DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বাংলাদেশ -ভারত খেলাঃবাংলাদেশের পিঠে তিনটি ছুরিকাঘাত এবং তিন ঘাতক

cwc1বাংলাদেশ-ভারত লড়াইটি ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছিল। বাংলাদেশের কাছে আগেও হেরেছে ক্রিকেট পরাশক্তি ভারত। কিন্তু ২০০৭ বিশ্বকাপের পরাজয়ের দুঃসহ স্মৃতির কারণে ২০১৫ বিশ্বকাপের উজ্জীবিত বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল ভারতের এক আতঙ্কের নাম। ভারতের চিরাচরিত ব্যাটিং শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে জেতা সত্যিই কঠিন। এ বাস্তবতা সামনে রেখেও ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের রচনা করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। স্বপ্নটা ছিল আকাশ ছোঁয়া।
 
শেষ পর্যন্ত ফলাফল যাই হোক, একটি জমজমাট লড়াইয়ের প্রত্যাশা তো তৈরি হয়েছিল সবার মনে। মেলবোর্নে লড়াইয়ে নেমেছিল ১১জন যোদ্ধা। কিন্তু পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে সে স্বপ্নকে হত্যা করল তিনজন। তিন পুরনো শত্রু। দুই বৃটিশ এক পাকিস্তানি। আম্পায়ার গৌল্ড, আলিমদার ও থার্ড আম্পায়ার ডেভিস। তারা প্রত্যেকেই প্রতিশোধ নিয়েছে। বৃটিশরা নিয়েছে বিশ্বকাপে হারের এবং পাকিস্তানি নিয়েছে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে হারের প্রতিশোধ।
 
আমাদের শৈশবে চট্টগ্রামে একটি বিখ্যাত গালি ছিল। শিয়ালের মতো বুদ্ধির প্যাচে যারা দুই নাম্বারি করতো লোকে তাদের বলতো- বৃটিশ। যৌবনে আমাদের প্রধান গালির নাম হল-শালা পাকির বাচ্চা। আজ দুইটি গালির যথার্থতা খুঁজে পেলাম। কোয়ার্টারের বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে বিশ্বকাপে হেরেছে ক্রিকেট, হেরেছে সততা, হেরেছে সৌন্দর্য; জিতেছে ভারত, জিতেছে ভারতের বাণিজ্য। চানক্যের কূটনীতির কথা সবাই জানেন। ফলে মাঠের পারফমেন্সের ওপর নির্ভর করলে হবে না। ভবিষ্যতে জিততে হলে দক্ষ হতে হবে টেবিল খেলায়। একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে উচ্চস্বরে দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করতে চাই, বাংলাদেশের ১১ বীর লড়ল ভারতের ১৪ জনের বিরুদ্ধে! তিনটি ছুরিকাঘাতসহ একের পর এক পিনের খোঁচা। তামিমের আউটটিও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ছিল না। বাংলাদেশি বোলারদের বল একটু উঁচুতে উঠলে ওয়াইড-নো, ভারতের বোলারদের ক্ষেত্রে রাইট বল! কর্তার ইচ্ছাই কর্ম! বাংলাদেশকে তাই এই মেনে নিতে হয়েছে সিদ্ধান্ত। আহ! আজ আমাদের যদি অর্জুনা রানাতুঙ্গার মতো একজন সাহসী অধিনায়ক থাকতেন। যে বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে পারতেন!

