DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

চট্টগ্রাম বন্দরের পন্য হ্যান্ডেলিং কার্যক্রমে চরম অব্যাবস্থা,অনিয়ম ও হরিলূট চলছে

download (8) চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে বছরে অন্তত একশ’ কোটি টাকার কাজ নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে ভাগ বাটোয়ারা করার অভিযোগ উঠেছে। প্রচলিত নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে একটি এলোটমেন্ট কমিটির মাধ্যমে এসব কাজ বিলিবণ্টন হচ্ছে। সরকারের শীর্র্ষ পর্যায়েও বিষয়টি জানানো হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে একটি রিপোর্ট প্রদানের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ডিটিএম (অপারেশনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেছে।

 

download (6)সূত্র জানিয়েছেচট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিল স্টিভিডোরিং প্রতিষ্ঠানগুলো। যুগ যুগ ধরে পঞ্চাশটিরও বেশি স্টিভিডোরিং প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে এবং বহির্নোঙরে পণ্য হ্যান্ডলিং করে আসছিল। ডক ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক ব্যবহার করে স্টিভিডোরিং প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য হ্যান্ডলিং করতো। ২০০৭ সালের বহুল আলোচিত ওয়ান ইলেভেনের পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালে যৌথবাহিনী চট্টগ্রাম বন্দরের সংস্কার কাজে হাত দেয়। ওই সময় স্টিভিডোরিং প্রথা বাতিল করা হয়। বিলুপ্ত করা হয় ডক ম্যানেজমেন্ট বোর্ড।

 

২০০৭ সালের ৭ মে সকালে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে স্টিভিডোরিং প্রথার পরিবর্তে বার্থ অপারেটর এবং শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর সিস্টেম চালু করা হয়। বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩টি জেটিকে ১২টি বার্থে ভাগ করে প্রতিটি বার্থে একজন করে অপারেটর এবং অপর দুইটি প্রতিষ্ঠানে কোপার্টনার করে পণ্য হ্যান্ডলিং এর দায়িত্ব দেয়া হয়। অপরদিকে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসেবে বহির্নোঙরের সব পণ্য হ্যান্ডলিং এর দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে আরো ছয়টি প্রতিষ্ঠান শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে সর্বমোট ২১ শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর বহির্নোঙরে বিভিন্ন জাহাজের পণ্য হ্যান্ডলিং করছে। এরমধ্যে পাঁচটি শিপ download (7)হ্যান্ডলিং অপারেটর ‘ইন হাউজ’ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ নিজেদের আমদানিকৃত পণ্য নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন জাহাজের মাধ্যমে হ্যান্ডলিং করে।

এদের মধ্যে এরিয়ান স্টিভিডোরস লিমিটেড প্রিমিয়ার সিমেন্টের পন্যআর এ চৌধুরী লিমিটেড আবুল খায়ের গ্রুপের পণ্যকেএসএ আবদুল হাকিম মেঘনা গ্রুপের পণ্যএম এ কালাম এন্ড কোম্পানি লিমিটেড সিটি গ্রুপের পণ্য এবং সি লিফট সার্ভিসেস নামের শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর সেভেন সার্কেল গ্রুপের পণ্য হ্যান্ডলিং করে।

 

এর বাইরে বাকি ১৬টি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আসা ওভার ড্রাফটের জাহাজ থেকে ক্লিংকারসারগমসরিষাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় দেড় কোটি টন পণ্য লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে হ্যান্ডলিং করে থাকে। প্রতিটন খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং চার্জ ৪০ টাকা এবং বস্তাভর্তি পণ্যের হ্যান্ডলিং চার্জ ১৩০ টাকা। বস্তাভর্তি এবং খোলা মিলে প্রায় দেড় কোটি টন পণ্য হ্যান্ডলিং খাতে বছরে একশ’ কোটিরও বেশি টাকার কাজ হয় বলেও সূত্র জানিয়েছে।

