক। ওই সময় আর একটা স্পিনার হাতে থাকলে কাজে দিত। পেসারদের যা ইকনমি রেট! বিশেষ করে মোহিত। প্রায় সাড়ে এগারো। সেখানে রায়না ১০ ওভারে রান দিয়েছে ৪০। ও না থাকলে সাড়ে তিনশো তুলত বাংলাদেশ।’

 

বাংলাদেশ সফরে ভারতীয় দলের উপদেষ্টা হয়ে সৌরভ গাঙ্গুলি আসার কথা ছিল। তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ভারতীয় ক্রিকেট এন্ড কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। রবি শাস্ত্রী বাংলাদেশ সফরের আগে বলেছিলেন, ধোনিদের কোচের প্রয়োজন নেই। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, খুব শিগগিরই হয়তো টিম ডিরেক্টরের পদ থেকে কোচের পদে বসানো হবে শাস্ত্রীকে।

তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে শাস্ত্রীর ভূমিকায় তার কোচ হওয়াটা একটা প্রশ্নের মুখে পড়লো।

অশোক মলহোত্র, সূত্র : আনন্দবাজার ১৯ জুন, ২০১৫

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!