প্রথম ছুরি: (নিয়ম)- ঘাতক ডেভিস 
ভারতের ইনিংসের ৩৪তম ওভারের দ্বিতীয় বল। তিন উইকেট হারানো ভারতের অলরাউন্ডার সুরেশ রায়না রানের জন্য হাঁসফাঁস করছেন। এলবিডব্লিউ জোরালো আবেদন করলেন মাশরাফি বিন মতুর্জা। খানিকক্ষণ মাথা নেড়ে না করে দিলেন আম্পায়ার ইয়ান গৌল্ড। প্যাডে যে বলটি লাগলো তা আঘাত করতো স্টাম্পে। তবু কেন আউট নয়? আত্মবিশ্বাসী মাশরাফি রিভিউ চাইলেন। এবার নাকচ করলেন থার্ড আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস। তার যুক্তি, এলবিডব্লিউ নিয়ম। ( নিয়মগুলোর একটি হচ্ছে, বল লেগ স্টাম্পের লাইনের বাইরে ফেলা যাবে না। লেগ স্টাম্পের বাইরে বল পড়লে প্রথম দফাতেই এলবিডব্লিউর আবেদন নাকচ হবে।) মাশরাফির বলটা ঠিক পুরোপুরি লেগ স্টাম্পের বাইরেও ছিল না। অর্ধেকেরও সামান্য বেশি ছিল লেগ স্টাম্পের লাইনেই। ভাষ্যকার ও ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জেরেকার তাৎক্ষণিকভাবে বলেছেন, ‘নিয়মের দিক দিয়ে সিদ্ধান্তটা ঠিক আছে, কিন্তু নীতির দিক দিয়ে ঠিক নেই।’ ক্রিকইনফোও লিখেছে, এটা অনেক ‘ক্লোজ’ একটা আবেদন ছিল। ৫১ শতাংশই আউট!

দ্বিতীয় ছুরি: (নো বল)- ঘাতক গৌল্ড 
ভারতীয় ইনিংসের তখন ৪০ ওভারের চতুর্থ বল। স্ট্রাইকে তখন ঊননব্বইয়ে দাঁড়িয়ে রোহিত। রুবেল হোসেনের ফুলটস বলটি সজোরে মেরেছিলেন রোহিত। ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচটা লুফে নিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস। কিন্তু আম্পায়ার ইয়ান গৌল্ড ‘নো’ বল ডেকে বসলেন। অপরাধ, কোমরের ওপরের উচ্চতায় বল ছোড়া। রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, বলটা কোমরের নিচেই থাকত। রোহিত খানিকটা নিচে নেমে খেলেছেন। বলটা তখন ছিল নিম্নমুখী। এছাড়া সাধারণত কোমরের ওপরের উচ্চতার সিদ্ধান্তের জন্য মূল আম্পায়ার লেগ আয়াম্পারের সহযোগিতা নেন। লেগ আম্পায়ারই সবচেয়ে ভালো দেখতে পারেন দৃশ্যটা। কিন্তু এক্ষেত্রে লেগ আম্পায়ার আলীমদারের জন্য অপেক্ষাই করেননি গৌল্ড। আম্পায়ারের পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ধারাভাষ্যকার ও কিংবদন্তি ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন তো বলেই বসলেন, ‘এটা নো বল ছিল না। খুবই বাজে সিদ্ধান্ত।’ ভারতের সাবেক তারকা ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষ্মণও টুইট করেছেন, ‘গৌল্ডের সিদ্ধান্তটা একদমই বাজে। বলটা নিশ্চিতভাবেই কোমরের ওপরে ছিল না। রোহিত সৌভাগ্যক্রমে আরেকটা জীবন পেল। এটাই হয়তো আরও ২০টা রান বেশি তুলে দেবে ভারতকে।’ ক্রিকেট বিশ্বের অনেক সাবেক তারকাও আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। টুইট করছেন। প্রশ্ন করতে পারেন, বেঁচে যাওয়া রোহিত এরপর কি করেছে? হ্যাঁ, ২৫ বলে ৪৭! এটা আউট না দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে বিবিসির স্পোর্টস লাইভে। এ নিয়ে ইএসপিএন ক্রিকইনফো কমেন্ট্রিতে লিখেছে- 39.4/ Rubel Hossain to RG Sharma, (no ball) 1 run, dishes a waist-height full toss which is clubbed away instinctively towards deep midwicket, with the fielder in the deep coming forward to claim the catch. There is an initial stirring from the Bangladeshi fans when they see it is Rohit who was dismissed, but, lo and behold, Rubel has been called for a no-ball. This one due to being over the waist. Replays show, however, that the call would have been marginal. The umpire's call though, was a lot more decisive. Big, big break there for India.

