DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ধুম্রজাল সৃষ্টি অব্যাহতঃ লতিফ সিদ্দিকী এখনও মন্ত্রী পদে বহালঃদলে লতিফের ভাগ্য নির্ধারণ ১২ অক্টোবর

1412177275ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত দল থেকেও তাকে বাদ দেয়া হবে। এ বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামী ১২ অক্টোবর বৈঠকে বসছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি। ওই দিনই তাকে বাদ দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি মন্ত্রী পদে বহাল থাকায় আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে ধুম্রজাল সৃষ্টির অভিযোগ বিভিন্ন মহলের।



১২ অক্টোবর রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

ওই সভায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সব সদস্যকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন। হজ নিয়ে কটূক্তি করায় লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বাদ দেয়ার ঘোষণা ইতিমধ্যেই দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও জানান তিনি।

গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক দল। গঠনতন্ত্র মেনে চলে। তাকে বাদ দিতে হলে তা নিয়ে দলে আলোচনা করতে হবে। কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে অভিযোগগুলো তুলে ধরে আলোচনা করতে হবে। কমিটির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে আশা করি না কমিটির সদস্যরা আপত্তি করবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী ছাড়াও আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় শেখ হাসিনা-আবদুল জলিল কমিটিতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনে তার অবস্থান ছিল দলের সংস্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি আক্রমণাত্মক বক্তৃতা করে শীর্ষমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে টাঙ্গাইল-৪ আসনের এমপি লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নেন। এরপর ২০০৯ সালে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলে তিনি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য থেকে পদোন্নতি পেয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য হন।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গঠিত সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভাতে ঠাঁই হয় তার। আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করলে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী হন। 



মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই লাগামহীন বক্তব্য ও আপত্তিকর কর্মকাণ্ডের জন্য লতিফ সিদ্দিকী আলোচনায় আসেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমালোচনা ও কটাক্ষ করে বক্তৃতা করেন লতিফ সিদ্দিকী। গত ২০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠকেও এ কাজ করেন তিনি।



এ ছাড়া গত ২৮ মার্চ মন্ত্রী টাঙ্গাইলে নিজ বাড়িতে পিডিবির এক উপসহকারী প্রকৌশলীকে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেন। মন্ত্রীর সামনে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার অপরাধে এ কাজ করেন তিনি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।



লতিফ সিদ্দিকীর এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের নেতারাও। তাদের অভিযোগ, তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর যেসব কাজ করেছেন তাতে দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে। একজনের জন্য দলের ক্ষতি হবে, তা মানা যায় না।



আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, কেউ চায় না দলের কেউ বাদ যাক। তবে দলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ালে তো তাকে বাদ দিতেই হবে।

গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী শেরপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না।



দলের অপর এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। দলের নেতাদেরও তিনি তোয়াক্কা করতেন না। কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সবকিছু তারা তুলে ধরবেন। দলের ভালোর জন্য তাকে বাদ দেয়া উচিত বলেই মনে করেন তিনি।

গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে কটূক্তি করেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গেও অশোভন আচরণ করেন।

মুসলমানদের জন্য পবিত্র হজ কীভাবে এলো সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহপুত্র মোহাম্মদ চিন্তা করল এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কীভাবে চলবে। তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করল আমার অনুসারীরা প্রতিবছর একবার একসঙ্গে মিলিত হবে। এর মধ্য দিয়ে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে।’ অনুষ্ঠানে একজন ইন্টারনেটের গতি নিয়ে প্রশ্ন করেন।

জবাবে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘জয় ভাই’ কে? ওই সময় পাশে বসা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়। এরপর মন্ত্রী পুনরায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সে করার কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়। এখানে জয়ের কিছু করার নেই। সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কার্যকর করেন মন্ত্রী।’ তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন?’



হজ নিয়ে কটূক্তি করায় লতিফ সিদ্দিকীকে ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়েছে। শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাকে মন্ত্রিসভায় রাখব না। আইন অনুযায়ী সবই হবে। আমি নির্দেশ দিলে রিজাইন (পদত্যাগ) করতে হবে। নইলে বিদায় করে দিতে হবে। বিদায় দিতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ফাইল পাঠাতে হবে। রাষ্ট্রপতি হজে গেছেন। আমি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ফাইল তৈরি করে রাখতে বলেছি, তারা ফাইল তৈরিও করেছে। অফিস খুললেই লতিফ সিদ্দিকীর ফাইল কার্যকর হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!