DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সুষমার সফরে চমক থাকলেও আপাতঃ ফলাফল শুন্য

images21দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ বিশ্লেষনঃ    কেবল আনুষ্ঠানিকতায় শেষ হল সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফর। ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরে দেখা যায়নি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের কোন লক্ষণ। তিস্তাচুক্তি, স্থলসীমান্ত চুক্তিসহ অন্যান্য ইস্যুতে নতুন কোন কথা বলেননি স্বরাজ। দীর্ঘদিন ধরে যেই কূটনৈতিক ভাষায় বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছে ভারত, সেই একই স্বরে কথা বলেছেন সুষমাও।

ইন্ডিয়ায় বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই প্রত্যাশা করছিলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের পরিবর্তন আসতে পারে। এই কামনা থেকেই বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা প্রত্যাশা করছিলেন, মোদির প্রথম সফর হবে বাংলাদেশে। কিন্তু তা হয়নি। শেষ পর্যন্ত, বাংলাদেশের এই প্রত্যাশা মেটাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফরে আসলেও ভিন্ন কোন কথা ছিল না তার। কেবল আশা দেওয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন তিনি। বরং বাংলাদেশের জন্য মর্যাদাহানিকর ও হুমকি স্বরূপ ইস্যুগুলো উঠে এসেছে নতুন করে। ইন্ডিয়ায় কথিত অবৈধ বাংলাদেশীদের নিয়ে আলোচনা এসেছে পুনরায়।

কিন্তু এর বিপরীতে বারংবারের মতোই নিশ্চুপ ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গন। ইন্ডিয়া বারংবার অবৈধ বাংলাদেশীদের প্রসঙ্গটি তুলে আনলেও অভিযোগের তীর পুরোই ঘুরিয়ে দিতে পারত বাংলাদেশ। জানা যায় পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড জাল করে ১২ লাখেরও বেশি ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছে। কেবল ভারতীয় নয়, বৈধ–অবৈধ মিলিয়ে সার্কভুক্ত ৬ টি দেশের প্রায় সাড়ে ১৪ লাখেরও বেশি নাগরিক বাংলাদেশে বসবাস করছে।

 

দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পেছনে এই বিদেশী নাগরিকদের অনেকেই গুপ্তঘাতকের ভূমিকা রাখে বলে জোর সন্দেহও করা হয়। সরকারের কাছে বাংলাদেশে অবস্থানকারী সার্কভুক্ত ৬ টি দেশের মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৩ শ ৬৬ জনের হিসাব আছে। সরকারী হিসাবের বাইরে অবস্থানকারী বিদেশী নাগরিকরা জড়িয়ে আছে নানান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে।

বাংলাদেশে অভিবাসী বিদেশীদের চরিত্র পর্যবেক্ষণকারী বিশ্লেষকরা বলে আসছেন, এই বিদেশীরা বাংলাদেশে থেকে নিজেদের জীবন নির্বাহ করলেও কোনভাবেই এইদেশের অগ্রগতি সহিষ্ণু নয়। ফলে, সুযোগ পেলেই সামান্য সুবিধার বিনিময়ে তারা বাংলাদেশ-বিরোধী নানান অন্তর্ঘাতমূলক কাজে জড়িয়ে যায়। বাংলাদেশে অবস্থানরত অধিকাংশ ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা কাজ করে মূলত আমাদের গার্মেন্টস শিল্পে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধভাবে থাকা এসব বিদেশী নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ এবং ওয়ার্ক পারমিট বলে কিছু নেই। এদের মধ্যে বাংলাদেশ-বিদ্বেষ খুব স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এ কারণে, পোশাক শিল্পের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে নানান সময়ে ঘটে যাওয়া নাশকতায় এদের হাত থাকার সন্দেহ করা হয়।




অভিযোগ আছে, এদের অনেকেই বাংলাদেশী জাল পাসপোর্ট এবং আইডি কার্ডও ব্যবহার করছে। আবার কেউ কেউ মিথ্যা পরিচয়ে বাংলাদেশের ভোটারও হয়েছে। এইসব বিদেশী নাগরিকদের কেউ কেউ রাজনৈতিক সহিংসতাতেও ভূমিকা রাখছে। এদের অনেকেই রাজনীতির আড়ালে-আবডালে থেকে নানান সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

 

এই বাস্তবতা সত্ত্বেও অবমাননাকর ও স্বার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ ইন্ডিয়ার সরকারিভাষ্যকেই বছরের পর বছর ধরে হজম করছে বাংলাদেশ। একই আলোচনা তিস্তা চুক্তির প্রশ্নেও। তিস্তা চুক্তির ইস্যুতে রীতিমত প্রতারণা করছে ইন্ডিয়ার সরকার। এক দিকে চুক্তির আশ্বাস দিলেও অন্যদিকে তিস্তা নদীর পানির ওপর নিজেদের দখলদারিত্ব পাকাপোক্ত করছে ইন্ডিয়া। ‘তিস্তা চুক্তি হবে না’ শিরোনামে  একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তিস্তার পানি আটকে রেখে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে কৃষি সম্প্রসারণে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে ইন্ডিয়া। এছাড়া, দেশটি নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিস্তার পানি ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাজও এগিয়ে নিয়েছে। অথচ, বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সাথে তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি সাক্ষরের নামে কালক্ষেপণ করেই চলেছে ইন্ডিয়া।

 

তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সাক্ষর কিংবা বাস্তবায়ন করলে থমকে যেতে পারে শত কোটি টাকা বিনিয়োগে বাস্তবায়ন করা ইন্ডিয়ার একরোখা উন্নয়ন নীতি। ফলে, তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে কর্মকাণ্ডগুলো শেষ পর্যন্ত কালক্ষেপণের পর্যায়েই থেকে যাবে। আর, তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের নামে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর আশার বাণীগুলো পরিণত হতে যাচ্ছে দূরাশায়। আশার বালিতেই ঘর বাধছে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবীরা। সেই একই চিত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটল সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরেও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এইভাবে আর কতদিন? তাই, প্রত্যাশার সমুদ্রে ভাসা নয়, বাংলাদেশের উচিত নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় কার্যকর নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!