তৃতীয় ছুরি: (ছক্কার বদলে ক্যাচ)-গৌল্ড
বাংলাদেশ ইনিংসের ১৭ ওভারের শেষ বল। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে বিপর্যয় থেকে উত্তরণ করছিল বাংলাদেশের ইনিংস। যে এ বিশ্বকাপে হয়ে ওঠেছিল বাংলাদেশের প্রধান তারকা ব্যাটসম্যান। মোহাম্মদ শামির শর্ট বলটি পুল করেছিলেন। লং লেগে বাউন্ডারি লাইন থেকে ক্যাচ ধরলেন শিখর ধাওয়ান। রিপ্লেতে দেখা গেছে, ক্যাচ ধরার পর তার পা ছুঁয়েছে বাউন্ডারি লাইন। এমন কি সংশয় থাকলেও সিদ্ধান্ত যাওয়ার কথা ছিল ব্যাটসম্যানের পক্ষে। রিয়াদ পেতে পারতো ‘বেনিফিট অব ডাউট’। কিন্তু তা হয়নি। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তটি এতটাই বিতর্কিত ছিল যে, অন্যান্য সংশয়পূর্ণ আউটের ক্ষেত্রে বারবার দেখানো হলেও এ ক্যাচের রিপ্লেটি আর দেখানো হয়নি। এমন সিদ্ধান্তের সময় বারবার ক্যামেরা জুম করে দেখা হয়। ক্যামেরা জুম করে ধাওয়ানের বাম পা দেখতে পারতেন তৃতীয় আম্পায়ার। কিন্তু তিনি ওই অ্যাঙ্গেলে দেখলেনই না। অদ্ভূত!

আইসিসি= ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছেন, বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসির কাছে অভিযোগ করব। কিন্তু আইসিসির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তো বিসিবিরই সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল। ক্রিকেটে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির কঠোর সমালোচনা করেছেন খোদ আইসিসির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার কাছে মনে হয়েছে, আইসিসি (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল) এখন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলেরই নামান্তর। তিনি বেদনাসিক্ত চেহারায় পরিস্কার বলেছেন, ‘এত বাজে আম্পায়ারিং, দেখলাম আম্পায়ারা আমাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছিলেন, তাদের কোন কোয়ালিটি নেই। এটা কোনোভাবে মেনে নেব না। আগামী মাসে দুবাইয়ে আইসিসির সভায় বিষয়টি অবশ্যই তোলা হবে। প্রয়োজনে আমি আইসিসি সভাপতি থেকে পদত্যাগ করব।‘ কিন্তু তিনি কি পদত্যাগ করে সত্য ও সুন্দরের পক্ষে দাঁড়াবেন?! কিন্তু বাংলাদেশ কি অবিচারের শাস্তি পাবে! কেমন করে পাবে? ভারত হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বের মোড়ল। ভারতের ক্রিকেট বাণিজ্যের কাছে নতজানু পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। আইসিসির মূল আয়ের ৮০ শতাংশ ভারতের অবদান। এ কথা ক্রিকেট বিশ্বে সর্বজন স্বীকৃত ‘ওপেন সিক্রেট’। কোনো আসরে ভারতের টিকে থাকা মানে আইসিসির লাভের এ্যাকাউন্ট ফুলে ফেঁপে ওঠা। এখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে না, ভারতকে সুবিধা দিতেই আইসিসি মাচ আনল ব্যাটিং পিচে। তলে তলে এক করল পাক-বৃটিশ। দুঃখের আরও কারণ হচ্ছে, ক্রিকেট দুনিয়াজুড়ে যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে হইচই চলছে আইসিসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই ম্যাচ রিপোর্টে এসব নিয়ে টু শব্দটিও লেখা হয়নি।

