DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

বাংলাদেশের পুলিশ রিমান্ডে যে অমানুষিক নির্যাতন করে, যা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন : অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

images (54)দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ  গত দু’বছরে আতঙ্কজনকভাবে গুম বৃদ্ধির ঘটনা অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে মোকাবিলা করতে হবে। বন্ধ করতে হবে নির্যাতন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার ক্রমবর্ধমান তৎপরতার ইতি ঘটাতে হবে।

 

সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ফোনে হুমকি দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা। সরকারবিরোধী সমালোচকদের গণমাধ্যমে যেন স্থান দেয়া না হয় তার জন্যই এই চাপ। গতকাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘বাংলাদেশ: ডিস্টারবিং ইনক্রিজ ইন ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সেস, ক্ল্যাম্পডাউন অন প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক এক বিবৃতিতে এ সব কথা বলা হয়েছে। এতে এ বছর ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ মানবাধিকারের যে সব ঘটনা মোকাবিলা করছে তা তুলে ধরা হয়। জরুরি করণীয় নির্ধারণ সম্পর্কে সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে কিছু সুপারিশ। 


 অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ বিষয়ক গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেন, দারিদ্র্য কমিয়ে আনা ও অন্যান্য উন্নয়নের সূচকের ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু যখন মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর, যেমন নির্যাতন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার মতো বিষয় আসে তখন তার সঙ্গে ওই উন্নয়ন খাপ খায় না। আমরা একটি প্রবণতা প্রামাণ্য আকারে ধরতে পেরেছি। 


 তা হলো, অব্যাহত গুমের জন্য দায়ী নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী, যদিও তারা তা অস্বীকার করে। সরকারের উচিত তার নিজস্ব বাহিনীর এ বিষয়ে দীর্ঘ ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এবং এসব ঘটনায় জবাবদিহির যে ঘাটতি আছে তা পুরোপুরি তুলে দেয়া। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০১২ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ২০টি গুমের ঘটনা অনুসন্ধান করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। ২০ জন মানুষের মধ্যে ৯ জনকে পাওয়া গেছে মৃত। আটক রাখার দু’ মাস পরে বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন ৬ জন। ৫ জনের খোঁজ নেই আজও। 

 রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপহরণের ঘটনা ঘটেছে অনেক। এতে টার্গেট করা হয়েছে বিরোধী দলগুলোর বিশিষ্ট সদস্যদের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশ বা এর বিশেষ বাহিনী র‌্যাবের জড়িত থাকার বিষয়টি নির্দেশ করেছেন। কিন্তু এই অভিযোগসমূহে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ভূমিকার কোন জবাবদিহিতা নেই। এর মধ্যে এ বছর এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জে ৭ অপহরণ ও হত্যার একটি ঘটনায় র‌্যাবের কর্মকর্তাদের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 


 মানুষের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পুলিশ সেই খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে আটক করেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগ দাখিল করা হয়নি। আব্বাস ফয়েজ বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ার জন্য লিটমাস টেস্ট। যেহেতু র‌্যাবের সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা ইতিবাচক। এখন পুলিশকে অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে প্রক্রিয়া অনুসরণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে ও দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি নিয়ে আসতে হবে। 

 ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে এখনও বিদ্যমান বিভিন্ন আটক রাখার স্থানে নির্যাতনের নথিপত্র উপস্থাপন করা হয়। সামপ্রতিক বছরগুলোতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাবেক শতাধিক আটক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে। তারা সকলেই আটক থাকার সময় তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন বা নির্দয় আচরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এটি নির্দেশ করে এই সমস্যা কতোটুকু ব্যাপক হতে পারে। 

 এটা সেসকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টিও নির্দেশ করে। নির্যাতনের পদ্ধতির মধ্যে যেসব প্রায় ঘটে, তা হচ্ছে, পেটানো, ছাদ থেকে ঝুলিয়ে রাখা, যৌনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেয়া। ব্রিফিংয়ে উপস্থাপন করা অন্তত দু’টি ঘটনার নথিপত্রে আটককৃতরা দাবি করেছে তাদেরকে পুলিশ পায়ে গুলি করেছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় অঙ্গহানিও ঘটেছে। 

 আব্বাস ফয়েজ বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসমূহের দীর্ঘদিনের আহ্বানের জবাব অবশ্যই দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। এবং নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। গত দু’বছরে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর অভিযান জোরদার করেছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণমূলক কঠোর আইন দ্বারা। কমপক্ষে ৪ জন ব্লগার ও দুই মানবাধিকার কর্মীকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। 

 এটা একটি ভাসাভাসাভাবে প্রণয়ণ করা আইন, যা কর্তৃপক্ষকে মানহানিকর তথ্য প্রচারকারীদের অভিযুক্ত করার ব্যাপক সুযোগ দেয়। ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে এ বছরের এপ্রিলে গ্রেপ্তার হয় ৪ ব্লগার। তারা জামিনে মুক্ত হলেও, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়নি। ব্রিফিং নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যেসব সম্পাদক ও সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছে তারাও বলেছেন, অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ণ দমন পীড়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। 

 এর মধ্যে রয়েছে ফোনে হুমকি দেয়া থেকে শুরু করে সম্পাদকদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপ। সরকার সমালোচকদের গণমাধ্যমে যেন স্থান না হয় তার জন্য এই চাপ। উত্থাপিত মানবাধিকারবিষয়ক উদ্বেগ নিয়ে সরকারের কাছ থেকে মন্তব্য চেয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিস্তারিত কোন বর্ণনা না দিয়ে সরকার বলেছে, গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। আর (নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিষিদ্ধকরণ) আইন ২০১৩)-এর অধীনে নির্দিষ্ট সংখ্যক আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে (তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে)। 


 সরকার আরও বলেছে, সকল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে যেকোন আইন (নতুন গণমাধ্যম নীতিমালা সংক্রান্ত) প্রণয়ন করা হবে। এমন আলোচনার প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয় নি। 

 আব্বাস ফয়েজ বলেন, মানবাধিকার উদ্বেগগুলো নিয়ে সরকারের দৃঢ়তার পরীক্ষাস্বরূপ-ব্রিফিংয়ে জোর দেয়া ঘটনাগুলোর পরবর্তী পর্যায় পর্যবেক্ষণ করবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তিনি আরও বলেন, আমরা যেসব সুপারিশ করেছি সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!