 

imagesবহির্নোঙরে পণ্য হ্যান্ডলিং কাজে নিয়োজিত ১৬টি শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হচ্ছে আকমল খান এন্ড কোম্পানি লিমিটেডএনসিয়েন ট্রেডার্স লিমিটেডএইচ এস মেরিন এজেন্সিইউনিয়ন ট্রেডার্স লিমিটেডএইচ সি মেরিন লিমিটেডগ্রীন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডকে এম এজেন্সি লিমিটেডএম এ নাছির এন্ড ব্রাদার্সগ্রেট বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজসী এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেডপ্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড,সী কোস্ট ট্রেডিং এন্ড শিপিং লিমিটেডহাজী ইদ্রিস এন্ড সন্স লিমিটেডএসোসিয়েটস ট্রেডার্স এন্ড মেরিনার্স লিমিটেডফ্লিট ইন্টারন্যাশনালপ্রেস্ট্রিজ কর্পোরেশন।

 

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আসা বিদেশী মাদার ভ্যাসেল থেকে ইচ্ছে করলেই একজন শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর কাজ করতে পারেন না। একটি এলোটমেন্ট কমিটি কাজ ভাগ করে দেন। আবার একজন আমদানিকারক ইচ্ছে করলেই তার আমদানিকৃত পণ্য নিজের পছন্দের শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর দিয়ে দর কষাকষি করে খালাস করাতে পারে না। এলোটমেন্ট কমিটির নির্দিষ্ট করে দেয়া শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর দিয়ে তাদের নির্ধারিত দরেই পণ্য খালাস করতে পারেন।

এই ব্যবস্থাকে এক ধরনের জিম্মি দশা হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছিলেন আমদানিকারকেরা। ১৬ জনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আবার ১৬ জনের মধ্যে একজনকে পছন্দ করারও সুযোগ নেই। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সবকিছু উন্মুক্ত হলেও বন্দরের বহির্নোঙরের কার্যক্রম চার সদস্যের একটি এলোটমেন্ট কমিটি নিয়ন্ত্রণ করে।

 

আমদানিকারদের এই অভিযোগ চলে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। এবার অভিযোগ উঠেছে উক্ত ১৬ শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের ভিতর থেকেই। অভিযোগ করা হয়েছে যে চার সদস্যের এলোটমেন্ট কমিটি নিজেদের কিংবা নিজেদের পছন্দের ফার্মকে দিয়ে কাজ করায়। এতে কোন কোন প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা আয় করলেও কোন কোনটি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। কে এম এজেন্সির মশিউল আলম স্বপনমেসার্স প্রেসটিজ কর্পোরেশন লিমিটেডের রফিকুল ইসলাম মোমিন,মেসার্স গ্রীন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান রাসেল এবং এম এ নাছির এন্ড ব্রাদার্সের এম এ নাছিরের সমন্বয়ে গঠিত চার সদস্যের এলোটমেন্ট কমিটি থেকে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরদের কাজ বরাদ্দ দেয়া হয়।

আর এই বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ করা হয়েছে। এই অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষের ডিটিএম (অপারেশনমিসেস হাসিনা আরজুকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে একটি রিপোর্ট প্রদানের জন্যও কমিটিকে তাগাদা দেয়া হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছেতদন্ত কমিটি গতকাল এলোটমেন্ট কমিটির উক্ত চার সদস্যকে তলব করেছে। তাদের কাছ থেকে কমিটি বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছে। একই সাথে অন্যান্য শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের বক্তব্যও কমিটি সংগ্রহ করবে।

গতকাল একাধিক শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেনবহির্নোঙরে কোটি কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। এসব কার্যক্রমে নীরবে দুর্নীতি চলছে। এসব দুর্নীতি জনসমক্ষে তুলে আনতেই সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ করা হয়েছে।

 

এই ব্যাপারে এলোটমেন্ট কমিটির সদস্য মশিউল আলম স্বপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ নাকচ করে দেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ তলব করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেনডিটিএম ডেকেছিলেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি কোন ধরনের অনিয়ম এবং দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে বলেনপ্রতিদিন দশ বারোজন শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের উপস্থিতিতে অত্যন্ত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজের বরাদ্দ করা হয়। এখানে কাউকে ওভারটেক করে কিছু করার কোন সুযোগ নেই। কোন জাহাজটির পর কোন জাহাজ আসছে এবং ওই জাহাজে কাজ কে পাবে তা আগে থেকেই সবাই জানেন। এখানে অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ১৬ জন শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের মাঝে সমন্বয় করেই কাজ করা হয় বলেও তিনি দাবি করেন।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!