DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

খালেদা জিয়ার হুমকির জবাবে শেখ হাসিনাঃ “একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক”

 1414076575বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুমকির জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনের আগে ট্রানজিট গভর্নমেন্ট হিসেবে ছিলাম। তখন অনেক কিছু করতে পারিনি। এখন আমার দেশের একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক, এর পরিণতি কেমন হয়। এ সময় বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে তিনি বলেন, যারা খুনি, যারা খুনিদের সঙ্গে হাত মেলায়, তাদের সঙ্গে কিসের আলোচনা।

 



বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শেখ হাসিনা ইতালি সফরপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এ সময় সাংবাদিকদের সংলাপ নিয়ে আর প্রশ্ন না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বারবার খুনিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে এত তাগিদ কেন? যারা রাজনীতির আঁস্তাকুড়ে চলে গেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা কেন?



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দু-চারটা মানুষ মারার’ নাম আন্দোলন নয়। তিনি বলেন, তারা তখন (৫ জানুয়ারির আগে) যে কাজটি করতে পেরেছে, এখন সেটা পারবে না। আন্দোলনের নামে আবারও হত্যা-অরাজকতা চললে সরকারকে কঠোর ভূমিকায় দেখতে হবে। এটাই মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই। এ সময় আন্দোলনের নামে সহিংসতা হলে তা প্রতিহত করতে জনগণের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।



খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার দিন হরতাল দেয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, চোরের মনে পুলিশ পুলিশ। হরতাল ডাকা হয়, যেন আদালতে হাজিরা না দিতে হয়। ওনার এত ভয় কিসের জন্য। নির্দোষ হলে আদালতে আসেন। আমি তো আদালতে হাজিরা দিতে ভয় পাইনি। মামলার তারিখ এলেই উনি হুমকি-ধমকি দেন।

পলায়নপর মনোবৃত্তি বাদ দিতে তিনি খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, বিদেশে বিভিন্ন নির্বাচন জিতে আসছি। উনি কি এটা দেখেন না।



বিকাল পৌনে পাঁচটায় শুরু হওয়া সম্মেলনে ইতালি সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মর্যাদা উন্নত হয়েছে। আসেম সম্মেলনে তিনি বিশ্ব নেতাদের বলেছেন, তার সরকার কখনও সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থাকে প্রশ্রয় দেবে না। বাংলাদেশ যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাও তুলে ধরা হয়েছে। এ সময় জঙ্গিবাদমুক্ত-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ও যুদ্ধাপরাধমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।



আসেম সম্মেলনে আগত বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাত্, সৌজন্য বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনায় জলবায়ু, অভিবাসন, সহস্রাব্দ লক্ষ্য উন্নয়ন, এশিয়া অঞ্চলের সার্বিক উন্নতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় অর্থনীতি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ দেয়ায় তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাদের বাংলাদেশ থেকে আরও কৃষিশ্রমিক নেয়ার কথা বলেছেন।



আসেম সম্মেলনে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোনো ‘প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি’ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে। তারা সবাই দ্বিতীয় বার সরকার গঠনের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে কিন্তু কেউ প্রশ্ন তোলেনি। নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ যেভাবে ‘উন্নয়নের পথে এগিয়েছে’, তাতে সবার অভিনন্দন পেয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের পর অনেক দেশের প্রতিনিধি প্রশ্ন তুলেছিলেন, সম্মেলনে সেই সব দেশের প্রধানরাই অভিনন্দন জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী

বলেন, বিরোধী দল সংসদে স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে। আর যে দল নির্বাচনে আসেনি তাদের নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে এটার প্রশংসা সবাই করেছেন। তিনি বলেন, দেশ-বিদেশে যারা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেছে, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নে এবং আসেম সম্মেলনে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সম্মেলনে মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কানেক্টিভিটির বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে করে যেন প্রতিটি দেশ লাভবান হতে পারে। মূলত এই এজেন্ডা ছিল জাতিসংঘের।