বিস্মিত, হতবাক ও বিবেকের তাড়না
পক্ষপাতের অভিযোগ তুলতে পারেন অনেকেই। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হীরা, রকিবুল হাসান, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ পাইলট, জাবেদ ওমর বেলিম, মেহরাব হোসেন অপি’র অভিযোগকে এখানে উল্লেখ করব না। পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিংয়ের সমালোচনা করেছেন বিশ্বক্রিকেটের কিংবদন্তি ও পন্ডিতরা। নো বলের সিদ্ধান্ত ভুল বলে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেছেন মাইকেল হোল্ডিং, মার্টিন ক্রো, শেন ওয়ার্ন, সৌরভ গাঙ্গুলী ও অজিত আগরকার। ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীও স্বীকার করেছেন, বলের উচ্চতা নিয়ে সন্দেহ থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এটা তৃতীয় আম্পায়ারকে দেওয়া উচিত ছিল। ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক সম্বিত বল-এর বিবেকে নাড়া দিয়ে গেছে। তিনি ক্রিকেটের নিয়ম পরিবর্তনের তাগিদ জানিয়ে লিখেছেন, ক্রিকেটের এই নিয়ম পরিবর্তন প্রয়োজন। মাঠে থাকা আম্পায়ারদের নিশ্চিত ভুল থার্ড আম্পায়ারের মাধ্যমে ঠিক হওয়া উচিৎ। এটা সাধারণ জ্ঞানের বিষয়।
 
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে যে বাংলাদেশের সমালোচনা করেছিলেন সেই রমিজ রাজাও মেনে নিতে পারেনি। পক্ষপাতের বিষয়টি আর স্পষ্ট হয়েছে, পাকিস্তানি পেস তারকা শোয়েব আক্তারের তীর্যক টুইটার মন্তব্যে, ‘পাকিস্তানি আলিমদার ভারতকে একটি মওকা উপহার দিল’। যে বির্তকিত সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বপ্নভঙ্গ তা নিশ্চয়ই ভেঙে দিয়েছে দেশপ্রেমিকের প্রতীক মাশরাফির হৃদয়। তবুও ভদ্রলোকের মতো তার একটিই বাক্য, ‘মাঠে কী হয়েছে সেটা তো সবাই দেখেছে।’ দ্বিমত করি না, ভারত আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দল। কথা হচ্ছে, ভারতের বিরুদ্ধে হয়তো হারতো বাংলাদেশ। এতে খুব বেশি ক্ষতি হতো না। মেনে নেয়াও কঠিন হতো না। কিন্তু লড়াই তো করতে পারতাম। তিন শত্রু সে সুযোগটিও দিল না। বিশ্বের ক্রিকেট তারকা ও বোদ্ধারা বলছেন, রোহিত ও রায়নার আউট দুইটি হলে, নিধেনপক্ষে রোহিতের আউটটি হলে ভারতের ইনিংস পৌনে তিনশ রানের মধ্যে আটকানো যেতো। অন্যদিকে সেট ব্যাটসম্যান রিয়াদের আউটটি না দিলে বাংলাদেশ না জিতুক অন্তত আড়াইশ রান তো করতে পারতো।
 
বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার আতহার আলী খান বলেছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে এমন বাজে আম্পায়ারিং! বিশ্বাসই করতে পারছি না এমন প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ারিং দেখতে হবে। আই অ্যাম শকড! বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, আপনি শকড হননি। বিশেষ করে রোহিতের পক্ষে এবং রিয়াদের বিরুদ্ধে দুইটি সিদ্ধান্ত প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। আম্পায়ারদের পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের বলি হওয়ার দুঃখ বহুদিন বয়ে বেড়াতে হবে বাংলাদেশকে। সান্ত¡না এখানে যে, আজ বিশ্বক্রিকেট স্বীকার করছে, মাঠে মাশরাফিরা হেরেছে বটে, ক্রিকেটে জয় তো হয়েছে অভাগা বাংলাদেশেরই। শেষ করতে চাই, আমাদের ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানিয়ে  হ্যাটস অফ টু আওয়ার হিরোজ!

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!