এ ছাড়া জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা উন্নত দেশগুলোতে আমি প্রস্তাব দিয়েছি, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করবেন না। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে জড়িতদের কোনো ধর্ম নেই। জঙ্গি জঙ্গিই, তাদের কোনো বর্ডার নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ যে আর্থিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে, সেটা প্রমাণ হয়েছে। যারা এখনও বলে যাচ্ছে, কূপমণ্ডূকতায় ভুগছে। নয়তো বিশেষ উদ্দেশ্যে বলছে। আপনারা কী এটা নিয়ে গর্ব করবেন না। বাংলাদেশ যে পারে সেটা প্রমাণ করেছি। পুতিনের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক আলাপ হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, বর্তমানে পার্লামেন্টে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রয়েছে। এখন খিস্তিখেউর নেই। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। 

সাংবাদিকরা কৃপণ!

প্রশ্নকারী সাংবাদিকরা ইন্টার-পার্লামেন্ট ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে (সিপিএ) বাংলাদেশের বিজয় নিয়ে প্রশ্ন না করায় সাংবাদিকদের কৃপণ বলে টিপ্পনী কাটেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আইপিইউ ও সিপিএতে জয়ী হলাম। কোনো সাংবাদিক একটু অভিনন্দনও জানাল না। সাংবাদিকরা এত কৃপণ, আগে জানতাম না।



আইপিইউ ও সিপিএতে বাংলাদেশ জয়ী হওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ওখানে কারচুপির কোনো সুযোগ ছিল না। মাত্র এক সপ্তাহের গ্যাপে পৃথিবীর কোনো দেশ আইপিইউ ও সিপিএর মতো দুটো প্রতিষ্ঠানে এক সঙ্গে বিজয়ী হয়নি।

 

যমুনায় তো সম্রাট শাহজাহান যাবে



প্রধানমন্ত্রীকে টকশোতে যাওয়ার আমন্ত্রণের বিষয়ে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি অত টক টক কথা বলতে পারব না। মধ্য রাতে জেগে থাকতে পারি না। কার বিরুদ্ধে কথা বলব।’ যমুনায় যেতে পারেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘যমুনায় যাওয়ার ইচ্ছা নাই। ওখানে তো সম্রাট শাহজাহান যাবে।’



লতিফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, এটা ঠিক নয়



লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৬ অক্টোবর ইসলামী দলগুলোর হরতাল আহ্বানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেইনি, এটা ঠিক নয়। যখন ঘটনা ঘটে তখন আমি প্লেনে। কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। শোকজ করেছি। ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শোকজের উত্তর আমাদের জেনারেল সেক্রেটারির কাছে রয়েছে। কাল (শুক্রবার) ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। আর যে দেশেই নেই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব কীভাবে? এ জন্য হরতাল ডাকার তো যৌক্তিকতা নেই, প্রয়োজন নেই। আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, ব্যবস্থা নিয়েছি। যথাযথ ব্যবস্থা যা যা নেয়ার সেটা নিয়েছি।’



বিশ্বে এখন বাংলাদেশ রোল মডেল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার হাত ধরে অর্থনৈতিক-সামাজিক উন্নতিও হয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আসেম সম্মেলনে আগত বিশ্ব নেতৃত্ব এসব বিষয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। তিনি বলেন, এখন সংসদে বিরোধী দল সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে। সেখানে আগের মতো ফাইল ছোড়াছুড়ি নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, এই সরকার এখন শিক্ষাকে বিনিযোগ হিসেবে দেখছে। আগে পরীক্ষায় পাস করত ৪০-৪৫ ভাগ। এখন ৯২ ভাগ পাস করে। আমরা দেশকে শিক্ষার মাধ্যমে সুখী ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে চাই। তিনি বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অবৈতনিক। সারাদেশে ডিগ্রি পর্যন্ত বৃত্তি দেয়া হয়েছে। বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষা নীতিমালায় ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশ এখন ডিজিটাল হচ্ছে। দেশের ১১ কোটি সিম ব্যবহার হচ্ছে। চার কোটি লোক এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। গ্রামের মানুষ এখন বিদ্যুত্ চায়। সরকার তাদের ভাতের সমস্যা মিটিয়েছে।



প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সব থেকে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে। বেসরকারি টেলিভিশনে সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কথা শুনলেই তা টের পাওয়া যায়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!